«

»

ফেব্রু. 11

ভারতীয় ও ইসলামী জ্যোতির্বিদ্যা

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিচিতি: লেকচার ০১.৪

টলেমি (৯০-১৬৮) শেষ সৃজনশীল গ্রিক জ্যোতির্বিদ।
তার ভাষ্য লিখেছেন আলেকজান্দ্রিয়া’র পাপ্পুস (৩শ) এবং থেয়ন ও তার মেয়ে হাইপেশিয়া (৪শ)।
এর মধ্যে ব্যাবিলনীয় ও গ্রিক জ্যোতির্বিদ্যা পারস্য (ইরান) হয়ে ভারতে প্রবাহিত হয়।
পরে ৮ম শতকে আবার ভারত থেকে ইরান হয়ে মুসলিমদের হাতে আসে। ইরান সবসময়ই মধ্যপ্রাচ্য ও ভারতবর্ষের মধ্যে একটা সেতু হিসেবে কাজ করেছে।

আর্যভট্ট (৪৭৬-)
বসবাস: গুপ্ত সম্রাজ্যের রাজধানী পাটালিপুত্র (পাটনা)।
বই: আর্যভটীয়, আর্যভটসিদ্ধান্ত
আর্যভটসিদ্ধান্ত হারিয়ে গেছে, কিন্তু তার অংশাবশেষ বরাহমিহির (৫৫০-), ভাস্কর ১ (৬২৯) এবং ব্রহ্মগুপ্তের লেখায় সংরক্ষিত আছে।
আর্যভটসিদ্ধান্ত ইরান হয়ে মুসলিমদের হাতে আসে।
আর্যভটীয় বইখানা দক্ষিণ ভারতে জনপ্রিয়তা পায়। এটা কাব্যে লেখা গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যার বই। এর তিন খণ্ড: গণিত, কালক্রিয়া এবং গোল।
‘গণিত’ খণ্ডে দশমিক সংখ্যা ব্যাখ্যা করেন।
‘কালক্রিয়া’ তে ভূকক্ষে গ্রহগুলোর গতি আলোচনা করেন। গ্রহগতি ব্যাখ্যার জন্য হিপ্পার্কোস এর উৎকেন্দ্র ও এপিসাইকেল মডেল অনুসরণ করেন।
‘গোল’ খণ্ডটা পুরোই গোলকীয় ত্রিকোণমিতি নিয়ে। সমতলের ত্রিকোণমিতিকে তিনি একটা গোলকের (sphere) পৃষ্ঠে স্থাপন করেন। গ্রহণের ভবিষ্যদ্বাণী করেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: তারাগুলোর আহ্নিক গতির জন্য পৃথিবীর নিজ অক্ষের সাপেক্ষে ঘূর্ণনকে দায়ী করেন।

ব্রহ্মগুপ্ত (৫৯৮-৬৬৫)
জন্মস্থান: ভিনমাল, রাজস্থান।
গোঁড়া ধার্মিক ছিলেন। আর্যভট্ট যে পৃথিবীকে অক্ষের সাপেক্ষে ঘূর্ণায়মান বলেছেন, তা ভাস্কর ১ সমর্থন করতেন, আর ব্রহ্মগুপ্ত তার তীব্র বিরোধিতা করতেন।
বিখ্যাত বই: ব্রহ্মস্ফূটসিদ্ধান্ত (৬২৮), যার অর্থ “ব্রহ্মের দ্বারা পরিস্ফূটিত যে সিদ্ধান্ত”। ৭৭১ সালে বাগদাদে এর আরবি অনুবাদ হয়। এতে পাটিগণিত ও বীজগণিত এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
খণ্ডখাদ্যক বইয়ে আর্যভট্টের মাঝরাত থেকে দিন শুরুর নিয়ম প্রয়োগ করেন।

ভাস্কর ১ (৬০০-৬৮০)
মারাঠি জ্যোতির্বিদ, জন্ম: মহারাষ্ট্র রাজ্যে।
বসবাস: গুজরাটের বল্লভি যা ছিল মৈত্রক রাজবংশের রাজধানী; আর অশ্মক, বর্তমানে ভারতের তেলেঙ্গানে রাজ্যে।
ভাস্কর ২ তথা ভাস্করাচার্যের (১১১৪-৮৫) সাথে গুলিয়ে না ফেলতে ইনাকে ভাস্কর ১ ডাকা হয়।
সবচেয়ে বিখ্যাত আর্যভট্টের উপর ৩টি ভাষ্য রচনার জন্য: মহাভাস্করীয়, লঘুভাস্করীয় এবং আর্যভটীয়ভাষ্য।
পৃথিবী নিজ অক্ষের সাপেক্ষে ২৪ ঘণ্টায় একবার ঘূর্ণায়মান–আর্যভট্টের এই উপপাদ্যের সপক্ষে কথা বলেন।
সাইন অপেক্ষকের মান সূক্ষ্ণভাবে নির্ণয়ের জন্য একটা সমীকরণ প্রণয়ন করেন।

ইসলামী বিশ্বে জ্যোতির্বিদ্যা

কেহ নাহি জানে কার আহ্বানে কত মানুষের ধারা
দুর্বার স্রোতে এল কোথা হতে, সমুদ্রে হল হারা।

— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রবীন্দ্রনাথের গানের এই কথাটা মধ্যযুগীয় ইসলামী বিশ্ব সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা করে। তখন আক্ষরিক অর্থেই বিশ্বের সব অঞ্চলের সব জ্ঞান ইসলামী বিশ্বের অধিবাসীরা দুর্বার গতিতে মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাহিত করেছিলেন। ‘মুসলিম’ না বলে ‘ইসালামী’ বিশ্ব বলছি এই কারণে যে, তখন মুসলিম রাজাদের দ্বারা শাসিত অঞ্চলে অনেক ধর্মের মানুষ বাস করতেন, বিশেষ করে ইহুদি-খ্রিস্টান। তাই ইসলামী বিশ্বের জ্যোতির্বিদ্যা বলতে আমি মুসলিমদের জ্যোতির্বিদ্যা না বুঝিয়ে তখনকার ইসলামী সাম্রাজ্যের সব জ্যোতির্বিদের কাজ বুঝাচ্ছি, তা যে ধর্মেরই হোক না কেন। অধিকাংশ কাজ যে মুসলিমরাই করেছিলেন তা নিশ্চিত, কিন্তু সংখ্যালঘুদের পরিচয় এড়িয়ে যাাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। যেমন, স্পেনের তোলেদো শহরে যে যুগান্তকারী যিজ (গ্রহতারাতালিকা) প্রণয়ন করা হয়েছিল তা মুসলিম-ইহুদি জ্যোতির্বিদরা একসাথে মিলেই করেছিলেন।

ইসলামী বিশ্বের ‘যিজ’ (زيج)
বিভিন্ন সময়ে চাঁদ-সূর্য-গ্রহদের অবস্থানের তালিকাই যিজ। এগুলো দেখে গ্রহদের গতির ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়।
আর্যভটসিদ্ধান্ত ও ব্রহ্মস্ফূটসিদ্ধান্ত এবং আরো কিছু ভারতীয় সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করেই খলিফা হারুন আল-রাশিদ (৭৬৬-৮০৯) এর সময় ৭৭৭ সালে বাগদাদে প্রথম যিজ (যিজ আল-সিন্দহিন্দ আল-আকবার) লিখিত হয়। ৮শ থেকে ১২শ এর মধ্যে মুসলিম বিশ্বে প্রায় ২০০ যিজ রচিত হয়েছে। অধিকাংশ যিজ অবশ্য টলেমি’র বই অনুসরণে রচিত।
আল-খোয়ারিজমি’র (৭৮০-৮৫০) লেখা যিজ আল-সিন্দহিন্দ সবচেয়ে বিখ্যাত। এটাই যিজকে একটা শক্তিশালী জনরা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। আসলে এখনো আমাদের হাতে আছে এমন যিজগুলোর মধ্যে আল-খোয়ারিজমি’র টাই প্রাচীনতম।

স্পেনের তোলেদো শহরের মুসলিম ও ইহুদি জ্যোতির্বিদরা ১০৮০ সালে যে যিজ বানিয়েছিল তা পরবর্তিতে লাতিনে (Toledan Tables নামে) অনূদিত হয়ে ইউরোপীয় রেনেসাঁয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইংরেজি’র আদিকবি জেফ্রি চসারের The Canterbury Tales এ এই লাতিন তারাতালিকার কথা আছে, তবে তিনি এটাকে Toletanes লিখেছেন; নিচের চরণগুলোতে:
His tables Toletanes forth he brought,
Full well corrected, that there lacked nought,
Neither his collect, nor his expanse years,
Neither his rootes, nor his other gears,
As be his centres, and his arguments,
And his proportional convenients
For his equations in everything.

টলেমি’র মডেল চর্চা
টলেমি’র আলমাজেস্ট বইটার আসল গ্রিক নাম ছিল মাথেমাতিকে সিন্তাক্সিস। আরবরা আল-মাজিস্তি অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ নামে ডাকত। বর্তমানে আলমাজেস্ট ই এর সর্বজনপ্রচলিত নাম।
আলমাজেস্ট আলাদা আলাদাভাবে অন্তত ৪ বার আরবিতে অনূদিত হয়েছে।
অধিকাংশ অনুবাদ হয়েছে বাগদাদের আব্বাসীয় খলিফাদের (৭৫০-১২৫৮) সময়।
১০ম শতকে আল-বাত্তানি তার যিজে টলেমির মডেলের কিছু মান আরো সূক্ষ্ণভাবে মাপেন।

টলেমি’র মডেল ও পরিমাপের অনেক সীমাবদ্ধতা বেরিয়েছিল এ যুগে। যেমন, ভূ-অক্ষের নতির মান টলেমি’র সময়ের চেয়ে প্রায় ০.২৫ ডিগ্রি কমে গিয়েছিল যা ইসলামী বিশ্বে জ্যোতির্বিদরা বুঝতে পারে।
এবং ঋতুর দৈর্ঘ্য টলেমি’র সময়ের তুলনায় পরিবর্তিত হয়েছিল। এই পরিবর্তনের একমাত্র কারণ হতে পারে, সূর্যের অপভূ (apogee, যে বিন্দুতে এলে তার দূরত্ব পৃথিবী থেকে সবচেয়ে বেশি হয়) খুব ধীরে পূর্বদিকে সরে যাচ্ছে; বা সূর্য যে কেন্দ্রের চারদিকে ঘুরে সেই কেন্দ্রটাই পৃথিবীর চারদিকে খুব ধীরে ধীরে ঘুরছে। আল-বাত্তানি’র (৮৫৮-৯২৯) যিজে এর পরিমাপ আছে; কোপার্নিকাস তার বইটিতে যে যিজ উল্লেখ করেছেন।

ইবনুল হাইসামের সমালোচনা ও তার প্রভাব
১০০০ সালে ইবনুল হাইসাম (৯৬৫-১০৪০) টলেমি’র ইকুয়েন্ট বিন্দুর সমালোচনা করেন; কোনো বস্তু নয়, বরং কেবল এক কাল্পনিক বিন্দুর চারদিকে আবর্তন কিভাবে সম্ভব?
এই সমালোচনায় প্রভাবিত হয়ে ১৩শ শতকে বর্তমান আজারবাইজানের মারাগাহ তে মোঙ্গল শাসক হুলাগু খান এর পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত মানমন্দিরে টলেমি’র মডেল সংশোধনের কিছু চেষ্টা হয়।
আল-শিরাজি’র (১২৩৬-১৩১১) ছাত্র, মানমন্দিরটির ১ম পরিচালক নাসির আল-দিন আল-তুসি (১২০১-৭৪) তার তাহরির আল-মাজিস্তি বইয়ে টলেমি’র এপিসাইকেল এর জায়গায় “তুসি যুগল” (Tusi cuple) বসিয়ে ইকুয়েন্ট বিন্দুর প্রয়োজনীয়তা নাশের চেষ্টা করেন। তুসি যুগলকেই ইসলামী বিশ্বের বিশ্বতত্ত্ব অর্থাৎ কসমোলজি’র সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন বলা যায়।


(তুসি যুগল: a ব্যাসার্ধ্যের বড়বৃত্তের ভিতর দিয়ে b=a/2 ব্যাসার্ধ্যের ছোটোবৃত্ত ঘুরলে, ছোটোবৃত্তের পরিধিতে অবস্থিত একটা বিন্দু বড়বৃত্তের একটা ব্যাস বরাবর সরলরেখায় স্পন্দিত হয়। সুষম বৃত্তীয় গতি থেকে কিভাবে সুষম রৈখিক গতি পাওয়া যায় তাই তুসি দেখিয়েছেন।)

মুসলিমদের জ্যোতির্বিদ্যা চর্চা এতদূর অগ্রসর হয়েছিল যে বিখ্যাত ধর্মতাত্ত্বিক আল-গাজ্জালি (১০৫৮-১১১১) [উল্লেখ্য আল-গাজ্জালি এবং আল-তুসি দুজনেই বর্তমান ইরানের তুস নগরে জন্মগ্রহণ করেন।] যখন দার্শনিকদের তীব্র সমালোচনা করে “তাহাফুত আল-ফালাসিফাহ” রচনা করেন তখন তিনি জ্যোতির্গণিতবিদ দের সমালোচনার ঊর্ধ্বে রেখেছিলেন এই বলে:

এই ব্যাপারগুলো [চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ] জ্যোতির্বিজ্ঞান ও গণিতের মাধ্যমে সুপ্রমাণিত এবং এগুলোতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। যে ব্যক্তি এসব নিয়ে গবেষণা করেছে, এ সম্পর্কিত সব উপাত্ত খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেছে, এবং তার কারণে কখন সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ ঘটবে, সেটা আংশিক হবে না পূর্ণ হবে এবং কতক্ষণ বজায় থাকবে তার ভবিষ্যদ্বাণী করার অধিকার অর্জন করেছে, তাকে গিয়ে যদি বলো যে এগুলো ধর্মের পরপন্থী, তাহলে তার বরং ধর্মবিশ্বাস টলে যাবে, কিন্তু তার গবেষণায় বিশ্বাস এতটুকু টলবে না।

১৪শ শতকে দামেস্ক এর ইবনুল শাতির (১৩০৪-৭৫) মারাগাহ স্কুল দিয়ে প্রভাবিত হয়ে দুটি এপিসাইকেল দিয়ে ইকুয়েন্ট অপসারণের চেষ্টা করেন।
কিন্তু কেউ টলেমি’র বিকল্প আরেকটা নতুন মডেলের কথা ভাবতে পারেননি।
এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে কোপার্নিকাসের আবির্ভাবের। সূর্যকে কেন্দ্রে বসানোর ধারণাটা ইসলামী বিশ্বে কারো কারো এলেও, সবাই তার সম্ভাব্যতা বাতিল করে দিয়েছিলেন। সৌরকেন্দ্রিকতা তাই প্রাচীন গ্রিক আরিস্তার্কোস আর মধ্যযুগীয় পোলীয় কোপার্নিকাস এরই দান। কিন্তু কোপার্নিকাস তার মডেল তৈরি করতে গিয়ে ইবনুল শাতির ও মারাগাহ স্কুলের গবেষণার কিছু সাহায্য নিয়েছেন।

মোদ্দা কথা:
জ্যোতির্বিদ্যা এক জায়গায় অদৃশ্য হয়ে হঠাৎ আরেক জায়গায় শূন্য থেকে পুনরাবির্ভূত হয়নি, বরং এক সভ্যতা তার হাতের বেটনটি আরেক সভ্যতাকে দেয়ার মাধ্যমে এই বিরাট মহাকালিক দৌড় অব্যাহত রেখেছে।

আল-বিরুনি’র পৃথিবীর পরিধি নির্ণয়

মধ্যযুগীয় ইসলামী বিশ্বের একটা চমৎকার গাণিতিক কাজের উদাহরণ দিয়ে শেষ করব।
এরাতোস্থেনিস এর পৃথিবীর পরিধি নির্ণয়ের প্রক্রিয়াটা ছিল অনেক জটিল ও দীর্ঘসূত্রী। কারণ, সেজন্য কয়েকশ মাইল দূরত্ব মাপতে হতো। ইরানী পণ্ডিত আবু রায়হান আল-বিরুনি (৯৭৩-১০৪৮) শপথ করলেন, তিনি এক জায়গায় দাঁড়িয়েই পৃথিবীর পরিধি মেপে ফেলবেন। এজন্য তাকে একটা সমীকরণও প্রতিপাদন করতে হয়েছিল।
উল্লেখ্য আল-খোয়ারজিমি এবং আল-বিরুনি দুজনেরই জন্ম বর্তমান উজবেকিস্তান-তুর্কমেনিস্তান-কাজাখস্তান এর খোয়ারেজম অঞ্চলে।

এজন্য প্রথমে দরকার: এমন একটা উঁচুমতো টিলা যার উপর উঠে সামনের দিকে তাকালে দিগন্তটা (যেখানে আকাশ আর ভূমি মিলে) স্পষ্ট দেখা যায়। আল-বিরুনি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের নন্দন কেল্লা’র কাছে একটা পর্বতমালায় কাজটা করেছিলেন। তখন এই অঞ্চল গজনি’র সুলতান মাহমুদ শাসন করত। আমরা সুবিধার জন্য ধরে নিই, সমুদ্রের পাশে একটা টিলা আছে। এই টিলার উপর উঠে সমুদ্রের দিকে তাকালে দিগন্ত দেখতে কোনো অসুবিধা হবে না।

এরপর দরকার: টিলাটার উচ্চতা মাপা। এটা প্রাচীন গ্রিকরাই জানত যা বিরুনি ব্যবহার করেছে। টিলার নিচে টিলাটার সাথে এক সরলরেখায় অবস্থিত দুইটা জায়গা থেকে ভূমির সমতল ও টিলার চূড়া বরাবর দৃষ্টিরেখা’র মধ্যবর্তী কোণ $latex \theta_1, \theta_2 $ মাপতে হবে। এবং জায়গা দুইটার দূরত্ব $latex d $ জানতে হবে। এই কোণ দুটি আর দূরত্বটি থেকেই টিলার উচ্চতা বেরিয়ে আসে। নিচের ছবিতে দেখানো হয়েছে ব্যাপারটা। কোণ মাপার জন্য তখন অ্যাস্ট্রোলেইব ব্যবহার করা হতো।

এরপর দরকার: টিলাটাতে উঠা। চূড়ায় দাঁড়িয়ে সমুদ্রের দিকে তাকাতে হবে। এবং চূড়া থেকে দিগন্তরেখা বরাবর দৃষ্টিরেখার সাথে ভূমির সমতল যে কোণ তৈরি করে সেটা মাপতে হবে। নিচের ছবিতে AHB বা $latex \theta $ হচ্ছে সেই কোণ। ছবিটিতে C হচ্ছে পৃথিবীর কেন্দ্র, R তার ব্যাসার্ধ্য, AB হচ্ছে টিলাটার উচ্চতা h, AH হচ্ছে ভূমির সমতল, আর BS হচ্ছে টিলার চূড়া থেকে দিগন্ত বরাবর রেখা।

টিলার উচ্চতা h আর দিগন্ত বরাবর কোণ $latex \theta $ জানা থাকলে কিভাবে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ্য মাপা সম্ভব তা বিরুনি অংক করে বের করেছিলেন। আমরা এখানে সেই প্রতিপাদনে যাব না। তবে প্রতিপাদনটা Alberto Gomez Gomez এর এই গবেষণাপত্রে করে দেখানো আছে (উপরের ছবিগুলোও গোমেজ এর পেপার থেকে নেয়া)। পৃথিবীর ব্যাসার্ধ্য R হলে সমীকরণটা এমন:
$latex R = \frac{\displaystyle h\cos\theta}{\displaystyle 1-\cos\theta} $

আর R জানা থাকলে $latex 2\pi R$ করলেই পরিধি বেরিয়ে আসবে। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পৃথিবীর পরিধি মাপার এই ব্যাপারটা BBC4 এর একটা প্রামাণ্যচিত্রে জিম আল-খালিলি খুব সুন্দরভাবে দেখিয়েছেন। আগ্রহীরা চাইলে এই ইউটিউব ভিডিও থেকে ব্যাপারটা দেখে নিতে পারেন।

আজ তবে এ পর্যন্তই…

ঐচ্ছিক বাড়ির কাজ

১। টিলা’র উচ্চতা $latex h $ এবং টিলাচূড়া থেকে দিগন্ত বরাবর দৃষ্টিরেখা এবং ভূমির সমতলের মধ্যবর্তী কোণ $latex \theta $ জানা থাকলে কিভাবে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ্য R পরিমাপ করা সম্ভব? আল-বিরুনি প্রবর্তিত যে সমীকরণটা উপরে উল্লেখ করা আছে সেটা প্রতিপাদন করুন। জ্যামিতি না জানলে পারবেন না। খাতায় লিখে প্রতিপাদন করে পাতাটা স্ক্যান করে আমাকে পাঠাতে পারেন এই ঠিকানায়: muhammad2017 অ্যাট জিমেইল ডট কম। যারা বাড়ির কাজ পাঠাবেন তাদের রেকর্ড রাখা হবে।

Comments

comments

About the author

খান মুহাম্মদ বিন আসাদ

তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশলে স্নাতক করেছি আইইউটি থেকে। এরাসমুস মুন্ডুস বৃত্তি নিয়ে জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেছি অস্ট্রিয়ার ইন্সব্রুক, জার্মানির গ্যটিঙেন এবং ইতালির রোম তোর ভেরগাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বর্তমানে রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞানে পিএইচডি করছি নেদারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ খ্রোনিঙেনের কাপ্টাইন অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইনস্টিটিউটে।

Leave a Reply