«

»

নভে. 19

প্রোটিনের গাঠনিক জীববিজ্ঞানঃ লেকচার ৩খ- গাঠনিক রসায়ন

[কোর্সের মূল পাতা] [পূর্ববর্তী লেকচার] [নিবন্ধনের লিংক]

 

আজকের লেকচারটি ছোট। প্রোটিনের তৃতীয় এবং চতুর্থ মাত্রার গঠন এবং রামাচন্দ্রন প্লট নিয়ে আরো কিছু আলোচনা করা হয়েছে। লেকচারটি আসতে বেশ কিছুদিন লেগে যাওয়ায় ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

রামাচন্দ্রন প্লট নিয়ে আলোচনাটা লিখিত লেকচারে দেয়া হয়নি। দয়া করে ভিডিওটি দেখে নেবেন।

 

 

যারা ইউটিউব ব্যবহার করতে পারছেন না তাদের জন্য বিকল্প লিংক। 

 

প্রোটিনের গঠনে বন্ধন এবং সম্পর্কসমূহঃ

দ্বিতীয় মাত্রার গঠন থেকে তৃতীয় মাত্রায় পৌঁছাতে বেশ কিছু বন্ধন বা সম্পর্কের সাহায্য নেয় প্রোটিন। সাধারনত ৪ ধরনের বন্ধন বা সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়। এসব বন্ধন শুধু প্রোটিনের মধ্যেই ঘটেনা, বরং প্রোটিনের সঙ্গে কোন যৌগের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও দেখা যায়।

 

 

১। হাইড্রোজন বন্ধনঃ একটি হাইড্রোজেন গ্রহিতা এবং একটি হাইড্রোজেন দাতার মধ্যে হাইড্রোজেন দিয়ে যেই সম্পর্ক বা বন্ধন তৈরি হয় তা হল হাইড্রোজেন বন্ধন। এরা দূর্বল বন্ধন।

২। আয়োনিক বন্ধনঃ দুইটি চার্জড গ্রুপের মধ্যে যেই বন্ধন তাকে আয়োনিক বন্ধন বলে। আয়োনিক বন্ধন হাইড্রোজেন বন্ধনের চেয়ে শক্তিশালী। প্রোটিনের পলিপেপটাইড চেইনের বিভিন্ন সাইড চেইনের মধ্যে আয়োনিক বন্ধন দেখা যায়।

৩। ডাই-সালফাইড বন্ধনঃ আমরা জানি সিস্টিন নামক এমিনো এসিডের মধ্যে সালফার অণূ আছে। দুইটি সিস্টিন এমিনো এসিড সেজন্য কাছাকাছি চলে এলে দুইটি সালফারের মধ্যে ডাই-সালফাইড বন্ধন বা ব্রিজ তৈরি হয়। এই বন্ধন যেমন একই প্রোটিনের মধ্যে হতে পারে তেমনি আরেকটি প্রোটিনের সিস্টিন এর সঙ্গেও গড়ে উঠতে পারে।

৪। হাইড্রোফোবিক সম্পর্কঃ দ্বিতীয় লেকচারে বলেছিলাম কিছু এমিনো এসিড আছে যারা হাইড্রোফোবিক, মানে পানি পছন্দ করেনা। কিন্তু জীবকোষ প্রায় পুরোটাই পানি ভর্তি। সেজন্য হাইড্রোফোবিক এমিনো এসিডগুলো সাইডচেইনগুলি খুব কাছাকাছি চলে এসে একে অপরকে ঢেকে রাখে যেন পানি মাঝখানে আসতে না পারে। একে হাইড্রোফোবিক সম্পর্ক বলে। অনেক চতুর্থ মাত্রার গঠন এরকম সম্পর্ক দিয়ে গড়ে ওঠে।

 

তৃতীয় মাত্রার গঠনঃ

উপরে বর্ণিত সবগুলি বন্ধন বা সম্পর্কই তৃতীয় মাত্রার গঠনে দেখা যায়। কিন্তু সবগুলিই একটা প্রোটিনে অবস্থিত থাকতে হবে এমন কোন কথা নাই। এসব সম্পর্ক প্রোটিনের তৃতীয় মাত্রার গঠনকে স্থায়ীত্ব দেয়। তৃতীয় মাত্রার গঠন হল একটা পলিপেপটাইড চেইনের সবচেয়ে স্থায়ী ত্রিমাত্রিক গঠন। তৃতীয় মাত্রার গঠন যেমন প্রোটিনের নিজের ভেতরের এমিনো এসিডগুলোর মধ্যে সম্পর্কের উপর নির্ভর করে, তেমনি প্রোটিনের আশেপাশের পরিবেশের উপরও নির্ভর করে। শুধুমাত্র একটি বাহ্যিক যৌগ একটি প্রোটিনের কার্ষকরী এলাকা বা একটিভ সাইটে বা অন্যান্য অংশে বসে এর ত্রিমাত্রিক গঠনকে প্রভাবিত করতে পারে। এরকম গঠনের পরিবর্তনের উপর নির্ভর করেই একটি প্রোটিনের কার্যকারীতা পরিবর্তিত হয় বা কোষে কখন কোন কাজ করবে সেটা নির্ধারিত হয়।

 

মায়োগ্লোবিন প্রোটিনের তৃতীয় মাত্রার ত্রিমাত্রিক গঠনঃ

 

তৃতীয় পর্যায়ের গঠনের মধ্যেই আবার কিছু গঠনকে সুনির্দিষ্ট করা যায়। মনে করি একই ধরনের প্রোটিন একইধরনের এরকম সুনর্িদিষ্ট গঠন তৈরি করবে। এসব গঠনের মধ্যে পড়েঃ ফোল্ড, ডোমেইন এবং মোটিফ। এদের মধ্যে মিল দিয়ে ত্রিমাত্রিক পর্যায়ে একটি প্রোটিন আরেকটি প্রোটিনের কত কাছাকাছি বা একটি প্রোটিন কোন পরিবারের অন্তর্গত সেটা বোঝা যায়।  পরের লেকচারে এসব নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হবে।

 

এবছর, অর্থাৎ ২০১২ সালে, জি-প্রোটিনের সঙ্গে এর রিসেপ্টর প্রোটিনের কমপ্লেক্স তৈরির ত্রিমাত্রিক গঠন আবিস্কার করে রসায়নে নোবেল পেয়েছেন বিজ্ঞানী ব্রায়ান কোবিলকা। প্রোটিনের তৃতীয়, চতুর্থ মাত্রার গঠন এবং এদের মধ্যে সম্পর্ক আরেকটু বুঝতে হলে কোবিলকার আবিস্কারের একটা বাংলা অনুবাদ নিচের লিংক দুটি থেকে পড়ে নিতে পারেন।

কোবিলকার আবিস্কার প্রথম পর্ব এবং দ্বিতীয় পর্ব

 

চতুর্থ মাত্রার গঠনঃ

যখন কয়েকটি পলিপেপটাইড চেইন, মানে তৃতীয় মাত্রার একক গঠন তৈরি করা পলিপেপটাইড অণু, একসাথে সম্পর্ক তৈরি করে বড় আকারের প্রোটিনের কমপ্লেক্স তৈরি করে তখন তাকে চতুর্থ মাত্রার গঠন বলে।  এখানে পরিস্কার করা দরকার কখন আমি পলিপেপটাইড চেইন বলছি আর কখন প্রোটিন বলছি। চতুর্থ মাত্রার গঠন যেহেতু কয়েকটি ছোট প্রোটিনের গঠন মিলে হয় সেহেতু ছোট প্রোটিনকে আলাদাভাবে কোন নাম না দিয়ে পলিপেপটাইড চেইন বলা যায়। এসব পলিপেপটাইড চেইনকে আবার চতুর্থ মাত্রার গঠনে সাব-ইউনিট বা প্রোটোমার ও বলে। যেমন, হিমোগ্লোবিনের গঠনে (নিচের ছবি) দুই ধরনের পলিপেপটাইড চেইন বা সাব-ইউনিট (মায়োগ্লোবিনের মত দেখতে সাব-ইউনিট) দুইটি করে মিলে একটি চতুর্থ মাত্রার গঠন তৈরি করে।

 

হিমোগ্লোবিন টেট্রামারঃ একটি চতুর্থ মাত্রার গঠন

 

একই ধরনের অনেকগুলি পলিপেপটাইড চেইন মিলে একটা বড় চতুর্থ মাত্রার গঠন তৈরি করতে পারে, আবার কয়েকধরনের মিলেও পারে। এভাবে ডাইমার (দুইটি সাব-ইউনিট), টেট্রামার (৪টি সাব-ইউনিট) এবং ফিলামেন্ট (অনেকগুলি সাব-ইউনিট) ইত্যাদি চতৃর্থ মাত্রার গঠন গড়ে ওঠে। এমনকি দুইটি ভিন্ন জীবের দুইটি প্রোটিন মিলেও একটি চতুর্থ মাত্রার গঠনের মত সম্পর্ক তৈরি করতে পারে। এই ব্যাপারটা প্রাণীর বা উদ্ভিদের বিভিন্ন রোগের সঙ্গে যুক্ত। যেমন এইডস এর ভাইরাসের বাইরের দিকের প্রোটিন অণু যদি মানুষের কোষের রিসেপ্টরের সঙ্গে সম্পর্ক না তৈরি করতে পারতো তবে আমাদের এই রোগটি হতোই না।

 

প্রোটিনের সঙ্গে প্রোটিনের সম্পর্কঃ

উপরে বর্ণিত প্রায় সবগুলি বন্ধন বা সম্পর্কই একটি প্রোটিনের সঙ্গে আরেকটি প্রোটিনের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করতে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। জীবকোষের ভিতরে এবং বাইরে অসংখ্য কাজ, যেমন এন্টিবডি কর্তৃক জীবাণু চেনা, কোষের বাইরে সিগনাল ভিতরে পৌঁছে দেয়া, ট্রান্সক্রিপশান, ট্রান্সলেশান, কোষের ভিতরে-বাইরে বিভিন্ন বস্তু আদান প্রদান, নড়াচড়া, সালোকসংশ্লেষণ ইত্যাদি সবকিছুতেই প্রোটিনের সঙ্গে প্রোটিনের সম্পর্ক জড়িত। এই সম্পর্ক প্রোটিনের ত্রিমাত্রিক গঠনের মধ্যে সম্পর্ক। আমরা পরবর্তী লেকচার গুলোতে এ নিয়ে কিছুটি বিস্তারিত পড়বো।

 

সংশোধনীঃ ভিডিও লেকচারে প্লেগ জীবাণুর Ypka প্রোটিনের জায়গায় ভুল করে Ypk1 লেখা হয়েছে।

 

আজকের লেকচারে কোন কুইজ নেই।

 

 

Comments

comments

About the author

খান ওসমান

আমি টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের মলিকিউলার জেনেটিক্স এর একজন পিএইচডি ছাত্র। কাজ করছি ম্যালেরিয়া জীবাণুর একধরনের প্রোটিন নিয়ে। আমার কাজ মূলতঃ এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফির মাধ্যমে প্রোটিনের গঠন নির্ণয়, এর সঙ্গে ম্যালেরিয়া রোগের সম্পর্ক নির্ধারণ এবং ঔষধ তৈরিতে সহায়তা করা ইত্যাদি বিষয়ের উপর। স্নাতক এবং মাস্টাসর্ ডিগ্রী অজর্ন করেছি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুজীববিজ্ঞান নিয়ে। আমার বতর্মান ল্যাব এর ওয়েবসাইটে ঢু মেরে দেখতে পারেন এখানে: www.thesgc.org.

Leave a Reply