[পূবর্ের লেকচার] [নিবন্ধন ফর্ম] [কোর্সের মূল পাতা]
[কৈফিয়তঃ একাডেমিক এবং অন্যন্য কারনে লেকচারটি আসতে অনেক অনেক অনেক দিন দেরি হয়ে গেল বলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। পরবতর্ী লেকচারগুলি দ্রুত আপলোড করতে পারবো বলে আশা রাখি।]
প্রোটিনের গঠন নির্ধারণের তিনটি উপায় নিয়ে এই লেকচারটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রোটিনের গঠন প্রধানত তিনটি বিভিন্ন উপায়ে নির্ধারণ করা হয়।
১. এক্সরে ক্রিস্টালোগ্রাফি (Xray Crystallography)
২. এনএমআর স্পেক্ট্রোস্কোপি (NMR- Nuclear Magnetic Resonance Spectroscopy)
৩. ইলেক্ট্রণ মাইক্রোস্কোপি (Electron Microscopy)
এগুলো নিয়েই আজকের আলোচনা।
এই তিনটি পদ্ধতির মধ্য সবচেয়ে বেশি প্রচলিত এবং কার্যকর পদ্ধতি হল এক্সরে ক্রিস্টালোগ্রাফি। এখন পর্যন্ত আবিস্কৃত গঠনের বেশিরভাগই এই পদ্ধতিতে নির্ণয় করা হয়েছে। ক্রিস্টালোগ্রাফি নিখুঁত গঠন তৈরির জন্যও কার্যকর। সাধারণত যখন ক্রিস্টালোগ্রাফি কাজ করেনা তখন অন্য পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এই আলোচনায় মূলত এক্সরে ক্রিস্টালোগ্রাফি নিয়েই কথা বলব। তবে প্রথমে অল্প করে এনএমআর এবং ইলেক্ট্রণ মাইক্রোস্কোপি নিয়ে বলে নেই।
এনএমআর স্পেক্ট্রোস্কোপি:
প্রোটিন অণুতে পরমাণুর ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ বিচ্ছুরণের উপর নির্ভর করে একটি প্রোটিন অণুতে কোন যায়গায় কোন অনু আছে সেটা নির্ধারন করা যায়। একটি এনএমআর এর প্রাথমিক প্রোটিন-ছবি দেখতে নিচের ছবির মত (A), যেখান থেকে একটি মোটামুটি মডেল তৈরি করা যায় (B)।
সুবিধা:
ক) যেসব প্রোটিনের ক্রস্টাল তৈরি করা যায়না তাদের গঠণ নির্ণয় করা যায়।
খ) দ্রবণের মধ্যে প্রোটিনের গঠন জানা যায়। কোষের ভিতরটা দ্রবণের মত।
অসুবিধা:
ক) বড় প্রোটিনের গঠন এই পদ্ধতিতে নির্ধারন করা যায়না।
খ) গঠনের মডেলের মান নিখুঁত হয়না।
ইলেক্ট্রণ মাইক্রোস্কোপি:
এই পদ্ধতিতে সরাসরি অণুবীক্ষন যন্ত্রের নিচে প্রোটিনকে দেখা যায়। তবে এর মাধ্যমে ত্রিমাত্রিক গঠন নির্ণয় একটু কঠিন বিষয়ই হয়ে যায়। তবে খুব বড় প্রোটিন বা ভাইরাসের আকার বুঝতে এই পদ্ধতি দারুন কাজ করে। একটি প্রোটিনের অণুগুলির বিভিন্ন দিকের ছবি (a) বিশ্লেষণ করে (b) একটি গোটা প্রোটিনের মডেল তৈরি করা হয় (c)।
সুবিধা:
ক. অনেক বড় প্রোটিনের গঠন বোঝা যায়।
খ. সরাসরি প্রোটিন বা কমপ্লেক্স কেমন দেখা যায়।
অসুবিধা:
ক. গঠনের মডেলের মান মোটেই ভাল হয়না।
খ. ছোট প্রোটিনের গঠন নির্ণয় একেবারেই সম্ভব হয়না।
এক্সরে ক্রিস্টালোগ্রাফি:
এই পদ্ধতিতে প্রোটিনের ক্রিস্টাল তৈরি করে তার ভেতর দিয়ে এক্সরে পরিবাহিত করে বিচ্ছুরণ নকশা তৈরি করা হয়। তারপর সেই নকশা থেকে ইলেক্ট্রণ ডেনসিটি ম্যাপ তৈরি করে সেখান থেকে প্রোটিনের মডেল তৈরি করা হয়। নিচের ছবি থেকে একটু ধারনা পাবেনঃ
এই পদ্ধতির জন্য প্রথমেই প্রয়োজন একটি প্রোটিন ক্রিস্টালের। লবণের দানা যেমন সোডিয়াম ক্লোরাইডের ক্রিস্টাল, প্রোটিন ক্রিস্টাল তেমন নির্দিষ্ট প্রোটিনের ক্রিস্টাল। ক্রিস্টাল তৈরির জন্য খুবই পিওর, উঁচু ঘনত্বের প্রোটিন লাগবে।
ক্রিস্টাল তৈরির পদ্ধতি:
তিনটি প্রচলিত পদ্ধতিতে ক্রিস্টাল তৈরি করা যায়।
-হ্যাঙ্গিং ড্রপ (A)
-সিটিং ড্রপ (B)
-অয়েল ড্রপ (C)
সেগুলির বর্ণনা ভিডিও থেকে দেখে নেবেন। মূল ব্যাপারটা হলো একটি বদ্ধ যায়গায় প্রোটিনের ড্রপকে দ্রবণ থেকে আলাদা রেখে পানির বাষ্পায়ন ড্রপ থেকে দ্রবণের দিকে নেয়া। ফলে প্রোটিনের ঘনত্ব ধীরে ধীরে বেড়ে যায় এবং এক পর্যায়ে ক্রিস্টাল তৈরি শুরু হয়। কোন নির্দিষ্ট সময় ঠিক করা যায়না কখন ক্রিস্টাল তৈরি হবে। একদিনেও হতে পারে আবার একমাস পরেও হতে পারে। সেজন্য নিয়মিত বিরতিতে দেখতে হয় ড্রপে ক্রিস্টাল আছে কিনা। ক্রিস্টালগুলি ছোট, তাই অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে দেখতে হয়।
বিভিন্নরকম প্রোটিনের ক্রিস্টাল
এক্সরে বিচ্ছুরণ:
ক্রিস্টাল পাওয়ার পর সেগুলির মধ্য দিয়ে এক্সরে প্রবাহিত করা হয়। সেজন্য খুব শক্তিশালী এক্সরের উৎস দরকার। এক্সরে ক্রিস্টালে এসে পড়লে সেটা বিচ্ছুরিত হয় প্রোটিনের অবস্থান এবং গঠনের উপর ভিত্তি করে। এই বিচ্ছুরণ বিন্যাসের ছবি রেকর্ড করা হয়।
এক্সরে বিচ্ছুরণ নকশা
ইলেক্ট্রণ ডেনসিটি ম্যাপ:
প্রোটিনের ভিতর কোন অণু কেমনভাবে আছে সেটা বোঝা যায় অণূগুলির ইলেক্ট্রণ ডেনসিটি দিয়ে। এক্সরে বিচ্ছুরণ বিন্যাস থেকে অংক করে এটা বের করা যায় কারণ ক্রিস্টালের ভিতর প্রোটিনগুলি নির্দিষ্ট বিন্যাসে সজ্জিত থাকে এবং একই সজ্জা রিপিট হয়ে পুরো ক্রিস্টালটি তৈরি করে। এই ইলেক্ট্রন ডেনসিটি ম্যপ থেকে প্রোটিনের একটি মডেল তৈরি করা যায়। এই মডেলই আমরা গঠন বিশ্লেষণে ব্যবহার করি।
বিভিন্ন এমিনো এসিডের ইলেক্ট্রণ ডেনসিটি ম্যাপ
প্রোটিনের ইলেক্ট্রণ ডেনসিটি ম্যাপ দেখতে কেমন?
ইলেক্ট্রণ ডেনসিটি ম্যাপ থেকে মডেল তৈরি