সুপ্রিয় শিক্ষার্থী ও শুভানুধ্যায়ীরা,
শুভ নববর্ষ ২০১৪।
আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি প্রথমেই। দেখতে দেখতে আরো একটি বছর পার করলো শিক্ষক.কম। ২০১৩ সালটা নানা কারণে আমাদের অসাধারণ ভাবে কেটেছে, বাংলায় অনলাইনে মুক্তজ্ঞানের আসর গড়ে তোলার যে ব্রত নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছিলাম, সেই কাজটা অনেকদূর এগিয়েছে।
২০১৩ সালটাতে কী কী ঘটেছে শিক্ষক.কম এ, শুরুতেই তা দেখা যাক –
২ মিলিয়নের মাইলস্টোন
আমরা এই বছর দুইটা বড় মাইল ফলক পেরিয়েছি, এপ্রিল মাসের মধ্যেই আমাদের কোর্স লেকচার দেখা হয় ১০ লাখ বার, আর পরের মাত্র ৬ মাসেই অর্থাৎ অক্টোবর মাসের মধ্যেই আমাদের লেকচারগুলা সর্বমোট দেখা হয় ২০ লাখ বা ২ মিলিয়নবার।
এখন পর্যন্ত আমাদের লেকচারের মোট ভিউ কাউন্ট হলো ২.৫ মিলিয়ন বা ২৫ লাখ বার!
প্রতিদিন আমাদের লেকচার দেখা হয় কম করে হলেও ৫ থেকে ৬ হাজার বার। গড়ে আসেন ২ হতে ৩ হাজার জন শিক্ষার্থী।
মাত্র ১৬ মাস আগে প্রতিষ্ঠিত একটি সাইটের জন্য এ অনেক বড় একটা অর্জন। আর সেজন্য ধন্যবাদ জানাই আপনাদের সবাইকেই।
আমাদের শিক্ষার্থীরা ছড়িয়ে আছেন সারা বিশ্বের ১৪৮টি দেশে!
নিচের ম্যাপে আমাদের শিক্ষার্থীদের বিস্তারের একটা ধারনা পাওয়া যাবে। বাংলাদেশে তো আছেই, এর পরে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সউদী আরব, ভারত, জার্মানি, এসব দেশে আমাদের শিক্ষার্থীরা আছেন, এতে অবাক হবার কিছু নাই। কিন্তু খুব অবাক হয়েছি, আমাদের অনেক শিক্ষার্থী এসেছেন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া এসব দেশ থেকে। এতেই বোঝা যায়, বাংলাভাষী মানুষেরা এখন ছড়িয়ে আছেন বিশ্বের সবখানে! আর সেই সাথে বাংলায় জ্ঞানের আলোটাও ছড়াচ্ছে ১৪৮টি দেশে।
কোর্স শুরু – কোর্স শেষ
২০১৩ সালে আমরা শুরু করেছি ২৪টি কোর্স। শেষ করেছি ১৩টি কোর্স। আমাদের কোর্সগুলাতে রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন বাধ্যতামূলক না, কিন্তু তার পরেও রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা আছে। এভাবে রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন করেছেন প্রায় ৬০ হাজার শিক্ষার্থী।
শিক্ষক কথন
আমাদের শিক্ষক হিসাবে এবছর আমরা পেয়েছি সারা বিশ্বের সবখানে ছড়িয়ে থাকা এক ঝাঁক উদ্যমী মানুষকে। এদের মধ্যে আছেন দেশ বিদেশের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক।
৪টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন
শিক্ষক.কম বছরের শুরুতেই পায় গুগলের রাইজ এওয়ার্ড। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, ও গণিত শিক্ষার বিস্তারে সারাবিশ্বের অল্প কয়েকটি সংগঠনকে এই পুরস্কার দেয়া হয়েছে। ৮০০টি সংগঠনকে বিবেচনা করে এর মধ্যে মাত্র ১৮টি দেশের ৩০টি প্রজেক্টকে বেছে নেয় গুগল। এবারেই প্রথমবারের মতো এশিয়াতে এই পুরস্কার দেয়া হয়, আর এশিয়ার দুইটি প্রজেক্টের একটি হলো আমাদের শিক্ষক.কম।
এই পুরস্কারটি নিতে জুন মাসে লন্ডনের রাইজ সামিটে অংশ নিতে যাই আমি। সেখানে শিক্ষকের মডেল নিয়ে একটি ওয়ার্কশপ সেশনের আয়োজন করি, যেখানে অংশগ্রহনকারীদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয় অল্প খরচে এরকম কার্যকর একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরীর ব্যাপারটা নিয়ে।
মে মাসে আমরা পাই জার্মান আন্তর্জাতিক রেডিও ডয়চে ভেলের দ্য ববস পুরস্কার। বেস্ট অফ ব্লগস এন্ড অনলাইন এক্টিভিজম পুরস্কারের অংশ হিসাবে বেস্ট ইনোভেশন ক্যাটেগরিতে ইউজার পুরস্কার পায় শিক্ষক।
অক্টোবরে আমরা পাই ইন্টারনেট সোসাইটি ইনোভেশন ফান্ড এর পুরস্কার। পুরো এশিয়া প্যাসিফিক এলাকায় মাত্র ৪টি প্রজেক্টকে পুরস্কার দেয়া হয়। আমরা পাই শিক্ষার বিস্তারে ইন্টারনেটের ব্যবহার এই ক্যাটেগরিতে। ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে অনুষ্টিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন ইন্টারনেট গভার্নেন্স ফোরামে এই পুরস্কারটি আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষক.কম এর হাতে তুলে দেয়া হয়, আমাদের পক্ষে তা গ্রহন করেন আইপি টেলিফোনি কোর্সের শিক্ষক বিজ্ঞানী ড. মশিউর রহমান।
এবং সবশেষে ডিসেম্বরে আমরা পাই ইন্টারনেট সোসাইটির কমিউনিটি গ্রান্ট। সারা বিশ্বের অল্প কিছু প্রজেক্টকে ইন্টারনেট ব্যবহার করে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন ঘটানোর জন্য পুরস্কৃত করা হয়।
এই অর্জনগুলো আসলে আমাদের সবার অর্জন – এই সম্মানের দাবিদার আসলে শিক্ষক.কম এর সব শিক্ষক আর শিক্ষার্থীরা। অভিনন্দন আপনাদের!
পাঠ্যবইতে শিক্ষক.কম
বছরের শুরুতেই সুখবর পেয়েছিলাম। বাংলাদেশের স্কুলের ৭ম শ্রেণীর পাঠ্যবইতে স্থান করে নিয়েছে শিক্ষক.কম। ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির বইটিতে শিক্ষায় ইন্টারনেটের ব্যবহারের উদাহরণ হিসাবে দেখানো হয়েছে শিক্ষক.কম সাইটকে। প্রতিষ্ঠার মাত্র ৫ মাস এর মধ্যেই শিক্ষকের এই স্বীকৃতিটা আমাদের সব শিক্ষার্থী আর শিক্ষকদের বেশ ভালোভাবে অনুপ্রাণিত করে ।
ফেইসবুকে আমরা
শিক্ষক.কম এর ফেইসবুক পেইজটিতে এবছর হয়েছে অনেক মানুষের আনাগোনা। ডিসেম্বর মাসে আমরা পেরিয়ে যাই ২০,০০০ লাইকের মাইলস্টোন।
এবং ২০১৪
২০১৪ সালে আমাদের অনেক অনেক সবপ্ন, সামনের দিকে এগোনোর প্ল্যান। সাথে থাকুন। এবছরের প্রথম ১০ দিনেই শুরু করা হয়েছে ৮টি নতুন কোর্স। আরো শুরু হবে অনেকগুলাই। স্কুল ও কলেজের সব কোর্স আস্তে আস্তে যোগ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট সোসাইটির বাংলাদেশ চ্যাপ্টার, এবং বাতায়ন ফাউন্ডেশনের সাথে যৌথ উদ্যোগ শুরু হচ্ছে। দেশের একটি উপজেলার স্কুলগুলাতে আমাদের লেকচার ভিডিও ও কোর্স ম্যাটেরিয়াল সরাসরি পৌছে দেয়ার কাজও এগিয়ে চলছে।
Sky is the limit …
সাথে থাকুন সবাই, আসুন বাংলা ভাষায় ছড়িয়ে দেই বিশ্বের সব জ্ঞানের আলো।