রেজিস্ট্রেশনের লিংক – এখানে ক্লিক করে কোর্সে রেজিস্ট্রেশন করে নিন। এই কোর্সটি সম্পূর্ণ বিনা মূল্যের।
প্রথম লেকচারের লিংক:- ফটোগ্রাফী: ভূমিকা
দ্বিতীয় লেকচারের লিংক:- ফটোগ্রাফী: ক্যামেরা
তৃতীয় লেকচারের লিংক:-ফটোগ্রাফী: লেন্স
চতুর্থ লেকচারের লিংক –ফটোগ্রাফী: আলো এবং এক্সপোজার
পঞ্চম লেকচারের লিংক –ফটোগ্রাফী: কম্পোজিশন এবং মুহুর্ত – ১
আশা করি ভাল আছেন সবাই! কম্পোজিশন এবং মোমেন্ট নিয়ে আরোও কিছু আলোচনা থাকছে এই পর্বে।
প্যাটার্ন এবং রিদম (Pattern and Rhythm): বেশিরভাগ সফল ছবিতেই কযেকটি ব্যপার ঘুরে ফিরে আসে, যেগুলোকে ছবির মৌলিক উপাদানই বলা চলে। ফটোগ্রাফীতে ‘শিক্ষিত’ না হওয়ার কারণে অধিকাংশ দর্শকই সেই ব্যপারগুলোকে ঠিক বিশ্লেষন করতে পারেন না, কিন্তু ছবিটি তাদের কাছে ‘ভাল লাগে’… কেন ভাল লাগে, সেটা জিজ্ঞেস করলে তারা একটু বিভ্রান্ত বোধ করতেই পারেন।
এই ধরণেরই একটা মৌলিক উপাদান হলো প্যাটার্ন এবং রিদম। এই দু’টো টার্ম কে আমি একসাথে উল্লেখ করছি, কারণ রিদম বা ছন্দ সৃষ্টি হয় প্যাটার্ন থেকেই। তাহলে প্যাটার্ন মানে কি? গুগলের ডিকশনারী আমাকে নিচের সংজ্ঞাগুলো দিল:
pat·tern
noun
1.
a repeated decorative design.
2.
a model or design used as a guide in needlework and other crafts.
verb
1.
decorate with a recurring design.
2.
give a regular or intelligible form to.
একটি ফটোগ্রাফে কোন একটা ‘মোটিফ’ যদি বারবার আসতে থাকে (Repetition ), সেটাকে আমরা বলতে পারি প্যাটার্ন। বিভিন্ন বিষয় রিপিট হতে পারে। নিচের উদাহরণগুলো দেখুন:
ছবি ১: হোটেলরুমগুলো আড়াআড়ি এবং লম্বালম্বিভাবে রিপিট হয়ে একটা প্যাটার্নের সৃষ্টি করেছে। সাদা চেয়ারগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
ছবি ২: গাছের গুড়ির কাটা দিকগুলো একসাথে থেকে একটা প্যাটার্ন তৈরী করেছে।
ছবি ৩: রাস্তার উপর রংয়ের ব্লকগুলো রিপিট হয়েছে। একটি নিয়মিত ছন্দ তৈরী হয়নি যদিও, কেননা ব্লকগুলোর অনেকটা র্যান্ডম ভাবেই পেভমেন্টএর উপর ছড়ানো। কিন্তু বারবার আসার কারণে একটা ‘ইন্টারেস্ট’ তৈরী হয়েছে ছবিতে।
ছবি ৪: ক্লোভারের পাতাগুলো বারবার রিপিট হয়েছে এই ছবিতে।
ছবি ৫: এই ছবিতে মানুষগুলো পাশাপাশি থাকা ছাড়াও, ক্রমান্বয়ে বাম থেকে ডানে ঝুকেঁ পড়ার কারণে একটা ছন্দের তৈরী হয়েছে।
দু’টি বিষয় মনে রাখতে হবে:
ক) মূল সাবজেক্ট হোক অথবা ‘complementary element’ ই হোক, যেকোন কিছুই প্যাটার্ন তৈরী করতে পারে আপনার ছবিতে। সঠিক ভাবে প্যাটার্ন ব্যবহার করতে পারলে একটি সাধারণ বিষয়কেও অসাধারন ভাবে তুলে ধরা সম্ভব।
খ) খুব খুব ছোট জিনিস (যেমন কাপড়ের নকশা) থেকে শুরু করে বিশাল (যেমন পর্বতের সারি) বিষয়কে প্যাটার্নে ফেলা যায়। বিষয়ের উপযোগী অ্যাঙ্গেল এবং ফোকাল লেংথ ব্যবহার করতে হবে।
ছবি তোলার সময় খেয়াল করুন আপনার প্রধান সাবজেক্ট অথবা এর আশে পাশে কোন কিছু (ফুল, পাখি, লতা, পাতা, পাথর, যাই হোক না কেন) বার বার রিপিট হচ্ছে কি না। এর পর কম্পোজ করার সময় সেই প্যাটার্নটাকে ছবিতে প্রধান্য দেয়ার চেষ্টা করুন।
লিডিং লাইনস (Leading Lines): যেই লাইনগুলো কে ফলো করে দর্শকের চোখ ছবির মূল বিষয়ের দিকে নিবদ্ধ হয়, সেগুলোকে বলা হয় লিডিং লাইনস। সব ছবিতে কম্পোজিশনের এই টেকনিকটি প্রয়োগ করা যায় না, তবে প্রয়োগ করা গেলে সেটি ছবিকে সফল হতে অনেক সাহায্য করে। লিডিং লাইনস এর প্রয়োগ বুঝতে নিচের ছবি গুলো দেখুন:
ছবি ৬
ছবি ৭
প্রত্যেকটি ছবিতেই কয়েকটি লাইন ছবির চারটি কোণ থেকে শুরু হয়ে ফ্রেমের মাঝখানের দিকে একটি এলাকায় মূল সাবজেক্ট এর কাছাকাছি পৌছেছে। লিডিং লাইন কম্পোজিশনে দু’টো ভূমিকা পালন করে: ছবিতে প্রতিসাম্য (Symmetry) রক্ষা করে এবং দর্শকের চোখকে একটি নিদৃষ্ট দিকে ‘Lead’ করতে সাহায্য করে। সাধারণতঃ ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স ব্যবহার করলে লিডিং লাইনগুলোকে Prominent ভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় ছবিতে। ছবিতে লিডিং লাইন কে কম্পোজিশনের এলিমেন্ট হিসেবে যুক্ত করার জন্য প্র্রথমে খেয়াল করুন আপনার বিষয়বস্তুর আশে পাশ কোন কিছু সরল বা বক্ররেখা ফর্ম করছে কি না অবস্থানের কারনে..সেটা হতে পারে সারিবদ্ধ গাছ, রাস্তার উপর টানা লেইন এর দাগ ইত্যাদি ইত্যাদি। এবার কম্পোজিশন এমন ভাবে করুন যেন রেখাগুলো ছবির ফোরগ্রাউন্ডে থাকে এবং সেই রেখার শেষের দিকে শুরু হয় আপনার মূল সাবজেক্ট।
ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল (Angle): চোখের সাথে বিষয়বস্তু একটি কোণ তৈরী করে. এই বিষয়টি ফটোগ্রাফীর কম্পোজিশনে একটা গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। একটা ব্যপার ভেবে দেখুন। আমরা প্রতিদিন চোখে তো অনেক জিনিসই দেখি: মানুষ, পাখি, ফুল, মাটি, গাছ..কি না। বেশিরভাগ সময় আমরা তাকিয়ে থাকি সামনের দিকে – যখন পথে হাটি অথবা বসে থাকি। দৈনন্দিন জীবনে আমরা যা কিছুই দেখি তার অন্ততঃ আশি ভাগ জিনিসই থাকে আমাদের দৃষ্টির সমান্তরালে (Parallel)। যখন কারো সাথে আমরা কথা বলি, তখন বলি চোখের দিকে সোজাসুজি তাকিয়ে..নিশ্চয়ই আপনি শুয়ে শুয়ে উপরে তাকিয়ে একজন দাড়িয়ে থাকা মানুষের সাথে কথা বলেন না (সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকলে অবশ্য আলাদা কথা)।
ফটোগ্রাফীতে কোন একটি বিষয় কে তুলে আনার সময় ফটোগ্রাফার খুব সচেতন ভাবে একটু অস্বাভাবিক (Unusual) অ্যাঙ্গেল ব্যবহার করে থাকতে পারেন। একটি বিষয় যেই অ্যাঙ্গেলে দেখে আমরা অভ্যস্ত, তার চেয়ে ভিন্ন অ্যাঙ্গেলে যদি কেউ আমাদের সেটা দেখায়, তাহলে সেটা অবশ্যই কিছুটা Interest সৃষ্টি করবে – “আরে! এভাবে তো দেখিনি!”
নিচের ছবি গুলো দেখুন:
ছবি ৮: লো অ্যাঙ্গেল
ছবি ৯: হাই অ্যাঙ্গেল
ছবি ১০: ওয়েইস্ট লেভেল (কোমরের কাছাকাছি ক্যামেরা রেখে তোলা)
ছবি ১১: বার্ডস আই ভিউ (পাখির চোখে দেখা – বিমান, হেলিকপ্টার বা খুব উঁচু যায়গা থেকে দেখলে যেমন হয়, পুরো ৯০ ডিগ্রি কোণে)
ছবি ১২: আই লেভেল
শেষ ছবিটি বাদে বাকি ছবিগুলোতে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে একটু অন্যরকম অ্যাঙ্গেল ব্যবহার করা হয়েছে। এই ছবিগুলো হয়তো স্বাভাবিক দৃষ্টিকোণেও তোলা যেত, সেক্ষেত্রে সাধারণ জিনিসগুলো একটু অন্যভাবে ধরা পড়তো না।
কাজেই, অ্যাঙ্গেল অব ভিউ নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করুন। মাটিতে শুয়ে পড়ুন, গাছে উঠে পড়ুন। টাকাপয়সা থাকলে হেলিকপ্টারে উঠে বার্ডস আই ভিউ ও তোলার চেষ্টা নিতে পারেন! গতর খাটান..পরিশ্রম করলেই না ভাল ছবি হবে!
নেগেটিভ স্পেস (Negative space) এর ব্যবহার: পুরো ফ্রেম জুড়ে খালি বা মনোটোনিক (Monotonic) স্পেস। তার মধ্যে ছোট্ট আকারে সাবজেক্ট এর উপস্থিতি। নেগেটিভ স্পেস এর এই ব্যবহার ফটোগ্রাফীর একটা Occam’s Razor কে রিপ্রেজেন্ট করে, সেটা হলো – সরলীকরণ। ছবি তে কোন অপ্রয়োজনীয় বস্তুর আধিক্য না থাকার কারণে দর্শক বিভ্রান্ত হন না। আর যেহেতু মূল বিষয় ছাড়া তেমন কিছুই ছবিতে থাকে না, এইকারণে খুব সাধারণ বিষয়ও খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়।
নেগেটিভ স্পেস এর প্রয়োগের বেশ কিছু উদাহরণ পাবেন নিচের লিংক এ:
http://digital-photography-school.com/negative-space-weekly-photography-challenge-with-7-examples
ছবির কম্পোজিশনের এই নিয়মগুলো মাথায় রাখুন। সবসময় যে নিয়ম মেনে কম্পোজ করতে হবে, তার কোন মানে নেই তবে নিয়ম ভাঙতে হলে তো আগে সেগুলো জেনে রাখা প্রয়োজন। ছবির বিষয় বা মুহুর্ত অনেকসময় আপনাকে এক্সপেরিমেন্ট এর সুযোগ দেবে না – যেমন দ্রুতগামী গাড়ি অথবা রাস্তার কোন Fleeting মোমেন্ট। সেই ক্ষেত্রে কিছু কেতাবী নিয়ম প্রয়োগ করে কম্পোজ করে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ।
অ্যাসাইনমেন্ট ১: প্যাটার্ন এর প্রয়োগ করে দুইটি ছবি তুলুন। আমি ঠিক নিশ্চিত নই ছবি নিচের কমেন্ট বক্স এ পোস্ট করা যাবে কি না। যদি যায়, তাহলে ছোট সাইজে একটি মন্তব্যে পোস্ট করুন। আমি ফিডব্যাক দেয়ার চেষ্টা করবো ফিরতি মন্তব্যে।
যদি কোন কারনে মন্তব্যে পোস্ট করতে না পারেন তাহলে আমার ইমেইল ঠিকানা (Monir.micro[at]gmail.com) এ পাঠিয়ে দিতে পারেন। ছবি দেখে ফিরতি মেইল এ ফিডব্যাক দিতে পারবো।
অ্যাসাইনমেন্ট ২: নেগেটিভ স্পেস এবং গোল্ডেন রেশিও একই ছবিতে প্রয়োগ করুন। ছবিটি মন্তব্যে শেয়ার করুন । ছবিতে যে এই দুইটি নিয়ম একই সাথে প্রয়োগ করেছেন, তার স্বপক্ষে আপনার মতামত দিন।
সবাইকে অশেষ ধন্যবাদ!