«

»

সেপ্টে. 06

HSC English Text Reading – Lecture 4


Unit-1 Lesson-5 Text Book page no- 12 –
পরিবর্তনশীল ধারা

[কোর্সের মূল পাতা | নিবন্ধনের লিংক]

এম.পি থ্রি অডিও  [MP3]
পিডিএফ  [PDF]

বিষয়বস্তু
কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিবারের গুরুত্ব সবসময়ই ছিল। বর্তমান যুগে এর ভূমিকা আরও বেড়েছে। বড় পরিবার ভেঙ্গে ছোট পরিবার তৈরী হচ্ছে। নারীরা বাড়ীর বাইরের কাজে যুক্ত হচ্ছে। জমিদারী যুগে নারীরা বাড়ীর বাইরে উৎপাদনমূলক কাজে জড়িত ছিল। শিল্পযুগে নারীরা আবার বাইরের কাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হল। যুদ্ধ-পরবর্তী যুগে নারীরা পুনরায় বাড়ীর বাইরের কাজে যোগ দিল। অর্থনৈতিক ক্ষমতার দ্বারা নারীরা পারিবারিক সিদ্ধান্তে ভূমিকা রাখতে শুরু করল। আধুনিক পরিবারে ‘স্বামীর কাজ’ ‘স্ত্রীর কাজ’ কোনো ভেদাভেদ নাই, সময় সুযোগ ও প্রয়োজনমত উভয়ে মিলে সবধরনের কাজ করে থাকেন। শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে বড় পরিবার ভেঙ্গে যাচ্ছে। উন্নত বিশ্বে পারিবারিক বন্ধন হালকা হয়ে যাচ্ছে।

লেকচার
সভ্যতার ইতিহাসে পরিবার একটি প্রাচীন প্রতিষ্ঠান। বরং বলা উচিত মানুষের সভ্যতা গড়ে উঠেছে পরিবারের উপর ভিত্তি করেই। এজন্য পরিবারকে বলা হয় কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান। মানুষের সাথে অন্যান্য প্রাণীর পার্থক্য এখানেই যে, মানুষ পরিবার প্রথা লালন করে, অন্যান্য পশু-প্রাণী তা করে না। মানুষ ছাড়া অন্যান্য পশু-প্রাণীর মধ্যে স্বামী-স্ত্রী-পিতা-কন্যা-ভাই-বোন ইত্যাদি পরিচয় নেই। কিন্তু মানুষের তা আছে। ফলে যে মানুষ একসময় অন্যান্য প্রাণীর সাথে বনজঙ্গলে বাস করতো বলে জানা যায় সেই মানুষ পরিবার প্রথা অবলম্বনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বনজঙ্গল ছেড়ে এসে সভ্যতা সংস্কৃতি নির্মাণ করেছে আর জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিপুল আয়োজনে পৃথিবীকে সুন্দর করে তুলেছে। একটু চিন্তা করলেই একথার সত্যতা বোঝা যায়। মানুষ যখন প্রথম পরিবার প্রথা চালু করে তখনই তার প্রয়োজন হয় ব্যক্তিগত গোপনীয়তার। আত্মরক্ষার প্রয়োজন ছাড়াও ব্যক্তিগত পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য দরকার হয় একান্ত গৃহকোণ, নিজস্ব ঘর। তারপর প্রশ্ন আসে এটা ‘আমার ঘর’, ওটা ‘তোমার ঘর’। এভাবে ‘আমার ঘর’, ‘তোমার ঘর’, আরও দশজনের ঘর মিলে তৈরী হয় একটা পাড়া। প্রত্যেকের ঘরের অধিকার রক্ষার জন্য প্রয়োজন হয় কিছু সামাজিক নিয়ম কানুনের যা সকলেই মেনে চলার অঙ্গীকার করে। ‘আমি তোমার ঘরে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করব না, তুমি আমার ঘরে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করবে না।’- এভাবে তৈরী হয় সমাজ, রাষ্ট্র ও সভ্যতার আইন। ঘরোয়া জীবনকে আর একটু সুন্দর, মোহনীয় এবং সহজ করার জন্য শুরু হয় শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চর্চা। পরিবার হয়ে উঠে মানুষের কাছে আকর্ষণীয় একটি বিষয়। পরিবার গঠনের মাধ্যমেই মানুষ প্রথমবারের মত বুঝতে পারে যে তার সামনে রয়েছে সভ্যতা নির্মাণের মত এক মহৎ লক্ষ্য। পরিবার মানুষকে প্রদান করল সমষ্টিগত ভবিষ্যত নির্মাণের মহান লক্ষ্য আর এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে মানুষ হয়ে উঠল এক মহান প্রাণী যারা অন্যান্য পশু-প্রাণী থেকে স্পষ্টভাবে আলাদা হয়ে পড়ল। পশু এখনও বনেই বাস করে চলেছে কিন্তু মানুষ বনজঙ্গল ছেড়ে এসে সভ্যতার অধিকারী হয়েছে কারণ মানুষের আছে পরিবার কিন্তু পশুর তা নেই। তাই পরিবারকে বলা হয় সভ্যতার একক। সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এক প্রতিষ্ঠান।

পরিবার প্রথা মানুষকে সৃষ্টির সেরা প্রাণী হিসেবে জগতের বুকে স্থান করে দিয়েছে। যুগে যুগে মানুষের কল্যাণ সাধন করে এসেছে। দিনে দিনে এর গুরুত্ব ও কাজের ক্ষেত্র আরও বেড়ে চলেছে। বর্তমান যুগে শিশুদেরকে সামাজিকভাবে বড় করে তোলার জন্য এবং বয়স্কদের মানসিক প্রশান্তির জন্য পরিবারের কোনো বিকল্প নেই। পরিবার একটি শিশুকে সামজিক পরিচয় প্রদান করে। যে শিশুর বাবা-মা’র পরিচয় পাওয়া যায় না তার পক্ষে সমাজে প্রতিষ্ঠা পাওয়া কিংম্বা একটা ভাল অবস্থানে পৌঁছা আদৌ সম্ভব নয় তা সে যত মেধাবী আর পরিশ্রমীই হোক না কেন। তাই একটি নিস্পাপ শিশুকে আত্মপরিচয়ের এই সংকট থেকে মুক্তি দিতে প্রয়োজন পারিবারিক পরিমন্ডল। আবার বৃদ্ধকালে একজন মানুষ যখন শারীরিকভাবে এবং আবেগগতভাবে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে তখন তিনি তার শরীর-মনের খোরাক কেবলমাত্র পারিবারিক পরিমন্ডলেই খুঁজে পেতে পারেন। কোনো বয়স্ক ব্যক্তির যদি প্রচুর টাকাপয়সা থাকে তবে তিনি চাইলে অর্থের বিনিময়ে সেবা-যত্ন পেতে পারবেন কিন্তু সেই সেবা-যত্ন দ্বারা তার শরীরের ক্লান্তি দূর হলেও মনের ক্লান্তি বাড়বে ছাড়া কমবে না। কারণ কেনা সেবা-যত্নের সাথে মনের আবেগের সম্পর্ক থাকে না। পক্ষান্তরে তার যদি একটা পরিবার থাকে তবে সেখানে তার পুত্র-কন্যা-পুত্রবধূ এবং নাতি-নাতনীদের একটু সংস্পর্শ, একটু মিষ্টি কথা তার মনকে ভরিয়ে দিতে পারে (মূল বইয়ের ১২ নং পৃষ্ঠার ডান পার্শ্বের নিচের ছবিতে যেমন দেখা যায়)। এভাবে যুগে যুগে পরিবার মানুষের কল্যাণে ভূমিকা রেখে আসছে।

তবে পরিবার প্রথার মৌলিক রূপটি এক থাকলেও যুগে যুগে তার চেহারাটি বিভিন্ন দিকে গতিপ্রাপ্ত হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক-অর্থনৈতিক কাঠামোর সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়ে চলেছে। যেমন বর্তমান যুগের ধারায় দেখা যাচ্ছে বড় পরিবারগুলি ভেঙ্গে ছোট ছোট একক পরিবার তৈরী হচ্ছে আর নারীরা পূর্বের তুলনায় বর্তমানে বিপুল সংখ্যায় বাড়ীর বাইরের কর্মজগতের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছে। পরিবার গঠনের মাধ্যমে একজন পুরুষ ও একজন (অথবা বহুবিবাহের ক্ষেত্রে কয়েকজন) স্ত্রী প্রকাশ্য ঘোষণার মাধ্যমে ও সামাজিক স্বীকৃতির মাধ্যমে পরস্পরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার ও কিছু নিয়ন্ত্রিত আচরণ মেনে চলার অঙ্গীকার করে। এটা হচ্ছে পরিবারের মৌলিক রূপ। কিন্তু পরিবারে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাসরত দুজন নারী-পুরুষের দায়দায়িত্ব ও অধিকারের ক্ষেত্রটি বিভিন্নযুগে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক-অর্থনৈতিক টানাপড়েনের দ্বারা বিভিন্ন রূপ ধারণ করেছে। যেমন সামন্তযুগে বা জমিদারী যুগে স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীরাও বাড়ীর বাইরে কৃষি জমিতে কাজ করতে অভ্যস্ত ছিল। কারণ জমিদারী যুগে সাধারণ মানুষ কোনো জমির মালিক হতে পারত না। একজন সাধারণ মানুষের যত অর্থ সম্পদই থাকুক না কেন তিনি কোনো ভূমির মালিক হতে পারতেন না। কারণ তখন জমি বিক্রয়ের বা ব্যক্তি মালিকানায় ভূমি প্রদানের কোনো নিয়ম ছিল না। লোকেরা বার্ষিক খাজনার ভিত্তিতে ভূস্বামী বা জমিদারের নিকট থেকে জমি ভোগের অধিকার পেত কিন্তু জমির মালিক হতে পারত না। তাছাড়া সে সময়ে টাকার প্রচলন এখনাকার মত এত বেশী ছিল না। সাধারণ জনগণের হাতে নগদ টাকা খুব কমই থাকত। লোকেরা জমিতে উৎপাদিত ফসলের দ্বারা জমিদারের খাজনা পরিশোধ করত। ফলে জমিতে যারা যত বেশী ফসল উৎপাদন করতে পারত তারা জমিদারকে তত বেশী খাজনা দিতে পারত আর পরবর্তীতে তারা তত বেশী জমি ভোগের অধিকার পেত। এভাবে সে যুগে মানুষের প্রধান লক্ষ্যই ছিল জমিতে বেশী বেশী ফসল উৎপাদন করা। আর সেই ফসল উৎপাদনে প্রযুক্তিগত সুবিধার চেয়ে শারীরিক শ্রমই প্রধান ছিল। তাই বেশী বেশী ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রত্যেক পরিবারের সদস্যরা সকলে মিলে অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী-সন্তানাদি সকলে মিলে মাঠের কাজে লেগে পড়ত। এভাবে সামন্তযুগে বা জমিদারী যুগে স্বামীদের সাথে স্ত্রীরাও বাড়ীর বাইরে মাঠের কাজে কঠোর পরিশ্রম করত।

তারপর এলো শিল্পযুগ। এ সময়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে হঠাৎ করেই কলকারখানার ব্যাপক বিস্তার ঘটল। শারীরিক শ্রমের বদলে পাওয়ার-ইঞ্জিন (Power Engine) দ্বারা কলকারখানার চাকা ঘুরতে লাগলো। উৎপাদনের গতি বাড়ল। কারখানা মালিকের লাভ বাড়ল। অপরদিকে লক্ষ লক্ষ মানুষ কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ল। আগে যেখানে ১০০ টা তাঁতের কলে ১০০ জন তাঁতী শারীরিক শ্রম ব্যবহার করে কাপড় উৎপাদন করত। শিল্পযুগে এসে সেখানে ১ টা মেশিনেই ১০০ টা তাঁতের কাজ হতে লাগল। ১০০ জন তাঁতী বেকার হয়ে পড়ল। আর তাদের মধ্যে ১ জন হয়ত শিল্প কারখানার বেতনভোগী শ্রমিক হিসেবে চাকুরী পেল। এভাবে শিল্পযুগে এসে শতকরা ১ জন লোক কারখানার বেতনভোগী শ্রমিকে পরিণত হল। পক্ষান্তরে শতকরা ৯৯ জন লোক হয়ে পড়ল বেকার। যেখানে শতকরা ৯৯ জন লোক উৎপাদনমুখী কাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বেকার হয়ে পড়ল সেখানে নারীদের বাড়ীর বাইরের উৎপাদনমূলক কাজে জড়িত হওয়ার মোটেই কোনো সুযোগ থাকলো না। ফলে শিল্পযুগে নারীরা পুনরায় ঘরের কাজে আবদ্ধ হয়ে পড়ল। এ অবস্থা চলতে লাগলো বিশ্বযুদ্ধ শুরুর পূর্ব পর্যন্ত। অতঃপর অল্প সময়ের ব্যবধানে দু’টি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হলো। বিশ্বের প্রধান দেশগুলি দুই শিবিরে ভাগ হয়ে যুদ্ধে উন্মত্ত হয়ে উঠল। ছোট ছোট দেশগুলি কোনো না কোনোভাবে এই দুই দলের এক দলে যোগ দিতে বাধ্য হলো। কেউ কেউ নামে মাত্র নিরপেক্ষ থাকতে চেষ্টা করলেও প্রকৃতপক্ষে সমস্ত বিশ্বই যেন দুভাগ হয়ে যুদ্ধে মেতে উঠেছিল। পুরুষ লোকেরা কাজকর্ম ছেড়ে যুদ্ধে যোগ দিতে সীমান্তে চলে গেলে নারীরা সেসব কর্মস্থলের শূণ্যতা পূরণ করল। পুরুষদের শূণ্যপদ পূরণ করা ছাড়াও যুদ্ধ পরিস্থিতিতে উদ্ভুত নতুন নতুন সব কর্মকান্ডে নারীরাই যুক্ত হতে লাগলো। এক সমীক্ষায় দেখা যায় যুদ্ধপূর্ব যুগে যুক্তরাজ্যে আট মিলিয়ন নারী আয়মূলক কর্মকান্ডে জড়িত ছিল কিন্তু ঠিক যুদ্ধকালীন সময়ে তাদের সংখ্যা বিপুলভাবে বেড়ে যায়। যুদ্ধপূর্ব যুগে চিন্তাও করা যেত না এমন সব কর্মকান্ডে তারা জড়িত হতে লাগলো। তারা ব্যাংকের কেরাণী, টিকিট বিক্রেতা, গাড়ীর হেল্পার, ঝাড়ুদার, ব্লক সুপারভাইজার, কারখানার শ্রমিক ইত্যাদি কাজে যোগ দিল। বিশেষ করে যুদ্ধের কারণে অস্ত্রের চাহিদা ব্যাপক হওয়ায় নারীরা গোলাবারুদের কারখানায় বিপুল সংখ্যায় কাজের সুযোগ পেতে লাগলো। এভাবে বাস্তব কারণেই নারীরা যুদ্ধ পরবর্তী যুগে বাড়ীর বাইরের কাজের সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত হয়ে পড়লো। এই আর্থসামাজিক পরিপ্রেক্ষিত ছাড়াও যুদ্ধ পরবর্তী যুগে নারীমুক্তির আরেকটি জোরালো কারণ রয়েছে। এটা হচ্ছে যুদ্ধপরবর্তী যুগে মানুষের মতাদর্শগত পরিবর্তন। যদিও সভ্যতার ইতিহাসে দুটি বিশ্বযুদ্ধের স্থিতিকাল অল্পই ছিল কিন্তু ঘটনা হিসেবে তা ছিল যুগান্তকারী। যুদ্ধ-পূর্ববর্তী যুগ থেকে যুদ্ধ-পরবর্তী যুগের মানুষের ধ্যান-ধারণা, চিন্তাচেতনা, মূল্যবোধ ও আচার আচরণ সম্পূর্ণ বদলে গেল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়ে গেল সম্পূর্ণ বিপরীত। বিশ্বযুদ্ধের মত জঘন্য ঘটনাটির মাধ্যমে প্রমাণ হয়ে গেল যে, ক্ষমতা ও স্বার্থের লোভে মানুষ কতটা নিষ্ঠুর ও অবিবেচক হতে পারে। কতটা অবলীলায় বিপুল ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে। কতটা নিপুণ-নিষ্কম্প হাতে মানববিধ্বংসী অস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারে। যুদ্ধপূর্ব যুগে সদগুণ সম্পন্ন প্রাণী হিসেবে মানুষের যে পরিচয় ছিল বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে সে পরিচয় ধূলিসাৎ হয়ে গেল। মানুষে মানুষে ভালবাসা এবং মানব মনের কোমল দিক সম্পর্কে যে আস্থা ছিল তা ভেঙ্গে গেল। যুদ্ধ-পরবর্তী যুগে মানুষে মানুষে সন্দেহ আর অবিশ্বাসই যেন সত্য হয়ে দেখা দিল। আর দশটা প্রাণীর মত মানুষের মধ্যেও হিংসা, ঘৃণা, লোভ, ক্রোধ আছে তা স্পষ্টভাবে স্বীকার করে নেয়া হল। সাহিত্যের ভাষায় এ ঘটনাকে বলা হয় Disillusionment বা ‘মোহভঙ্গ’। মানুষের ভাল ভাল গুণাবলী সম্পর্কে যে অবাস্তব কল্পনা বা “ভ্রান্তি-বিলাস” বা ‘মোহ’ ছিল তা যেন ভেঙ্গে গেল। নতুন এই মূল্যবোধের বিচারে দেখা গেল মানুষ যেমন সর্বগুণের আধার কোনো স্বর্গীয় প্রাণী নয়, তেমনি মানুষ আবার পশুও নয়। মানুষ যদি সর্বগুণের আধার স্বর্গীয় কোনো প্রাণী হতো তবে পরপর দুটি মানবধ্বংসী বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হতো না। আবার সে যদি আর দশটা পশুর মত একটা পশু হতো তবে সভ্যতার ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত সেই ভয়ংকর বিশ্বযুদ্ধ থামত না।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানুষের বিবেক জাগ্রত হয়েছে। যুদ্ধাক্রান্ত মানুষের কান্না, আহাজারি আর সভ্যতার অনিশ্চিত ভাবিষ্যত ভেবে মানুষ যুদ্ধ ছেড়ে আবার শান্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বিশ্বে শান্তি পুনঃস্থাপিত হয়েছে। গঠিত হয়েছে বিশ্বের রাষ্ট্রগুলির সম্মেলন কেন্দ্র জাতিসংঘ। গৃহীত হয়েছে আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত নিরসনের নীতি। তাই যুদ্ধ পরবর্তী যুগে এসে বলা হল মানুষ স্বর্গীয় প্রাণীও নয় আবার সে একেবারে পশুও নয়। মানুষ মানুষই। এভাবে মানুষের চিন্তাচেতনায় পুরাতন আদর্শবাদী মূল্যবোধগুলি ভেঙ্গে নতুন আধুনিক বাস্তববাদী মূল্যবোধ গঠিত হতে লাগলো। নতুন এই মূল্যবোধগুলি ছিল মধ্যপন্থী এবং জীবনঘনিষ্ঠ। নতুন এ উপলব্ধির আলোকে শুধু জগতে মানুষের অবস্থান সম্পর্কেই নয়, নারীর অধিকার সম্পর্কে, নারী-পুরুষ বৈষম্য সম্পর্কে, পরিবারে উভয়ের দায়দায়িত্ব সম্পর্কে পুরাতন মূল্যবোধ ভেঙ্গে নতুন আধুনিক জীবনঘনিষ্ঠ মূল্যবোধ গঠিত হতে লাগলো। সেই নতুন মূল্যবোধের নিরিখেই প্রশ্ন দেখা দিল নারীরা কেন অফিস আদলত-কলকারখানা-ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে পুরুষের সমান অধিকার পাবে না। এ প্রশ্নের জবাবে সকলেই যেন একটা উদার দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করল। ফল হিসেবে যুদ্ধপরবর্তী যুগে অফিস-আদলত-ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বাইরের কর্মজগতের সর্বত্র পুরুষের পাশাপাশি নারীর সদর্প উপস্থিতিকে মেনে নেওয়া হল। এভাবে যুদ্ধপরবর্তী যুগে নারীরা বাইরের কর্মগজতে তাদের মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে লাগলো (মূল বইয়ের ১২ পৃষ্ঠার মাঝের চিত্র দ্রস্টব্য)। কর্মজীবি নারীরা তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতার প্রভাবে পরিবারে আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে লাগলো। পুরুষের পাশাপাশি সকল কর্মে নারীর যোগ্যতাও প্রমাণ হলো। ফলে ‘পুরুষের কাজ’ আর ‘স্ত্রীলোকের কাজ’ বলে কোনো ভোদভেদ থাকলো না। পরিবারে ‘স্বামীর কাজ’ আর ‘স্ত্রীর কাজ’ বলে দু’ধরনের কাজের সীমারেখা থাকলো না। সময়, সুযোগ, সুবিধা সর্বোপরি পরিবারের কল্যাণের প্রয়োজনে সংসারের সব ধরনের কাজ উভয়ে মিলেই করতে লাগল (মূল বইয়ের ১২ পৃষ্ঠার ডান পার্শ্বের উপরের চিত্র)। আধুনিক যুগে পরিবর্তনশীল পারিবারিক গতিধারার আর একটি লক্ষ্যণীয় বৈশিষ্ট্য হল বড় পরিবার ভেঙ্গে যাওয়া। শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে এটা হচ্ছে বলে মনে হয়। কোনো একটি স্থানে একটি নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন হলে সেই কারখানায় দূর-দূরান্ত থেকে শ্রমিক-কর্মচারীরা কাজ করতে আসবে। একসময় তারা চাইবে তাদের দূরবর্তী যৌথ পরিবার ছেড়ে কারখানার নিকটস্থ এলাকায় এসে শুধু নিজের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে একক পরিবার গড়তে। আবার নগরায়নের ফলে একটি পশ্চাদপদ জায়গায় নতুন নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। ঐসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীরা সকলেই একইভাবে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে একক পরিবার গড়ে তুলবে।

উন্নয়নশীল দেশগুলির আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যাচ্ছে। আত্মীয়তার বন্ধন কমে যাচ্ছে। উন্নত বিশ্বে বিবাহ বিচ্ছেদের হার বাড়ছে। অবশ্য বিবাহ বিচ্ছেদের হার বাড়ার অর্থ পরিবার প্রথা উঠে যাচ্ছে তা নয়। এর অর্থ পরিবারের স্থিতিশীলতা কমে যাচ্ছে। বিবাহ বন্ধন দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। এক পরিবারের বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ঐ স্বামী/স্ত্রী পুনরায় অন্যত্র বিবাহের মাধ্যমে নতুন পরিবার গঠন করছে। বলা যায় বর্তমানে উন্নত বিশ্বে পরিবার প্রথা একটি অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে। অন্যদিকে ইউরোপ আমেরিকার মত অতি উন্নত পশ্চিমা দেশগুলিতে বিবাহ প্রায়ই ভেঙ্গে যায়। সেসব দেশে নারী এবং পুরুষ উভয়ের সমান অর্থনৈতিক ক্ষমতা, উভয়ের স্বাধীনচেতা মনোভাব এবং ব্যক্তিত্বের সংঘাতকেই এর কারণ হিসেবে মনে করা হয়। সেসব দেশে এমন ঘটনার কথাও শোনা যায় যে, বিছানার চাদরের রং কেমন হবে তা নিয়ে উভয়ে একমত না হতে পারায় বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে যায়। শিক্ষাদীক্ষায়, অর্থনৈতিক ক্ষমতায় সমান স্বামী এবং স্ত্রীর মাঝে সামান্য বিষয়ে পছন্দ ও রূচিবোধের অমিল হলেই ব্যক্তিত্বের সংঘাত বেধে যায়। পশ্চিমা দেশের এসব ভাঙ্গনমুখর পরিবারের সন্তানেরা প্রচন্ড মানসিক সমস্যার মধ্যে পড়ে। পশ্চিামাবিশ্ব সুস্থ্য পারিবারিক ধারায় ফিরে না আসতে পারলে শীঘ্রই মানসিক রোগগ্রস্ত একটি উন্মত্ত প্রজন্মের মুখোমুখি হবে কি-না তা ভবিষ্যতই বলতে পারবে।

এই Lesson টি তে আমরা পরিবার সম্পর্কে একটি বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি পাই। প্রাচীন কাল থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত পরিবার কিভাবে বিবর্তিত হয়েছে তা জানতে পাই। এভাবে Unit One এর Lesson-1 থেকে Lesson-5 পর্যন্ত ধারাবাহিক পাঠের মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশের পরিবার, পাশের দেশের (মায়ানমারের) পরিবার, ভিন্ন একটি মহাদেশের (কেনিয়ার) পরিবার এবং সবশেষে পরিবারের বৈশ্বিক গতিধারা সম্পর্কে ধারণা পাই। এভাবে Unit One এ ছাত্রছাত্রীদেরকে পারিবারিক প্রথার মূল্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। পারিবারিক পরিমন্ডলটি আমরা  জন্মসূত্রে পেয়ে থাকি বলে এর মূল্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা অতখানি সচেতন নই। যেমন সচেতন নই পানি ও বাতাসের মূল্য সম্পর্কে। কারণ এগুলো আমরা ফ্রি পাই। Unit One এর পাঠগুলি একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদেরকে পারিবারিক সম্পর্কগুলির মূল্য বুঝতে সাহায্য করবে। তাদেরকে পরিবারের প্রতি দায়িত্বসচেতন করে তুলবে। পরিবারের সদস্য হিসেবে নিজের অবস্থান, কর্তব্য ও অধিকার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিবে।

Main Text:
The present age is marked not only by the importance of the family as an economic and welfare institution but also by its increasing importance as an arrangement for socializing and raising children and for the psychological support of the adults. There has been a wide disintegration of large kin groups and an intensification of relationships within the nuclear family. Moreover, the world is seeing an increasing association of women with earning and out-of-home activities.
In the pre-industrial feudal society, both husbands and wives worked in the fields outside the home. However, in the industrial period, women were segregated from out-of-home productive work. The hearth became the place for the, so cooking, cleaning, washing, giving birth and rearing children became their jobs. Men became the wage-earners and all other outdoor activities became their responsibility.
In the post-war period, women started joining the workforce, contributing to family income, and thus started exercising an influence on family affairs. Previously, authority in the family rested on the husband who was the decision maker in all matters. But women, with their economic power, started influencing decision about important family matters. In developed countries now, household work is shared by both husband and wives, and outdoor activities like shopping and taking children to school, to doctor or for recreation are done equally by both husbands and wives. Large extended families have give, and are still giving place to small, nuclear families.
Even in developing countries, with the process of industrilisation and urbanisation, extended families are breaking down. Kinship is declining. In the west, marriages now often break up. So the number of single-mother or single-father families is ever on the increase. The psychological problems of children in such families are also increasing in modern times.

 

Comments

comments

About the author

ফিরোজ আহমেদ

আমি ফিরোজ আহমেদ। অবস্থান- বগুড়া শহর, বগুড়া, বাংলাদেশ। এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি তে সাইন্স ব্যাকগ্রাউন্ডসহ ইংরেজী সাহিত্যে অনার্সসহ মাস্টার্স করেছি। “এ্যাপ্লাইড ইংলিশ পয়েন্ট”- নামে ইংরেজী শিক্ষার প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। পাঠ্য সহায়ক পুস্তক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সাথে খন্ডকালীন লেখক হিসেবে জড়িত। সাহিত্য বিষয়ের সমালোচনামূলক পাঠপত্রের ভক্ত। সৃষ্টিশীল লেখালেখিতে আগ্রহী। বাংলাদেশের একাডেমিক পড়াশুনাতে মাল্টিমিডিয়া এবং আইটি সুবিধাদির ব্যাপক প্রসার হোক এটাই আমার একান্ত চাওয়া।

Leave a Reply