«

»

জানু. 11

জীব জীবন পরিবেশ ২: বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা কিভাবে করতে হয়

[কোর্সের মূল পাতা] [নিবন্ধন ফর্ম][পূর্বের লেকচার]

 

বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার পর্যায়গুলি নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়েছে। পরবর্তী লেকচার থেকে আমরা জীববিজ্ঞান নিয়ে মূল আলোচনা শুরু করবো।

 

 

বিজ্ঞানচর্চা কেন মজার জানো? কারন বিজ্ঞানচর্চার মাধ্যমে তুমি এমন কোন জিনিস আবিষ্কার করতে পারো যা কেউ কোনদিন জানতো না বা বুঝতো না বা আগে কখনও করেনি! আর সেজন্যই বিজ্ঞানচর্চা কিভাবে করতে হয় সেটা আমরা এখান থেকে শিখে নেবো। সব বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাতেই এইসব ধাপগুলি পেরোতে হয়। বিজ্ঞানের মূলে হল অনুসন্ধান, আর অনুসন্ধান করতে হয় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি দিয়ে। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান হল প্রথমে প্রশ্ন করা এবং তারপর উত্তর খুঁজে বের করা। মূলত ৬টি ধাপে অনুসন্ধান করতে হয়। ধাপগুলি এখানে দেয়া হল:

b6

১. পর্যবেক্ষণ করা:

বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান সবসময় পর্যবেক্ষণ দিয়ে শুরু হয়। তুমি সবসময়েই আশেপাশের জিনিসপত্র পর্যবেক্ষণ করছ। যেমন মনে কর একদিন রাস্তা দিয়ে হাঁটছো, রাস্তার পাশে একটি প্রজাপতি বা মথ দেখলে, যে ডানা মেলে কোন পাতার উপর বসে আছে (নিচের ছবিটা দেখো)। তুমি তার ডানায় কিছু নকশা লক্ষ্য করলে যা হয়তো দেখতে চোখের মত। তুমি মনে করলে চোখগুলির নকশার ফলে আসলে প্রজাপতি বা মথকে একটা পেঁচার মুখের মত দেখাতে সাহায্য করে।

একদিন বিকালে বাইরে হাঁটতে গিয়ে একটি পেঁচার মুখের মত নকশাসহ মথ দেখতে পেলে। অর্থাৎ তুমি পর্যবেক্ষণ করছো!

২. প্রশ্ন তৈরি করা:

পর্যবেক্ষণ প্রায় সবসময়েই আমাদের মনে বিভিন্ন প্রশ্ন তৈরি করে। যেমন এইযে দেখলে একটি মথের ডানায় নকশাগুলি পেঁচার মুখের মত হয়েছে, এটা কেন হয়েছে? এই পর্যবেক্ষণের পেছনের কারণ কি?

 

৩. হাইপোথিসিস (hypothesis) বা সম্ভাব্য উত্তর তৈরি করা:

হাইপোথিসিস হল কোন বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তর। হাইপোথিসিস কে সবসময়ই বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে হতে হবে এবং সবসময়ই যুক্তিযুক্ত হতে হবে। আবার হাইপোথিসিস ভুল প্রমাণিতও হতে পারে। মানে তোমার পরীক্ষা তোমাকে জানাতে পারে যে তোমার হাইপোথিসিস সঠিক না ভুল। হাইপোথিসিস কেমন হতে পারে বলছি। আগের ধাপটিতে তুমি প্রশ্ন করেছিলে কেন মথের ডানায় অমন নকশা করা যা দেখতে পেঁচার চোখের মত? সম্ভাব্য উত্তর হতে পারে, আমরা জানি মথকে পাখিরা খেতে আসে। অনেক দূর থেকে তারা মথের ডানা দেখতে পায়। কিন্তু মথটির ডানায় যদি পেঁচার মত মুখ পাখিরা দেখে তবে ভাববে যে সেখানে একটি পেঁচা বসে আছে। তাই আর খেতে আসবেনা মথটিকে। এইটা হল তোমার হাইপোথিসিস বা সম্ভাব্য উত্তর।

 

৪. হাইপোথিসিস কে পরীক্ষা করা:

হাইপোথিসিস তৈরি হয়ে গেলে আমাদের সেই হাইপোথেসিস করে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে। আর সেজন্য আমাদের কিছু অনুমান প্রয়োজন। সেটা হল- কোন একটা নির্দিষ্ট পরিবেশে যদি একটি পরীক্ষা করি তবে তার সম্ভাব্য ফলাফল কি হতে পারে তার অনুমান করা। যেমন, এমন হতে পারে “যদি ‘ক’ জিনিসটা করা হয় তবে ‘খ’ ব্যাপারটা হবে”। আগের উদাহরণটাই বলছি। যদি একটি পাখি দেখে মথের গায়ে পেঁচার মত নকশা তবে পাখিটি মথটিকে খাবেনা।

পরবর্তী ধাপ হল তোমাকে অবশ্যই নিজের অনুমান পরীক্ষা করার জন্য প্রমাণ জোগাড় করতে হবে। ‘প্রমাণ’ হল যেকোন ধরনের তথ্য যা তোমার অনুমানকে ‘সঠিক’ অথবা ‘ভুল’ হিসেবে আখ্যা দেবে। যেমন তুমি পেঁচার মুখের মত নকশাসহ অনেকগুলি মথকে অনেকদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করে তথ্য জোগাড় করলে- পাখিরা তাদের খায় নাকি খায়না। তুমি দেখলে পাখিরা তাদেরকে খায়না কিন্তু অন্য মথদের খায়। তার মানে দাঁড়ালো তোমার পরীক্ষার ফলাফল তোমার হাইপোথিসিসের সঙ্গে মিলে গেছে।

 

৫. ফলাফল নির্ণয়:

তাহলে ফলাফল দাঁড়ালো- আমার পরীক্ষার ফলাফল আমার হাইপোথিসিসের সাথে মিলে যায়। কিন্তু তার মানে কি এই যে তুমি তোমার হাইপোথিসিসকে একদম ‘সঠিক’ প্রমাণ করে দিয়েছো? উত্তর হল ‘না’! কারন তুমি শুধু হয়তো একধরনের পরীক্ষা করেছো, অন্য অনেকধরনের পরীক্ষা করা বাকি আছে। অথবা, কেউ আবার তোমার ফলাফলকে ভুল প্রমাণ করে দিতে পারে। অর্থাৎ যত বেশি প্রমাণ একটি হাইপোথিসিস এর পক্ষে যায় সেই হাইপোথিসিসটা তত সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা। আর যখন প্রায় সন্দেহাতীতভাবে কোন হাইপোথিসিসের পক্ষের অসংখ্য প্রমাণ পাওয়া যায় তখন আমরা হাইপোথিসিসটাকে থিয়োরী (theory) বা তত্ত্ব বলি।

 

৬. ফলাফল জানানো বা যোগাযোগ:

বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা পদ্ধতির শেষধাপ হল তুমি কি শিখলে এই পরীক্ষা থেকে সেটা অন্যদেরকে জানানো। এইটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কারন এর মাধ্যমের তুমি অন্যদেরকে তোমার হাইপোথিসিস পরীক্ষা করে দেখতে সুযোগ দিতে পারছো। গবেষকগণ তোমার হাইপোথিসিসের পক্ষে বা বিপক্ষে দুইদিকেই তথ্য প্রমাণ জোগাড় করতে পারে। তোমার পরীক্ষার ভুলও ধরে দিতে পারেন। যেমন, একজন বলতে পারেন, যখন তুমি মথগুলি নিয়ে পরীক্ষা করছিলে তখন তোমাকে দেখেই হয়তো পাখিগুলি খেতে আসেনি। আবার কিছু গবেষক তোমার ভুলগুলি থেকে শিখে আরও সঠিক উপায়ে পরীক্ষাগুলি করতে পারেন।

b7

Comments

comments

About the author

খান ওসমান

আমি টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের মলিকিউলার জেনেটিক্স এর একজন পিএইচডি ছাত্র। কাজ করছি ম্যালেরিয়া জীবাণুর একধরনের প্রোটিন নিয়ে। আমার কাজ মূলতঃ এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফির মাধ্যমে প্রোটিনের গঠন নির্ণয়, এর সঙ্গে ম্যালেরিয়া রোগের সম্পর্ক নির্ধারণ এবং ঔষধ তৈরিতে সহায়তা করা ইত্যাদি বিষয়ের উপর। স্নাতক এবং মাস্টাসর্ ডিগ্রী অজর্ন করেছি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুজীববিজ্ঞান নিয়ে। আমার বতর্মান ল্যাব এর ওয়েবসাইটে ঢু মেরে দেখতে পারেন এখানে: www.thesgc.org.

Leave a Reply