«

»

এপ্রিল 29

জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (GIS) – লেকচার ৮

[নিবন্ধনের লিংক | কোর্সের মূল পাতা]

[জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (GIS) – লেকচার ৭]

[জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (GIS) – লেকচার ৯]

মানচিত্র অভিক্ষেপের প্রকারভেদ (পর্ব- ২)

গত লেকচারে আমরা ‘মোচাকৃতি অভিক্ষেপ (Conical Projections)’ সম্পর্কে জেনেছি। আজকে Planar (সমতল) এবং Cylindrical (বেলনাকার) অভিক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করব।

আজকে প্রথমেই আমরা জানতে চেষ্টা করব- স্পর্শক (Tangent Line), স্পর্শ বিন্দু (Point of Tangency) এবং ছেদক (Secant) কি? আশা করি, নিচের ছবিটি দেখেই আপনি বুঝতে পারছেন। 1

২) সমতল অভিক্ষেপ (Azimuthal/Zenithal/Planar Projections)

এই অভিক্ষেপের মূল ধারণাটি হল, একটি সমতল (flat surface)/ এক টুকরা কাগজ (flat piece of paper) পৃথিবীকে (Earth/Globe) এক (tangent)/একাধিক (secant) বিন্দুতে স্পর্শ করবে। এই অভিক্ষেপ সাধারণত কোণ (Angle) হিসাবে মাপা হয়। নিচের ছবিগুলো দেখুনঃ 2

 নিম্নে বিভিন্ন প্রকার ‘সমতল অভিক্ষেপ’-এর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলঃ

২.১) Gnomonic Projection

এই ধরণের অভিক্ষেপে, পৃথিবীর কেন্দ্র হল ‘Perspective Point’ (যা একগুচ্ছ আলোকরশ্মির মতো)। নিচের ছবিটি দেখুনঃ 3

২.২) Orthographic Projection

এই অভিক্ষেপ, পৃথিবীকে অসীম দূরত্ব থেকে অনুধাবন করে। এক্ষেত্রে ‘Perspective Point’ হল পৃথিবীর ও স্পর্শকের অপর-পার্শ্ব থেকে আগত অনন্ত-বিন্দু (Infinite Point)। নিচের ছবিটি দেখুনঃ 4

২.৩) Stereographic Projection

এক্ষেত্রে ‘Perspective Point’ হল স্পর্শক বিন্ধুর (point of tangency) বিপরীত মেরু। নিচের ছবিটি দেখুনঃ

5

২.৪) Azimuthal Equidistant Projection

ইহা একপ্রকার সমদূরবর্তী (equidistant) অভিক্ষেপ। এই অভিক্ষেপে মানচিত্রের কেন্দ্র থেকে যে কোন বিন্দুর দূরত্ব (distance) সঠিক থাকে। নিচের ছবিটি দেখুনঃ

6

২.৫) Lambert Azimuthal Equal-Area Projection

এই ধরণের অভিক্ষেপে এলাকা/ক্ষেত্রফল (Area) অপরিবর্তিত থাকে এবং কেন্দ্র থেকে একটি সঠিক অভিমুখ (true direction) বজায় রাখে। ইহার মূল-মধ্যরেখা (central meridian) হল সরলরেখা। নিচের ছবিটি দেখুনঃ 7

সমতল অভিক্ষেপ নিয়ে আলোচনা এখানেই শেষ করছি। এবার আমরা বেলনাকার (Cylindrical) অভিক্ষেপ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করব।

৩) বেলনাকার অভিক্ষেপ (Cylindrical Projections)

বেলনাকার অভিক্ষেপের মূল ধারণাটি হল, এক টুকরা কাজগকে আবর্তিত করে বেলনাকার আকৃতি দেয়া এবং পৃথিবীকে বৃত্তাকারভাবে স্পর্শ করা। নিচের ছবিটি দেখুনঃ 8

নিম্নে নানাবিধ বেলনাকার অভিক্ষেপ সম্পর্কে আলোচনা করা হলঃ

৩.১) Mercator Projection

এই অভিক্ষেপে ‘মধ্য-রেখা’ (Meridian) এবং ‘সমান্তরাল’ (Parallel) সমূহ সরলরেখায় থাকে এবং পরস্পরকে সমকোণে ছেদ করে। এছাড়া মধ্য-রেখাসমূহ সমদূরত্বে (equally spaced) থাকে। নিচের ছবিটি দেখুনঃ 9

৩.২) Transverse Mercator Projection

এক্ষেত্রে বেলনটি অনুপ্রস্থ (transverse) অবস্থানে থাকে। এর ফলে কোণ (Angle) এবং ক্ষুদ্র এলাকার (small area) আকৃতি সঠিক থাকে। নিচের ছবিটি দেখুনঃ 10

৩.৩) Universal Transverse Mercator (UTM) Projection

‘UTM’ বিশ্বব্যাপী একটি জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত মানচিত্র অভিক্ষেপ ব্যবস্থা। তাই ‘UTM’ অভিক্ষেপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

এক্ষেত্রেও অনুপ্রস্থ (transverse) চোঙ (cylinder) ব্যবহৃত হয়। ইহা পৃথিবীকে ৬ ডিগ্রির (৬°), ৬০ টি সংকীর্ণ অনুদৈর্ঘ্য অঞ্চলে (narrow longitudinal zones/UTM Zone) বিভক্ত করে [৮৪°N থেকে ৮০°S]। দক্ষিণের এই বিস্তৃতি ‘৮৪°S’ পর্যন্ত না হয়ে ‘৮০°S’ পর্যন্ত হল, কারণ এই ‘UTM’ অভিক্ষেপে ‘Arctic’ এবং ‘Antarctic’ অঞ্চলকে অগ্রাহ্য (exclude) করা করা হয়েছে।  নিচের ছবিটি দেখুনঃ

11

এর প্রতিটি অঞ্চলের (UTM Zone) নিজস্ব মূল-মধ্যরেখা (Central Meridian) আছে। যেমন নিচের ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে Zone-১১, ১২০°W থেকে ১১৪°W পর্যন্ত বিস্তৃত। আরও ভালভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে যে, মূল-মধ্যরেখার দ্রাঘিমাংশের মান হল ১১৭°W।

12

প্রতিটি ‘UTM Zone’-এর মূল-মধ্যরেখাকে ‘Scale Factor’ দেয়া হয়েছে ০.৯৯৯৬০। এই মূল-মধ্যরেখার পশ্চিমে অবস্থিত কোনকিছুর ঋণাত্মক মান এড়ানোর জন্য, মূল-মধ্যরেখার সাথে ৫০০,০০০ মিটার ‘False Easting’ মান যোগ করা হয়। এছাড়া বিষুবরেখা/ নিরক্ষরেখার (equator) দক্ষিণে অবস্থিত কোনকিছুর ঋণাত্মক মান এড়ানোর জন্য, নিরক্ষরেখার সাথে ১০,০০০,০০০ মিটার ‘False Northing’ মান যোগ করা হয় [উপরের ও নিচের ছবিটি পর্যায়ক্রমে খেয়াল করুন]।

13

** “লেকচার ৬”-এ ‘Scale Factor’, ‘False Easting’ এবং ‘False Northing’ নিয়ে সামান্য আলোচনা করা হয়েছে।

এখন কোন মানচিত্র যদি একাধিক ‘UTM Zone’ জুড়ে থাকে, তবে ঐ দুইটি ‘Zone’–এর সংযোগস্থলে ‘Eastings’ পরিবর্তন করা ঝামেলাপূর্ণ। এই কারণে এদের মধ্যবর্তী ‘সংলগ্ন অবস্থানে’ (adjacent zone) চল্লিশ কিলোমিটার অধিক্রমণ (overlap) অনুমোদিত। নিচের ছবিটি দেখুনঃ

14

৩.৪) Equidistant Cylindrical Projection

এই অভিক্ষেপে অক্ষাংশ (latitude) ও দ্রাঘিমাংশ (longitude) সরাসরি যথাক্রমে ‘y’ এবং ‘x’-এর মধ্যে চিত্রাঙ্কিত করা করা হয়। এছাড়া ‘মধ্য-রেখা’ (Meridian) এবং ‘সমান্তরাল’ (Parallel) সমূহ সমকোণী-চতুর্ভুজ তৈরি করে একই দূরত্বের ব্যবধানে থাকে। আকৃতি (Shape) ও আয়তন (Area) উভয়ই যুক্তিসঙ্গতভাবে সংরক্ষিত হয় শুধুমাত্র মেরু অঞ্চল বাদে। নিচের ছবিটি দেখুনঃ

15

৩.৫) Lambert’s Cylindrical Equal-Area Projection

এই অভিক্ষেপে আয়তন (Area) সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়, কিন্তু উভয়-মেরুতে লক্ষণীয় মাত্রায় আকৃতির (Shape) বিকৃতি ঘটে। এছাড়া সমান্তরালসমূহ অসম ব্যবধানে থাকে। নিচের ছবিটি দেখুনঃ 16

৩.৬) Pseudo-Cylindrical Projections

এই ধরণের অভিক্ষেপে সমান্তরালসমূহ (Parallels) এবং মূল-মধ্যরেখা (Central Meridian) সরলরেখায় থাকে, ইহা ব্যতীত বাকি সকল মধ্য-রেখাসমূহ (Meridians) বক্ররেখায় থাকে। নিম্নের ছবিগুলোতে কিছু উদাহরণ দেয়া হলঃ1718

৩.৭) Interrupted Projections

এই অভিক্ষেপে সমগ্র পৃথিবীকে একটি ছিন্ন/বিঘ্নিত/বাধাগ্রস্থ গঠনে (interrupted forms of graticules) প্রদর্শিত করা হয়। ইহা সাধারণত পৃথিবীর সকল মহাদেশ বা মহাসাগরগুলোকে একটিমাত্র মানচিত্রে চিত্রায়িত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। নিচের ছবিটি দেখুনঃ 19

এ পর্যন্ত প্রধান ৩টি মানচিত্র অভিক্ষেপ [মোচাকৃতি, বেলনাকার এবং সমতল] নিয়ে আলোচনা করা হল। এর বাইরে, বিভিন্ন এলাকা ও অঞ্চলভেদে আরও শত শত মানচিত্র অভিক্ষেপ আছে। তবে আপাতত এই তিনটি মৌলিক অভিক্ষেপ সম্পর্কে ধারণা থাকলেই চলবে।

৪) বাংলাদেশে প্রচলিত স্থানাঙ্ক ব্যবস্থাসমূহ

বাংলাদেশে যে সকল ‘স্থানাঙ্ক ব্যবস্থা’ (Coordinate Systems) বহুলভাবে প্রচলিত, নিম্নে সেগুলার ‘অভিক্ষেপ স্থিতিমাপসমূহ’ (Projection Parameters) তুলে ধরা হলঃ

৪.১) Bangladesh Transverse Mercator (BTM)

Projection: Transverse Mercator

False Easting: 500000.0

False Northing: -2000000.0

Central Meridian: 90.0

Scale Factor: 0.9996

Latitude of Origin: 0.0

Linear Unit: Meter

Datum: Everest_1830 or D_Everest_Bangladesh or D_Gulshan_303

Spheroid: Everest_1830 or Everest_Adj_1937

৪.২) Lambert Conformal Conic (LCC)

Projection: Lambert Conformal Conic

False Easting: 2743185.699 Meters

False Northing: 914395.233 Meters

Central Meridian: 90.0 (DD)

First Standard Parallel: 23.15 (DD)

Second Standard Parallel: 28.80 (DD)

Latitude of Origin: 26.00 (DD)

Linear Unit: Meter

Datum: Everest_1830 or D_Everest_Bangladesh

Spheroid: Everest_1830 or Everest_Adj_1937

৪.৩) Indian Zone Grid (IIB)

Projection: Lambert Conformal Conic

False Easting: 2743185.699 Meters

False Northing: 914395.233 Meters

Central Meridian: 90.0 (DD)

First Standard Parallel: 23.176944 (DD)

Second Standard Parallel: 28.822778 (DD)

Latitude of Origin: 26.00 (DD)

Linear Unit: Meter

Datum: Everest_1830

Spheroid: Everest_1830

৪.৪) Bangladesh Universal Transverse Mercator 2010 (BUTM 2010)

Projection: Transverse_Mercator

False_Easting: 500000.0

False_Northing: 0.0

Central_Meridian: 90.0

Scale_Factor: 0.9996

Latitude_Of_Origin: 0.0

Linear Unit: Meter

Datum: WGS1984

Spheroid: WGS1984

৪.৫) Universal Transverse Mercator (UTM)

‘UTM’ অভিক্ষেপ ব্যবস্থায়, নিচের ছবিটির মতো, বাংলাদেশ ‘UTM Zone 45N’ এবং ‘UTM Zone 46N’- এই দুইটি অঞ্চলেই পরেছেঃ20

UTM Zone 45N’-এর ‘অভিক্ষেপ স্থিতিমাপসমূহ’ নিম্নরূপঃ

Projection: Transverse_Mercator

False_Easting: 500000.0

False_Northing: 0.0

Central_Meridian: 87.0

Scale_Factor: 0.9996

Latitude_Of_Origin: 0.0

Linear Unit: Meter

Zone: Zone 45

Datum: WGS1984

Spheroid: WGS1984

আর, UTM Zone 46N’-এর ‘অভিক্ষেপ স্থিতিমাপসমূহ’ নিম্নরূপঃ

Projection: Transverse_Mercator

False_Easting: 500000.0

False_Northing: 0.0

Central_Meridian: 93.0

Scale_Factor: 0.9996

Latitude_Of_Origin: 0.0

Linear Unit: Meter

Zone: Zone 46

Datum: WGS1984

Spheroid: WGS1984

*******************************************************************************************************

এরই সাথে শেষ করছি ‘জিআইএস’-এর তাত্ত্বিক (theoretical) আলোচনা। পরবর্তী লেকচার থেকে শুরু হবে ‘ArcGIS 10’ সফটওয়্যারের উপর ভিত্তি করে ব্যবহারিক (practical) ক্লাস। অর্থাৎ এর পর থেকে ‘Video Tutorial’ আপলোড করার চেষ্টা করব। ওইসব লেকচারে প্রয়োজন হলে খুবই অল্প-বিস্তর তত্ত্ব থাকতে পারে।

*******************************************************************************************************

সর্বোপরি, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ‘রানা প্লাজা’ ধসের ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত এবং মর্মাহত। এই দুর্ঘটনায় হতাহতরা যেন দ্রুত আরোগ্য লাভ করে এবং নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। উনাদের পরিবারের সকলের প্রতি রইল গভীর সমবেদনা।

জাতি আজ বাকরুদ্ধ ও দিশেহারা। এমতাবস্থায় আপনাদের সকলের প্রতি একান্তভাবে অনুরোধ রইল, আসুন আমরা যে যেভাবে পারি হতাহতদের সাহায্যে এগিয়ে আসি। জাতীর এই ক্রান্তিলগ্নে যেন মানবাধিকার পরাজিত না হয়। মনুষ্যত্বের জয় হউক

সবাই ভাল থাকবেন, ধন্যবাদ!

Comments

comments

About the author

বায়েস আহমেদ

বায়েস আহমেদ বর্তমানে ব্রিটিশ সরকারের 'Commonwealth Scholarship' নিয়ে 'University College London (UCL)'-এ 'PhD' অধ্যয়ন করছেন। বর্তমানে উনার গবেষণার বিষয় হল - বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধ্বস এবং সংশ্লিষ্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা।

এর আগে উনি ২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে বুয়েটের ‘নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা’ বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর উনি ২০১১ সালের মার্চ মাসে ‘European Commission’-এর ‘Erasmus Mundus’ বৃত্তি নিয়ে ইউরোপের জার্মানি, স্পেন ও পর্তুগাল থেকে ‘Geospatial Technologies’-এ স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।

‘GIS’, ‘Remote Sensing’ এবং ‘Spatial Analysis’ বিষয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় সাময়িকীতে উনার একাধিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ‘GIS’-এর প্রশিক্ষক হিসাবেও উনার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে।

2 pings

  1. জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (GIS) – লেকচার ৯

    […] [জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (GIS) – লেকচ…] […]

  2. জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (GIS) – লেকচার ১০

    […] [জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (GIS) – লেকচ…] […]

Leave a Reply