«

»

ফেব্রু. 27

বায়োইনফরমেটিক্স পরিচিতি: লেকচার ৬: হোমোলজি মডেলিং এবং প্রোটিন ত্রিমাত্রিক কাঠামো বিশ্লেষণ

[কোর্সের মূলপাতা | কোর্সের নিবন্ধন ফর্ম]

গত পাঁচটি লেকচার ছিল একটা আর একটার সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু এই লেকচারটা অথবা টপিকটা একটু আলাদা। হোমোলজি মডেলিংএবং ত্রিমাত্রিক কাঠামো বিশ্লেষণঅনেকেই এর সাথে পরিচিত না বলেই আমার ধারণা। আর এই টপিকটা বায়োইনফরমেটিক্স গবেষণার একটা বিশাল এলাকা দখল করে রেখেছে। এই লেকচারে ঠিক আগের মতই গল্প জমাবো কম বেশি। জানতে পারবেন কিছু টুলস আর সার্ভার এর নাম এবং সাথে তাদের লিঙ্ক তবে তার সাথে সাথে কিছু নির্দেশনা দেখানো হবে।

হোমোলজি মডেলিং জিনিসটা কে আপনি কল্পনা করতে পারেন ছবি আঁকার সাথে। ধরুন, আপনি আপনার পছন্দের কোন মানুষের একটা ছবি আঁকতে চাচ্ছেন। প্রতিটা মানুষের স্বাভাবিক গঠন কিন্তু একই। নাক, কান, চোখ, মুখ ইত্যাদি। তার মানে আপনাকে যেই কাজটা করতে হবে, ঐ মানুষটার কিছু সূক্ষ্ম জিনিস খেয়াল করতে হবে যা কিনা তাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করেছে। এবার, আপনি প্রিয় মানুষের ছবি আঁকার বদলে চিন্তা করুন তো, যদি একটা কম্পিউটারকে কোন একটা নির্দিষ্ট প্রোটিনের ছবি আঁকতে দেয়া হয়, তাহলে সে কি করবে?

কম্পিউটার ও ঠিক আপনার মতো ছবি আঁকার কৌশল অনুসরন করবে। সকল প্রোটিন এর কিছু স্বাভাবিক জিনিস একই রবে, তবে নির্দিষ্ট প্রোটিন এর জন্য বিশেষ কিছু জিনিস খেয়াল রেখে ছবিটা আঁকতে হবে যাতে করে তা অন্য প্রোটিন থেকে আলাদা হয়। আমরা যেমন স্বাভাবিক গঠণগুলো আমাদের মস্তিস্কে রেখে দেই, তেমনি প্রোটিন ও সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো তার ডাটাবেজে সংরক্ষণ করে রাখে। স্বাভাবিক গঠনগুলোর সাথে আমরা যেমন কিছু সূক্ষ্ম জিনিস জুড়ে দিয়ে একটা মানুষের ছবি আঁকি, তেমনি করে কম্পিউটারো তার ডাটাবেজে থাকা তথ্যের সাথে সূক্ষ্ম বৈশিষ্ট্য মিলিয়ে তৈরি করে একটা নির্দিষ্ট প্রোটিন এর মডেল অথবা ছবি।

ছবি আঁকা আর মলিকিউল মডেলিং করা নিয়ে বেশ চিল্লাপাল্লা করলাম। কিন্তু এই বার যদি এর গুরুত্ব না বলতে পারি, তাহলে লেকচারের সার্থকতা এখানেই আত্মহত্যা করবে! ল্যাবে ভ্যাক্সিন তৈরি এবং নতুন ড্রাগ এর গবেষণায় হোমোলজি মডেলিংএবং ত্রিমাত্রিক কাঠামো বিশ্লেষণ এর কোন বিকল্প নাই। কোন মানুষ অথবা পশুকে নতুন ভ্যাক্সিন এবং ড্রাগ দেয়ার আগে তা কম্পিউটেশনালি পরীক্ষা করে দেখা হয়। এর ফলে আপনি আগেই জানতে পারবেন যে আপনার ভ্যাক্সিনটা ভাইরাস এর বিরুদ্ধে ঠিক মতো কাজ করবে কিনা অথবা ড্রাগটা গন্তব্য স্থানে গিয়ে এনজাইমকে বন্ধ করতে পারছে কিনা। তাছাড়া দুইটি ত্রিমাত্রিক মডেলের মধ্যে তুলনা করে বলে দেয়া সম্ভব হবে, কোথায় তাদের মধ্যে মিল আর অমিল।

যখনই আপনার কোন প্রোটিন অথবা এনজাইমের ত্রিমাত্রিক মডেল দরকার হবে তখন আপনার প্রথম কাজ হবে ইন্টারনেটে খুঁজে দেখা যে, আপনার আগে কেউ এর মডেলিং করে রেখেছে কিনা। যদি করা থাকে তাহলে, আলহামদুলিল্লাহ্‌। আপনার কষ্ট করা আর লাগবে না। কিন্তু কথা হল কোন সাইটে খুঁজবেন? নিচের লিঙ্কগুলো এই ব্যাপারে আপনাকে সাহায্য করবে। এই লিঙ্কগুলোতে গিয়ে আপনার প্রয়োজনীয় প্রোটিন অথবা এনজাইম এর ত্রিমাত্রিক গঠণ খুঁজে দেখতে পারেন।

. http://www.rcsb.org/pdb/home/home.do

. http://www.ncbi.nlm.nih.gov/structure

এবার আসেন, যদি খুঁজে না পান, তাহলে কি করবেন। এই ক্ষেত্রে আপনার মডেলিং নিজেকেই করে নিতে হবে। তবে এই ব্যাপারে আপনার কাছে দুইটা রাস্তা খোলা আছে।প্রথম উপায়, এই রাস্তা অবলম্বন করলে আপনাকে কিছুই করা লাগবে না। এইটা সার্ভার দিয়ে করা যাবে। সার্ভারের মধ্যে সব কিছু আগে থেকেই করে দেয়া থাকবে, যেমনবিশাল ডাটাসেট আর ত্রিমাত্রিক গঠণ তৈরির কোড। আপনাকে শুধু কিছু ক্লিক করা লাগবে। সবাই সাধারণত এই রাস্তাতেই কাজ করে থাকে। আর মডেল তৈরির পর ঐ মডেলটির উপরে কিছু পরিসংখ্যান উল্লেখ থাকে। এই সকল পরিসংখ্যান দেখে আপনি বুঝতে পারবেন, আপনার প্রোটিনের ত্রিমাত্রিক গঠণ কতটুকু ভালো হয়েছে এবং কতটুকু কাজে লাগান সম্ভব হবে।এই রাস্তায় এগোতে চাইলে নিচের লিঙ্কগুলো অনুসরণ করতে পারেন।

. http://swissmodel.expasy.org/

চিত্র-১

 

. http://zhanglab.ccmb.med.umich.edu/I-TASSER/

প্রথম লিঙ্কটি হল SWISS MODEL এর। এটা বেশ সহজ। এতে সুন্দর একটা ইন্টারফেইস আছে। প্রথমে একটা অ্যাকাউন্ট খুলে নিন আপনার জন্য। তারপর মডেলিং করা শুরু করে দিন

চিত্র ২

 

SWISS MODELএ কাজ করার জন্য কিছু ছবি আর নির্দেশনা দেয়া হল। উপরের লিঙ্কটি অনুসরণ করলে আপনি চিত্র১ এর মতো কিছু একটা দেখতে পারবেন। এখন, MyWorkSpace এ ক্লিক করুন। এবার ছবি২ দেখুন যেখানে আমার একটা অ্যাকাউন্ট আছে তা দেখতেই পারছেন। আপনিও একটা খুলে ফেলুন। এবার আবার ছবি১ এ চলে আসুন। হাতের বামে অনেকগুলো অপশন দেখতে পারছেন। Automated mode এ যান। তারপর ছবি৩ দেখুন।

চিত্র ৩

 

আমি এখানে আমার ইমেইল দিয়ে দিলাম। আমি যেই sequence নিয়ে কাজ করবো তা দিয়ে দিলাম। আর আমাকে একটা template sequence ঠিক করে দিতে হবে। এই template sequence টি হবে alignment এ যার সাথে সবচেয়ে বেশি মিলে গিয়েছিলো তার। এখন তাকে মডেলিং করে দেয়ার নির্দেশ দিন। তারপর আপনার মেইল খুলে দেখুন।

চিত্র – ৪

 

আমার যেমন একটি মেইল এসেছে, আপনিও ছবি৪ এর মতো একটা মেইল পাবেন। তবে কিছুটা সময় একটু অপেক্ষা করতে হবে। এবার লিঙ্ক এ ক্লিক করলেই চলে যাবেন ছবি৫ এর মতো কোন একটা পেজে। এখন আপনি চাইলে পুরো পেজটা PDF হিসেবে সেভ করে রাখতে পারেন। আর তাছাড়া PDB ফাইলটা তো অবশ্যই রাখবেন। পরিসংখ্যানগুলো দেখার এবং বোঝার চেষ্টা করুন।

চিত্র ৫

চিত্র

আর দ্বিতীয় লিঙ্ক টি হল I-TASSER এর। এই সাইট এর রেটিং অনেক বেশি। এখানে আপনাকে মডেলিং করতে গেলে একটা একাডেমিক ইমেইল আইডি থাকা লাগবে। চিন্তায় পড়ে গেলেন! আমার ও কিন্তু একাডেমিক ইমেইল আইডি নেই। তারপরও কিন্তু আমি কাজ করতে পারি। এখন আপনাদেরকে চুরি বিদ্যাটা শিখাবো! আপনি যদি fast mail এ একটা ইমেইল আইডি খুলেন এবং তা একাডেমিক ইমেইল আইডি এর জায়গায় ব্যবহার করেন, তাহলে I-TASSER আপনাকে ধরতে পারবে না। নিচের লিঙ্কটি তে গিয়ে fast mail এ একটা ইমেইল আইডি খুলে ফেলুন। কাজ শেষ!

https://www.fastmail.fm/

মডেলিং করার দ্বিতীয় উপায় টা হল কোড লিখে লিখে। এখানে আপনার কোন একটা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ জানার দরকার হবে। এই ক্ষেত্রে আমি পাইথন শিখার জন্য সবাইকে আহ্বান জানাবো। কেন পাইথন এর কথা বললাম তা জানার জন্য আরও একটা লিঙ্ক দেয়া হল নিচে

http://boscoh.com/protein/bashing-uniprot-into-submission

নিচের লিঙ্কটিতে গেলে পাইথনে বহুল ব্যাবহৃত বিস্কিট নামে একটা লাইব্রেরি পাওয়া যাবে। 

http://biskit.pasteur.fr/

 

অনেক কিছুই জানা হয়ে গেলো। এই বার একটা টুলস এর নাম বলি, যা কিনা এই ধরনের ত্রিমাত্রিক জিনিসগুলো দেখতে এবং বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করবে। টুলস এর নাম “পাইমল”। এটি ও পাইথনে লেখা। এমন কাজ করে আর ও একটি টুলস আছে, নাম “জেমল”। এটি জাভা (JAVA) তে লেখা। নিচের লিঙ্ক থেকে পাইমল ডাউনলোড করে নিন আপনার মেশিনে।

http://www.pymol.org/

এবার পাইমল নিয়ে খেলাধূলা শুরু করে দিন। খেলার কথা যেমন আসলোই, তাহলে একটা গেম এর নাম বলি যাতে কিনা বায়োলজির বিভিন্ন ত্রিমাত্রিক গঠন নিয়ে খেলা করা যায়। নাম Fold It. নিচের লিঙ্ক থেকে নামিয়ে খেলা শুরু করে দিন।

http://fold.it/portal/

আর structural biology নিয়ে টুকটাক ব্লগ পড়তে করতে চাইলে নিচের সাইটটি তে ঘুরাঘুরি করতে পারেন। উনার নাম Boscoh. উনি অনেকের কাছেই ঈর্ষার পাত্র! কারনটা উনার সাইটে ঘুরাঘুরি করলেই ধরতে পারবেন।

http://boscoh.com/books/best-posts-of-this-blog

শিক্ষকের পরিচয়

আমি আরিফ আশরাফ অপু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রানরসায়ন এবং অনুপ্রান বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। Bio-Bio-1 এর সাথে প্রায় এক বছর ধরে পথ চলা। ভালোবাসি Genetics এবং Mathematics নিয়ে সময় কাটাতে। আর দুটি বড় project এ ছোটখাটো মানুষ হিসেবে contribute করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

Comments

comments

About the author

বায়ো-বায়ো-১ রিসার্চ ফাউন্ডেশন

বায়ো-বায়ো-১ এর যাত্রা শুরু ২০০৮ সালের শেষের দিকে কয়েকজন বায়োইনফরমেটিকস উৎসাহী নিয়ে। জীববিজ্ঞান, কম্পিউটারবিদ্যা, গণিত সহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী এবং কর্মজীবিদের মাঝে পাঠচক্রের মাধ্যমে বায়োইনফরমেটিকস শেখা, চর্চা এবং সত্যিকারের কাজ করা বায়ো-বায়ো-১ এর লক্ষ্য। বায়োইনফরমেটিকসের জ্ঞান ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ২০১২ সালের শুরু থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুপ্রাণ ও প্রাণরসায়ন বিভাগে প্রতি সপ্তাহেই একটি উন্মুক্ত আলোচনা ও প্রশিক্ষণ সভা বসে বায়ো-বায়ো-১ এর আয়োজনে। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুপ্রাণ ও প্রাণরসায়ন বিভাগ এবং অনুজীববিজ্ঞান বিভাগের সাথে আমাদের সহযোগী গবেষণা প্রকল্প চলছে। আমাদের উইকি ঠিকানা । যোগ দিন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে

Leave a Reply