«

»

সেপ্টে. 11

স্কুলের পদার্থবিদ্যা – মেকানিক্স – লেকচার – ১

[কোর্সের মূল পাতা | নিবন্ধনের লিংক ]

স্কুলের পদার্থবিদ্যা – মেকানিক্স লেকচার – ১

 

 

[ইউটিউব লিংক] [ডাউনলোডের লিংক (৭৩ মেগা)]

 

 

শুরুর কিছু কথাঃ

পদার্থবিজ্ঞান বা ফিজিক্স বললে সবার আগে আমাদের চোখের সামনে বা মনের মধ্যে কি ভেসে আসে? চক বোর্ডে E=mc2, s=s0+u0t+1/2 at2, V=IR ইত্যাদি এইসব ইকুয়েশান? খাতায় পাতার পর পাতা পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র আর গাণিতিক সমীকরণ? নিউটন,আইনস্টাইন,ম্যারি কুরি এদের মুখ? ল্যাবরেটরীতে কাজে ব্যাস্ত বিজ্ঞানী? নাকি স্পেসশিপ,ল্যাপটপ,কম্পিউটার,স্যাটেলাইট,লেজার এইসব আধুনিক প্রযুক্তি? একেক জনের একেকটা মনে হতে পারে।কিন্তু আসলে ফিজিক্স বা পদার্থবিজ্ঞান কি?

সবচেয়ে সহজ এবং এক কথায় বললে এই পৃথিবী,এই বিশ্বজগত (ইউনিভার্স যেটাকে বলে) এবং বিশ্বজগত সম্পর্কিত যাবতীয় পড়ালেখাই পদার্থবিজ্ঞান বা ফিজিক্স।আমরা যারা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশুনা করেছি বা করছি আমাদের প্রায় সবাইকেই গণিতের পাশাপাশি অন্তত পদার্থবিজ্ঞান অবশ্যই পড়তে হয়েছে।সে অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি পড়াটা ঠিকঠাক মত না বোঝা থাকলে পদার্থবিজ্ঞানের একেকটা পরীক্ষা কি পরিমাণ জ্বালা-যন্ত্রনার কারন হতে পারে।সেই থেকে অনেকেরই মনে হতে পারে…”ধুর!! রাখ তোমার পৃথিবী আর বিশ্ব জগতের যাবতীয় পড়ালেখা পদার্থবিজ্ঞান।কোনোমতে পরীক্ষাটা শেষ করতে পারলে বাঁচি।” কিন্তু আসলেই কি পদার্থবিজ্ঞান মানে পরীক্ষা,টেস্ট,কুইজ এসবের কঠিন কঠিন প্রশ্নের জ্বালা-যন্ত্রনা?একটু অন্যভাবে চিন্তা করে দেখি।ধরা যাক আমার কোনো ফিজিক্স পরীক্ষা,টেস্ট এসব নাই।কিন্তু আমার আছে সীমাহীন কৌতুহল, দৈনন্দিন জীবনের পরতে পরতে প্রতিটা বিষয়ে অসংখ্য প্রশ্ন।আর যখনই আমি এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যাব তখনই সত্যিকারভাবে টের পাওয়া যাবে আমাদের প্রতিদিনকার জীবন-যাপনের এইসব প্রশ্নগুলোর উত্তর বেশিরভাগই আসলে দেয় পদার্থবিজ্ঞান।তখনই পদার্থবিজ্ঞান আর কেবল পরীক্ষা-প্রশ্নপত্রের বিষয় থাকে না।এটা হয়ে ওঠে বেঁচে থাকার জন্য ‘অবশ্যই লাগবে’ এমন জ্ঞান।পদার্থবিজ্ঞানের পড়াশুনা,এর গবেষণা,সংশ্লিষ্ট গণিত, কিংবা নিছক পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে ঘাঁটাঘাটি খুব কি কঠিন কিছু?মাঝে মাঝে এরকম হয়ত মনে হতে পারে।কিন্তু নিজের ভিতর কৌতুহল,ধৈর্য্য,ভালবাসা,আগ্রহ এই ব্যাপারগুলো ধরে রাখতে পারলে এটা কখনোই কঠিন কোনো বিষয় না।যারা সত্যিকার ভাবে কৌতুহল নিয়ে পদার্থবিজ্ঞানের উপর পড়াশুনা,গবেষণা,ঘাঁটাঘাঁটি করেছে তারা জানে এটা আসলে কতটা আনন্দের ব্যাপার হতে পারে।

 

পদার্থবিজ্ঞান অনেক বিস্তৃত একটা শাখা।কোনো কিছুই পদার্থবিজ্ঞানের আওতার বাইরে নয়।একটু কেতাবী ভঙ্গিতে বললে ভৌতজগতের সবকিছুই পদার্থবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত।ভৌতজগতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানার আগ্রহ থাকলে পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখাগুলো এবং এদের আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে হবে।বস্তুর গতি,গতির পরিবর্তনকারী বল,কাজ,শক্তি,তাপঃগরম-ঠান্ডা,শব্দ-তরংগ,ইলেকট্রিসিটি,চুম্বক,আলো,ইলেক্ট্রনিক্স কিংবা অতিক্ষুদ্র অণু-পরমাণুর জগত,অতি বৃহৎ গ্রহ-নক্ষত্র,এদের গতিবিধি ইত্যাদি সব কিছুই পদার্থবিজ্ঞানের আলোচনার বিষয়।এসব শাখা আবার পরস্পর সম্পর্কযুক্তও।

 

প্রতিনিয়ত কত কিছুই না ঘটে চলেছে আমাদের চারপাশের দুনিয়াতে।গাছের পাতার নড়াচড়া,সূর্যের আলো,রাতের আকাশে তারার ঝিকিমিকি,মানুষের হাটাচলা,কাঁদায় পিছলে যাওয়া,ঝরনার পানির নিচে গড়িয়ে পড়া,সুইচ টিপলেই চট করে লাইট বাল্বের জ্বলে উঠা,বিমানের আকাশে ওড়া,এত্ত বড় জাহাজের পানিতে ভাসা,রাস্তায় যানবাহনের ছুটে চলা,টেলিফোন,মুঠোফোনে দূরদুরান্তে কথা বলা,কম্পিউটার-ইন্টারনেট এরকম এত এত কিছু,এত এত ব্যাপার-স্যাপার,ঘটনা।একটু থামি।কৌতুহলী মনে কি মাঝে মধ্যেই এসব নিয়ে মনে প্রশ্ন জাগে না?

ü  আমরা কিভাবে দেখি?

ü  কিভাবে শুনি?

ü  যে বায়ু থেকে শ্বাস নেই সেটা আসলে কি দিয়ে তৈরি?

ü  কেন বরফের উপর কিংবা কাঁদা মাটির রাস্তায় হাটতে গেলে আমরা পিছলে যাই,শুকনা রাস্তায় তো এমন হয় না?

ü  ঐ যে রাতের চাঁদ,সেটা কেন একেক সময় একেক আকারের হয়?কখনো গোল ঝলাসানো রুটির মত,আমার কখনো ধনুকের মত বাঁকানো?

ü  দিন-রাত কিভাবে হয়?

ü  শীতের সময় শীত লাগে কেন?গরম জামা,মোটা কাপড়,কাঁথা-কম্বল কিভাবে আমাদের শরীর গরম রাখে?

ü  পানিতে কিছু জিনিস ভাসে আবার কিছু জিনিস ডুবে যায়।আবার কিছু জিনিস আছে যা কিনা পুরোপুরি ভাবে ডুবে না,সম্পূর্ণ নিমজ্জিত অবস্থায় ভেসে থাকে।কেন এমনটা হয়?

ü  লাইট বাল্ব কিভাবে জ্বলে?বৈদ্যুতিক পাখা কিভাবে চলে?

ü  আলো কি?

ü  পদার্থ আসলে কি দিয়ে তৈরি?এদের প্রকৃতি-ধর্ম কি?

ü  আচ্ছা সূর্য-তারা,গ্রহ-নক্ষত্র এগুলা কিভাবে,কি দিয়ে গঠিত?এরা কিভাবে তৈরি হল?এদের গতিবিধির কি কোনো নিয়ম আছে?

 

এরকম একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকলে প্রশ্নের এই প্রশ্ন করা আর শেষ হয় না।চলতেই থাকে।এবং সবচেয়ে মজার কথাটা এখানেই।পদার্থবিজ্ঞানের ঘাঁটাঘাটি,পড়াশোনা,গবেষণায় প্রশ্নের কখনো অভাব হয় না।আর একের পর আসা এই প্রশ্নই আমাদের পদার্থবিজ্ঞানের পড়াশুনাকে এগিয়ে নেয়,উঁচু পর্যায়ে পদার্থবিজ্ঞানীদের গবেষণাকে এগিয়ে নেয়।আমরা পদার্থবিজ্ঞানের পাঠ্যবইয়ে খুঁজি আমাদের প্রশ্নের উত্তর,আর যেসব প্রশ্নের উত্তর বইয়ে থাকে না,পদার্থবিজ্ঞানীরা দিনের পর দিন,বছরের পর বছর গবেষণা,পরীক্ষা-নিরীক্ষা এসবের মাধ্যমে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়ান।আর এভাবেই এগিয়ে চলে পদার্থবিজ্ঞান,গোটা মানব সভ্যতা।মানব ইতিহাসের শুরু থেকেই মানুষ চারপাশ,প্রকৃতি,বস্তুজগৎ এসব সম্পর্কে বুঝতে চেয়েছে,জানতে চেয়েছে।তার যাপিত জীবনকে আরো সহজ করতে চেয়েছে।আর এই কাজ করতে গিয়ে মানুষ আসলে তিল তিল করে পদার্থবিজ্ঞান নামক জ্ঞানের শাখাটিকেই গড়ে তুলেছে,এর জ্ঞানের পরিধিকে বিস্তৃত করেছে।

 

পদার্থবিজ্ঞানের আগাগোড়া পুরোটাই হল চারপাশের জগত সম্পর্কে অনুসুন্ধান করা,আরো ভালমত করে বুঝতে চেষ্টা করা।একটু বেশি ফিজিক্স জানা,চারপাশটাকে আরেকটু ভালমত বোঝা তারপর বুদ্ধি খাটিয়ে সেভাবে কাজ করা আমাদের জীবন অনেক সহজ করে দেয়।আর মানুষ সবসময় চায় তার জীবনটা আরেকটু সহজ হোক।তাই আরেকটু সহজভাবে বাঁচার জন্য হলেও পদার্থবিজ্ঞানের চর্চা করা জরুরি।

সবশেষে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে রাখছি।এই কোর্সের উদ্দেশ্য পদার্থবিজ্ঞানের পরীক্ষায় কাউকে ভাল মার্কস পাইয়ে দেয়া নয়।এই কোর্সের উদ্দেশ্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের পদার্থবিজ্ঞান বুঝতে সাহায্য করা।স্কুলের পাঠ্যবই আরো ভালভাবে অনুসরন করতে সাহায্য করা।আর ভালভাবে বুঝতে পারলে ফিজিক্সের পরীক্ষায় ভাল মার্কস এমনিতেই আসবে।পদার্থবিজ্ঞানের এই রোমাঞ্চকর অভিযানে সবাইকে স্বাগতম।

 

**লেকচার নোট আর লেকচার ভিডিও এই দুইটার মধ্যে যে হুবহু মিল থাকবে এমনটা নাও হতে পারে।কিন্তু এটা নিশ্চিত যে লেকচার নোট এবং লেকচার ভিডিও এর আলোচনার বিষয়বস্তু একই থাকবে।কোনো যায়গায় যদি ইন্টারনেটের স্পিড কম থাকে তবে আগে পিডিএফ লেকচারটা নামিয়ে নিয়ে সেটা পড়তে যে সময়টা লাগবে সেই সময়ে লেকচার ভিডিওটা ডাউনলোড করে নেয়া যেতে পারে।

 

Comments

comments

About the author

দ্বৈপায়ন দেবনাথ

আমি দ্বৈপায়ন দেবনাথ।ডাক নাম অথৈ।ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়েছি হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে। ক্লাস সিক্সে ভর্তি হই কলেজিয়েট স্কুল,চট্টগ্রামে।মাধ্যমিক পাশ করি সেখান থেকেই।উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করি চট্টগ্রাম কলেজ থেকে।এখন ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান,ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড কমিউনিকেশান ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪র্থ বর্ষে পড়ছি।আমার এখনো গ্রাজুয়েশনই শেষ হয়নি।তাই জীবনের অর্জন-এচিভম্যান্ট এসব সম্পর্কে বলার সময় এখনো আসে নি।তাই শুধু মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পাশের কথাই বলতে হল।যদি জিজ্ঞেস করা হয় ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি- তাহলে আমি বলব কিছু গণিত এবং পদার্থবিজ্ঞানের বই যোগাড় করেছি।সেগুলোই পড়ার পরিকল্পনা আছে।আমার অনেক বন্ধুই ম্যাথ-ফিজিক্স শিখে মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেছে।আর আমি গণিত-ফিজিক্সের কিছুই জানি না।পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি ভালবাসা আছে।আর আছে পদার্থবিজ্ঞান শেখার প্রয়োজনীয় গণিতের প্রতি আগ্রহ।ঐ আগ্রহ আর ভালবাসাকে কাজে লাগিয়ে পদার্থবিজ্ঞান শিখতে হবে।আপাতত এটাই প্ল্যান।

Leave a Reply