এখানে কোর্সে নিবন্ধন করুন
কোর্স পরিচিতি দেখুন
অর্থের সময়মূল্য:
শিক্ষড ডট কমের ফাইন্যান্স ১০১: অর্থবিজ্ঞান পরিচিতি কোর্সের ৫ম ক্লাসে আপনাদের সবাইকে স্বাগত। এবারের লেকচারটি প্রকাশ করতে অনেক দেরি হয়ে গেল বলে আপনাদের সবার কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী । নানা ব্যক্তিগত কাজ এবং ঝামেলার ফাঁকে সময় করে উঠতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল। তবে খুশি এই জন্য যে আবার আপনাদের সামনে একটি নতুন বিষয়ের ওপর আলোচনা নিয়ে হাজির হতে পেরেছি। তবে চলুন আজকে আলোচ্য বিষয় অর্থের সময়মূল্য নিয়ে কিছু ধারনা নেই।
“নগদ যা পাও হাত পেতে নাও, বাকির খাতায় শূন্য থাক; দূরের বাদ্য লাভ কী শুনে – মাঝখানে যে বেজায় ফাঁক”
ওপরের এই কথাটা আমরা সবাই মানি। তাহলে বলুনতো, যদি আপনাকে এখন বলা হয় দুটা অপশন থেকে আপনাকে যে কোন একটা বেছে নিতে হবে:
১. আপনাকের আজকে ১০০০ টাকা দেয়া হবে, আর
২. আপনাকের এক বছর পর ১০০০ টাকা দেয়া হবে। তবে আপনি কোনটা বেছে নেবেন?
অবশ্যই প্রথমটা, তাই না? কিন্তু কেন আমরা কেন দ্বিতীয়টা না বেছে প্রথমটা নিচ্ছি? এর কারণ খুব সোজা – এখানে সময় একটা বড় ভূমিকা পালন করছে। সময় আমাদের প্রাপ্তির খাতায় কি পরিবর্তণ করছে তা হিসাব কষে বের করার আগেই আমরা বুঝতে পারি যে এখানে সময়ের প্রভাব বেশ মূল্যবান, তাই আমরা ভবিষ্যতের (১ বছর পরের) ১০০০ টাকার থেকে বর্তমানের ১০০০ টাকাকে বেশি পছন্দ করছি। অর্থের মূল্যমানের ওপর সময়ের এই ‘বিশেষ’ প্রভাবকেই অর্থের সময়মূল্য বা Time Value of Money বলা হয়।
বর্তমান মূল্য ও ভবিষ্যত মূল্য (Present value & Future value):
এবার চলুন দেখি ভবিষ্যতের ১০০০ টাকা থেকে বর্তমানের ১০০০ টাকার মূল্য কেন এবং কীভাবে বেশি। আমি যদি আজকে ১০০০ টাকা পাই তবে এটাকে এখনই কাজে লাগিয়ে দিতে পারি, তাতে এই ১০০০ টাকা এখন থেকেই আমার জন্য উপার্জন করা শুরু করবে। ধরেন, আমি এই ১০০০ টাকা ব্যাংকে জমা করে রাখলাম। ব্যাংক যদি আমাকে বছরে শতকরা ৮% ইন্টারেস্ট দেয়, তাহলে ১ বছর পর আমার ১০০০ টাকা হবে ১০৮০ টাকা। তাহলে এই ৮০ টাকা (১০৮০ – ১০০০) হলো আমার ১০০০ টাকার সময়মূল্য বা Time Value। পক্ষান্তরে, আমি যদি এক বছর পর ১০০০ টাকা পাই তবে আজকের হিসেবে তার মূল্য দাড়াবে:
১০০০/ ১.০৮ = ৯২৫.৯৩ টাকা
অর্থাৎ, একবছর পরের ১০০০ টাকা বর্তমানের ৯২৫.৯৩ টাকার মূল্যমান সমান। কেন এমনটা হচ্ছে এর উত্তর হল – টাকাটা যদি আমি বর্তমান সময়ে বিনিয়োগ করতে পারতাম তবে এক বছরে এটা থেকে আমার ৮% হারে আয় হতো। এর মানে হলো, বর্তমানে না পেয়ে ১ বছর পরে টাকাটা হাতে পাওয়ায় আমি এখানে ৮% আয়ের সম্ভাবনা হারালাম, ফলশ্রুতিতে আমার টাকার মূল্যমান ৮% হারে কমে যাচ্ছে। এখানে আমরা দুটি মূল্যমান দেখতে পাচ্ছি- বর্তমান মূল্যমান ও ভবিষ্যতের মূল্যমান। এ দুটিকেই আমরা ফাইন্যান্সের ভাষায় বলি বর্তমান মূল্য (Present value) এবং ভবিষ্যত মূল্য (Future value)। এদের যদি আমরা সংজ্ঞায়িত করি তবে বলা যায় –
বর্তমান মূল্য বা Present value হল কোন বিনিয়োগের বর্তমান মূল্যমান; অর্থাৎ কোন বিনিয়োগ থেকে ভবিষ্যতের আমরা আসল সহ যে পরিমান অর্থ পাব তার বর্তমান দাম বা মূল্য কত। যেমন, ওপরের আলোচনার ১ বছর পরের ১০০০ টাকার বর্তমান মূল্য বা present value হল ৯২৫.৯৩ টাকা।
অন্যদিকে, ভবিষ্যত মূল্য বা Future value হচ্ছে বর্তমানে অর্থ বিনিয়োগ করে আমি একটি নির্দিষ্ট সময় পরে আসল সহ আমরা যত টাকা ফেরত পাব তার পরিমান। আলোচনার শুরুতেই আমরা দেখেছি ৮% হারে ১০০০ টাকার ১ বছর শেষে ভবিষ্যত মূল বা future value হল ১০৮০ টাকা।
ইন্টারেস্ট রেট ও ডিসকাউন্ট রেট:
Time Value of Money তে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ইন্টারেস্ট রেট বা ডিসকাউন্ট রেট। এখানে ইন্টারেস্ট রেট বা ডিসকাউন্ট রেট মূলত: একই জিনিষ, কোন বিনিয়োগ থেকে আমাদের প্রাপ্তির হার কত সেটাকেই আমরা ইন্টারেস্ট রেট বা ডিসকাউন্ট রেট বলি এবং এটাকে শতকরা হারে প্রকাশ করা হয়। সাধারনত কোন বিনিয়োগ থেকে ভবিষ্যতে কি পরিমান ফেরত পাব তা হিসাব করতে আমরা যে রেট বা হার ব্যবহার করি তাকে ইন্টারেস্ট রেট এবং ভবিষ্যতের কোন আয় বা প্রাপ্তির বর্তমান মূল্য কত সেটা বের করতে যে রেট বা হার ব্যবহার করি তাকে ডিসকাউন্ট রেট বলা হয়।
অর্থাৎ, আমরা যখন কোন বিনিয়োগের future value বের করতে যাই তখন ইন্টারেস্ট রেট দিয়ে সেটাকে গুণ করি এবং যখন কোন ভবিষ্যত প্রাপ্তির present value বের করতে যাই তখন ডিসকাউন্ট রেট দিয়ে তাকে ভাগ করি। এখন কথা হল: আমরা কোনটাকে ইন্টারেস্ট রেট বা ডিসকাউন্ট রেট ধরবো? এর উত্তর খুব সহজ – আমার হতে বিনিয়োগের যে বিকল্প বা অপশনগুলো আছে তার মধ্যে আমার জন্য যেটা সবচাইতে বেশি প্রযোজ্য সেটাকেই ধরতে পারি। ধরাযাক, আমার হতে শুধু মাত্র ব্যাংকে FDR খোলার সুযোগ আছে এবং সেখানে বর্তমান রেট ১২%। তাহলে আমার ইন্টারেস্ট বা ডিসকাউন্ট রেট হবে ১২%।
অর্থাৎ ১০০০ টাকার ১ বছর পরের ভবিষ্যত মূল্য হবে: ১০০০ X ১.১২ = ১১২০ টাকা।
সময়রেখা বা Time line:
অর্থের সময়মূল হিসাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হল সময়রেখা বা Time line। আমরা যখন সময়মূল্য বের করতে যাব তখন এর মাধ্যমের সমস্যাটির একটি দৃশ্যমান ধারণা সময়রেখা থেকে পাওয়া যায় এবং তাতে সমস্যা সমাধান সহজ হয়। নিচে সময়রেখা বা time line এর একটা ধারণা দেয়া হল:
এখানে বর্তমান সময় হল ০, এক বছর বা এক পিরিয়ড পরের সময় হল ১, দুই বছর বা দুই পিডিয়রড পরের সময় হল ২, এভাবেই প্রত্যেক বছর বা পিডিয়ডের জন্য ১ করে বাড়তে থাকবে ।
হিসাবকিতাব:
এবার আমরা কিছু হিসাব দেখবো। অর্থের সময়মূল্য হিসাব করতে গেলে আমরা সচরাচর দুই ধরণের ইন্টারেস্ট/ডিসকাউন্ট রেট ব্যবহার করি, এগুলো হল:
সরল বা Simple Interet:
এখানে ধরে নেয়া হয় আমাদের বিনিয়োগের বিপরীতে প্রতি বছর বা পিরিয়ড অন্তর আমরা যে রিটার্ন বা আয় পাব তা আর পুন:বিনিয়োগ করা হবে না। ধরি আমাদের রেট ১২%; তাহলে এক বছর পর ১০০০ টাকা বিনিয়োগ থেকে মুনাফা হবে:
১০০০ X ০.১২ = ১২০ টাকা [১২% = ১২/১০০ = ০.১২]
আমি যদি ৫ বছরের জন্য বিনিয়োগ করি, তবে মুনাফা হবে:
১০০০ X ০.১২ X ৫ = ৬০০ টাকা
তাহলে আসল সহ মুনাফার পরিমান দাড়াচ্ছে:
১০০০ + (১০০০ X ০.১২ X ৫) = ১৬০০ টাকা
এবার এ দুটোকে যদি সূত্রে ফেলি তবে এমনটা দাড়াবে:
শুধু মুনাফার জন্য: SI = P0(i)(n)
এখানে SI = মুনাফা, P0 = বিনিয়োগের পরিমান, i = ইন্টারেস্ট রেট ও n = বছর বা পিরিয়ডের সংখ্যা
আর আসল সহ মুনাফার জন্য: FV = P0 + [P0(i)(n)], এখানে FV = ভবিষ্যত মূল্য
চত্রুবৃদ্ধি বা Compound Interest:
এতে ধরে নেয়া হয় প্রতি বছর আমরা বিনিয়োগের বিপরিতে আমরা যে পরিমান মুনাফা পাব তা আবার সেই একই রেট এ বিনিয়োগ করে হবে। অর্থাৎ আমরা যে মুনাফা পাব তা ব্যয় না করে একই খাতে মূল বিনিয়োগের সাথে পুন:বিনিয়োগ করা হবে। এখানেও ধরি আমাদের রেট ১২%। কিন্তু আমাদের বছর বা পিডিয়ডের সংখ্যা যদি ১ হয় তবে Simple আর Compound এ কোন পার্থক্য হবে না। তবে একাধির বছর বা পিডিয়ডের ক্ষেত্রে Compound Interest এ আয় বেশি হবে কেননা এখানে আমরা যে মুনাফা পাচ্ছি সেটাও বিনিয়োগ করছি। তাই বিনিয়োগটা যদি ৫ বছরের জন্য হয় তবে ৫ বছর পরের আসল সহ মুনাফা হবে:
১০০০ X (১+০.১২)৫ বা ১০০০ X (১.১২)৫ = ১৭৬২.৩৪ টাকা
এখানে শুধু মুনাফার পরিমান বের করতে হলে মোট থেকে শুরুর বিনিয়োগ বিয়োগ করলেই হবে:
১৭৬২.৩৪ – ১০০০ = ৭৬২.৩৪ টাকা
তাহলে Compound interest এর সূত্র দাড়াচ্ছে:
FV = P0(১+i)n এখানে,
FV = ভবিষ্যত মূল্য, P0 = বিনিয়োগের পরিমান, i = ইন্টারেস্ট রেট ও n = বছর বা পিরিয়ডের সংখ্যা
ভবিষ্যত মূল্য থেকে বর্তমান মূল্য বের করা:
এবার দেখি কোন কিছুর বর্তমান মূল কিভাবে বের করবো। ধরা যাক, কোন একটি বিনিয়োগের ৫ বছর পরের ভবিষ্যত মূল্য ১০০০০ টাকা এবং রেট ১২%।
যদি আমরা Simple Interest এ হিসাব করে, তাহলে এর সূত্র থেকে পাই:
FV = P0 + [P0(i)(n)]
বা, FV = P0 [১+(i)(n)] (কমন নিয়ে)
বা, P0 = FV/[১+(i)(n)]
বা, P0= ১০০০০/[১+(০.১২X৫)] = ৬২৫০ টাকা
এবার আমরা যদি এটাকে Compound Interest এ হিসাব করি, তবে সূত্র থেকে পাই:
FV = P0(১+i)n
বা, P0 = FV/(১+i)n
বা, P0 = ১০০০০/(১+০.১২)৫ = ৫৬৭৪.২৭ টাকা
তাহলে আমরা শিখে গেলাম অর্থের সময়মূল্য বা Time Value of Money কীভাবে হিসাব করতে হবে। এখানে বলে রাখি, হিসাবের এগুলোই কিন্তু শেষ নয়, আরো আছে। তবে মূল জিনিষ এটাই এবং যতটুকু আলোচনা এ পর্বে করেছি সেটুকু বুঝলে পরবর্তি বিষয়গুলো বুঝতে সুবিধা হবে। আশা করছি আপনাদের কাজে আসবে। ধন্যবাদ সবাইকে সাথে থাকার জন্য।