এখানে কোর্সে নিবন্ধন করুন
কোর্স পরিচিতি দেখুন
ফাইন্যান্সের ক্ষেত্রগুলো: পর্ব-৩ (সরকারি ফাইন্যান্স/অর্থায়ন)
ফাইন্যান্স ১০১: অর্থবিজ্ঞান পরিচিতি কোর্সের চতুর্থ ক্লাসে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।গত ক্লাসে আমরা ব্যবসায়িক বা বিজনেস ফাইন্যান্স সম্পর্কে আলোকপাত করেছিলাম। আজ আমরা জানবো ফাইন্যান্সের ব্যবহারের তৃতীয় ক্ষেত্র সরকারি ফাইন্যান্স বা পাবলিক ফাইন্যান্স সম্পর্কে।
সরকারি ক্ষেত্রে ফাইন্যান্সের ব্যবহার জানার আগে সরকার কী সে সম্পর্কে জেনে রাখা ভাল। সরকার সম্পর্কে আমাদের সবারই বেশি ধারণা আছে। আমরা একটি গণতান্ত্রিক দেশে বাস করি এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ৫ বছর অন্তর অন্তর সরকার পরিচালনার জন্য আমাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করি। আগেই বলেছি যে, আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা (সংসদীয় গণতন্ত্র) প্রচলিত। পৃথিবীর সব দেশেই কিন্তু গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা প্রচলিত নয় – তবে বিভিন্ন ধরণের গণতান্ত্রিক ধারার সরকার ব্যবস্থার প্রচলনই সবচেয়ে বেশি।
সরকার হচ্ছে একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান যার কাজ রাষ্ট্র পরিচালনা এবং সর্বোপরি এর নাগরিকদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানো। একে পৃথিবীর প্রাচীনতম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বলা হয়। তবে সরকার ব্যবস্থাকে পর্যলোচনার জন্য দুটি মূল দশর্ণ রয়েছে যারা ভিন্ন ভাবে সরকার ব্যবস্থাকে দেখে:
১. প্রাকৃতিক বা Organic View:
এই দৃষ্ঠিভংগীতে সমাজকে একটি প্রাকৃতিক ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং সরকার এই প্রাকৃতিক ব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই দৃষ্ঠিভংগীতে সরকার রাষ্ট্র ব্যবস্থার কেন্দ্রে থাকে এবং অর্থনীতি ও রাষ্ট্রের নাগরিকদের যাবতীয় ভালমন্দ দেখার দায়িত্ব থাকে সরকারের ওপর। এই ধরণের রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে আমরা সমাজতন্ত্র হিসেবেও জানি।
২. যান্ত্রীক বা Mechanistic View:
এই দৃষ্ঠিভংগীর ধারকেরা সরকারকে সমাজের একটি প্রাকৃতিক অংশ হিসেবে বিবেচনার করেন না। বরং তারা মনে করেন সরকার হলো একটি কৃত্রিম প্রতিষ্ঠান যা রাষ্ট্রের নাগরিকেরা প্রতিষ্ঠা করে যাতে তারা তাদের ব্যক্তিগত লক্ষ্যপূরণ করতে পারে। গণতান্ত্রি দেশসমূহ যেখানে ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি বিদ্যমান (যেমন: যুক্তরাষ্ট্র) সেখানে এ ধরণের মতবাদ অনুসরণ করা হয়।
সরকার সম্পর্কে দৃষ্টিভংগী যাই হোক, সবদেশেই সরকারের নিদিষ্ঠ কিছু কাজ থাকে। সরকারের প্রধান কাজগুলোর মধ্যে পড়ে:
১. স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভৌগলিক অখন্ডতা রক্ষা (সামরিক ব্যবস্থার মাধ্যমে)
২. বৈদেশিক সম্পর্ক বজায় রাখা, যেমন কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা, আন্তজার্তিক/বহুজাতিক/দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদন, বৈদেশিক ঋণ ও সহাযতা সংগ্রহ ইত্যাদি
৩. সম্পদের সুষম বন্টন
৪. আইন-শৃংখলা রক্ষা ও নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধান করা
৫. জনগণের জন্য প্রয়োজনী জনপণ্য (Public Goods) ও সেবার (Public Service) ব্যবস্থা করা, যেমন রাস্তাঘাট নির্মাণ, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা
৬. পরিবেশের সুরক্ষা
৭. শিক্ষা এবং
৮. এসবের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন।
সরকারের কার্যবলী গুলোকে আরো অনেকভাবে শ্রেণীবিভাগ করা সম্ভব, তবে আমাদের জন্য এপর্যন্তই যথেষ্ট। এই যে সরকারের এত এত কাজ, এগুলো করতে সবার আগে চাই অর্থ। আগেই বলেছি, সরকার একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান – সরকারি মালিকানায় অনেক সময় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থাকতে পারে, তবে এদের মূল উদ্দেশ্য কিন্তু ব্যবসায়িক নয়, বরং জনকল্যান। তাই সরকার পরিচালনার বেশিরভাগ অর্থই আসে এর নাগরিকদের কাছ থেকে। আর সরকারি পর্যায়ে এখান থেকেই ফাইন্যান্সের ব্যবহার শুরু হয়।
বাজেট:
একটি সরকারের অর্থবছর শুরু হয় বাজেটের মাধ্যমে। বাজেট শব্দটির সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত তবে অনেক সময়ই আমরা বাজেটের প্রকৃত অর্থ গুলিয়ে ফেলি। ‘বাজেট’ হলো একটি ‘আর্থিক পরিকল্পনা’ বা Financial Plan এবং এর একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। বাজেটে একটি নির্দিষ্ট সময়ের সম্ভাব্য সব ধরনের আয় এবং ব্যয় তালিকাভুক্ত করা হয়। বাজেটর ব্যাপ্তি অনেক: একজন ব্যক্তির একদিনের সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের হিসাবকে ওই দিনের বাজেট বলা যায়, আবার সেটাই যখন এক বছরের জন্য হয় তখন তা বাৎসরিক বাজেট হয়ে দাড়ায়। তেমনি একটি প্রতিষ্ঠানেরও বাজেট থাকতে পারে। এছাড়াও বাজেট কোন নির্দিষ্ট কাজের জন্যও হতে পারে, যেমন বিভিন্ন প্রজেক্ট বা প্রকল্পের জন্য নির্দিষ্ট বাজেট থাকে। এবার আসি সরকারের বাজেট প্রসংগে। সরকারি পযার্য়ে বাজেট হলো একটি অর্থবছরের পরিকল্পিত যাবতীয় আয় ও ব্যয়ের হিসাব। আমাদের দেশে অর্থবছর ১লা জুলাই থেকে ৩০শে জুন পর্যন্ত গণনা করা হয়।
বাজেটের মাধ্যমে ঠিক করা হয় একটি নির্দিষ্ট বছরে সরকার কোন কোন খাতে কী পরিমান অর্থ ব্যয় করবে এবং এ ব্যয়গুলো মেটাতা সরকার কোন কোন উৎস থেকে কী পরিমানে অর্থ সংগ্রহ করবে। তবে বাজেট শুধুই সরকারি আয়-ব্যয়ের হিসাব নয়, এটি সরকারের একটি অর্থনৈতিক হাতিয়ারও বটে (Financial Tool)। অর্থনীতিকে বাজেট সরাসরি প্রভাবিত করে এবং সরকার এর মাধ্যমে অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করতে পারে। যেমন: বাজেটের মাধ্যমে সরকার সমাজের একটি অংশ থেকে অন্য অংশে আয় স্থানান্তর করতে পারে (সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প, ভর্তুকি ইত্যাদির মাধ্যমে), প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার দাম কমাতে এবং কম প্রয়োজনীয়/অপ্রযোজনীয় জিনিষের দাম বাড়াতে পারে (করের মাধমে), নির্দিষ্ট খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে পার (ট্যাক্স হলিডে, নগদ সহায়তা ইত্যাদির মাধ্যমে) এবং এরকম আরো অনেক কিছু।
বাজেট অর্থায়ণের খাতসমূহ:
শুরুতেই একটি খটকা লাগতে পারে; বাজেটের এক পাশ যদি হয় ব্যয়ের তবে অন্য পাশটি আয় হওয়া উচিৎ – তাই না! কিন্তু ব্যাপারটা আসলে তেমন নয়। সরকারের এক বছরের ব্যয়ের পুরোটার সংস্থান কিন্তু আয় থেকে আসে না – একটা বড় অংশ আসে আয় বর্হিভূত বিভিন্ন খাত থেকে। নিচে আমরা এ সম্পর্কে কিছুটা আলাপ করবো।
কর:
সরকারের আয়ের বড় একটা অংশ আসে কর থেকে – সেটা প্রত্যক্ষ কর (Direct Tax) বা পরোক্ষ কর (Indirect Tax) দুইই হতে পারে। প্রথমে একটু বলে রাখি কর কী? কর হল জনগণের আয়ের একটা অংশ যেটা একটি নিদির্ষ্ট স্থানের জনগণ সেই এলাকার সরকারকে প্রদান করে – সে সমস্ত সরকারি পণ্য বা সেবার জন্য (ইংরেজিতে Public Goods) যা ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় সংস্থান করা সম্ভব হয়না। তাহলে সেসব পাবলিক গুডস বা সরকারি পণ্য বা সেবা কোনগুলো? এসবের মধ্যে রয়েছে: সার্বভৌমত্ব রক্ষা (সেনাবাহিনীর মাধ্যমে), রাস্তাঘাট, সেতু ও এ ধরণের অন্যান্য অবকাঠামো, আইনশৃংখলা রক্ষা এবং সম্পদের ও সামাজিক নিরাপত্তা বিধান, সরকারি স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষা (বিশেষত: অনুন্নত ও উন্নয়ণশীল দেশগুলোর জন্য), আইনপ্রনয়ন, পরিবেশের সুরক্ষা ইত্যাদি আরও বহু কিছু্। বোঝাই যাচ্ছে সচরাচর এ ধরণের পণ্য বা সেবা ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রদান করা সম্ভব হয় না – অথচ এসবের গুরুত্ব একটি দেশের জন্য অপরিসীম। তাই জনগণকে এসবের জন্য সরকারের মুখাপেক্ষী হতে হয়। এবং যেহেতু সরকার কোন ব্যবসায়িক বা লাভজনক প্রতিষ্ঠান নয়, তাই এর ব্যয় নির্বাহের ভারও জনগণের কাঁধে – জনগণের আয়ের একটা অংশ দিয়েই সরকার পরিচালিত হয়।
এবার একটু জানি কোনটা প্রত্যক্ষ কর আর কোনটা পরোক্ষ কর। সোজা কথায় প্রত্যক্ষ কর হলো সেই সব কর যা আমরা সরাসরি সরকারকে প্রদান করি এবং যার জন্য কোন ধরণের লেনদেন বা এরকম কিছুর দরকার হয় না। প্রত্যক্ষ করের সবচেয়ে সহজ উদাহরণ হল আয়কর। এছাড়াও প্রত্যক্ষ করের মধ্যে পড়ে সম্পদের কর, হোল্ডিং ট্যাক্স, ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স ইত্যাদি। অন্যদিকে পরোক্ষ কর হল সেসব কর যা আমরা সরাসরি সরকারকে প্রদান করি না, – প্রত্যক্ষ কর অন্যের হাতঘুরে সরকারের কোষাগারে জমা হয়। যেমন: মূল্য সংযোজন কর বা VAT, শুল্ক ও সম্পূরক শুল্ক (আমদানি/রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) এবং এ ধরণের যতকিছু আছে।
সরকারি অর্থায়ণের অন্যান্য খাত সমূহ:
বিভিন্ন ধরণের ফি, মুনাফা, লভ্যাংশ ইত্যাদি:
আমরা সরকারি বিভিন্ন সেবা পেতে অনেক সময় নানা ধরণের ফি, লাইসেন্স ফি, রেজিস্ট্রেশন খরচ ইত্যাদি প্রদান করে থাকি। এসব সরকারের আয়ের একটা বড় উৎস। এছাড়া সরকার নিজস্ব মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান থেকে মুনাফা পেয়ে থাকে, যেসব কোম্পানিতে সরকারের অংশীদারি আছে সেসব থেকে লভ্যাংশ পায়। এ ধরণের আরও বহু উৎস আছে সরকারের আয়ের।
বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণ:
বাজেটে সরকারি ব্যয়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ আসে বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণ থেকে। বৈদেশিক সাহায্য আর ফেরত দিতে হয় না, তবে তাতে অনেক সময় বিভিন্ন শর্তযুক্ত থাকে যা অনেক সময় একটি দেশের জন্য সুবিধাজনক নাও হতে পারে। তবে একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত বৈদেশিক সাহায্য অর্থনীতির জন্য ভাল। বৈদেশিক ঋণ কিন্তু ফেরত দিতে হয় – এতে অনেক সময় বিভিন্ন শর্তযুক্ত থাকে যা অসুবিধার কারণ হতে পারে। তবে বুঝেশুনে ব্যবহার করতে পারলে এগুলো কাজে লাগে। বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্যের এটা বড় অসুবিধা হল এসবের প্রাপ্তি নির্ভর করে অন্যের ওপর।
অভ্যন্তরীণ অর্থসংস্থান:
সরকারের অথায়র্ণের আরো একটি উৎস হল অভ্যন্তরীণ অর্থসংস্থান। এর মধ্যে একটি উল্ল্যেখযোগ্য অংশ সরকার সংগ্রহ করে বিভিন্ন ট্রেজারি বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে। এদের একটি বহুল প্রচলিত উদাহরণ হল- সঞ্চয়পত্র, প্রাইজবন্ড ইত্যাদি। এছাড়া সরকার আর্থিক বাজার বা বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেও ঋণ গ্রহণের মাধ্যমের ব্যয় মেটাতে অর্থসংস্থান করে থাকে এবং এসবের ব্যবহার কিছুটা সীমা পর্যন্ত ভাল। তবে এসব উৎসের যথেচ্ছ ব্যবহার অর্থনীতির জন্য অমঙ্গল বয়ে আনে।
বাজেট ঘাটতি:
বাজেট ঘাটতি এমন একটা ব্যাপার যা আমরা বাজেটের সময় হলেই অহরহ শুনি। যেমনটা শোনায় – বাজেট ঘাটতি হল সরকারের কোন বছরের পরিকল্পিত ব্যয়ের সেই অংশ যেটার জন্য কীভাবে অর্থসংস্থান হবে তা বাজেট পাশের সময় ঠিক করা হয়নি। অর্থাৎ যখন বাজেট দেয়া হল তখন সরকার যতটা পরিমান ব্যয় করবে বলে ঠিক করেছে তা থেকে আয় ও অন্যান্য উৎস থেকে অর্থসংস্থানের পরিমান কম। বাজেট ঘাটতি কিন্তু কিছুটা পরিমানে ভাল – শুনতে একটু অদ্ভুত শোনাতে পারে। তবে বাজেট ঘাটতিকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায় – যতক্ষণ বাজেট ঘাটতি আছে তার মানে হল আমাদের উন্নয়নের আরও সুযোগ রয়েছে, অর্থাৎ আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি পজেটিভ ধারায় আছে।
এবার আসি বাজেট ঘাটতি সরকার কীভাবে মেটায়। ১. বৈদেশিক সাহায্য বা ঋণ ২. অভ্যন্তরীণ উৎস বা আর্থিক বাজার থেকে ধার নিয়ে এবং ৩. টাকা ছাপিয়ে!!!
ঘাটতি বাজেট বৈদেশিক সাহায্য বা ঋণ এর মাধ্যমে মেটানোটাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাল (যদি পাওয়া যায়)। তা না হলে অভ্যন্তরীণ উৎস বা আর্থিক বাজার থেকে সরকার ধার নিয়ে সেটা মেটাতে পারে। আর সরকার আর অন্য কোন উৎস থেকেই যদি অর্থের ব্যবস্থা না করতে পারে তবে টাকা ছাপিয়ে সে ব্যয় মেটায়। মজার ব্যাপার হল, শেষ দুটি উৎস থেকে যদি সরকার বড় ধরণের বাজেট ঘাটতি মেটাতে যায় তবে সেটা ঘুরেফিরে জনগণের ঘাড়েই পড়ে। একটু ব্যাখ্যা করা যাক: ধরি সরকার বাজেট ঘাটতি মেটাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে অতিরিক্ত পরিমানে ধার নিচ্ছে। এর ফলে আর্থিক বাজারে তারল্য ঘাটতে দেখা দেয় যাকে সোজাকথায় বলা যায় টাকার সংকট। এতে ব্যাংকগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্যে তেমন একটা অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ কমে যায়। ফলে ইন্টারেস্ট রেট বেড়ে যায়, উৎপাদন খরচ বাড়ে এবং উৎপাদন কমে। স্বাভাবিকভাবেই এতে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। আর এভাবেই জনগণ বর্ধিত দ্রব্যমূল্যের মাধ্যমের সরকারের ঘাটতি বাজেটের অর্থায়ণ করে। আর যদি সরকার টাকা ছাপিয়ে ব্যয় মেটানোর সিদ্ধান্ত নেয় তবে তো আরও সোজা হিসাব! অপরিকল্পিত টাকা ছাপানোর ফলে মার্কেটে হঠাৎ করে টাকার যোগান বেড়ে যায়। অর্থাৎ বাজারে যতটা পণ্য বা সেবা আছে তার থেকে টাকার পরিমান বেশি, এতে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। এবং এভাবেই বর্ধিত দ্রব্যমূল্য প্রদানের মাধ্যমে জনগণের কাছ থেকে চলে গিয়ে সে টাকা সরকারের অতিরিক্ত ব্যয়ের সংস্থান করে।
বাজেটের ব্যয়ের খাত সমূহ:
এবার আসি বাজেটের ব্যয়ের খাত সমূহের আলোচনায়। এটাকে খুব সংক্ষেপে আলোচনা করবো কারণে এর প্রতিটা খাতকে আলোচনায় আনতে গেলে তা কলেবরে অনেক বড় হযে যাবে। তাই সংক্ষেপে বলতে গেলে – বাজেটের ব্যয়ের খাত সমূহকে দুটি প্রধান অংশে ভাগ করা যায়: ১. রাজস্ব ব্যয় বা অনুন্নয়ন ব্যয় এবং ২. উন্নয়ন ব্যয়।
রাজস্ব ব্যয় বা অনুন্নয়ন ব্যয়:
রাজস্ব ব্যয় বললে ব্যাপারটা বুঝতে প্রথমে একটু খটকা লাগতে পারে – এটা আবার কী? রাজস্বা আবার ব্যয় হয় কিভাবে? তবে যদি বলি অনুন্নয়ন ব্যয় – তবে সহজেই বোঝা যায় যে এ ব্যয়গুলো কী ধরণের। প্রশাসনের কর্মকর্তা কমচারীদের বেতনভাতা প্রদান অনুন্নয়ন ব্যয়ের একটা বড় উদাহরণ। এছাড়াও সরকার চালাতে আরও নানা ধরণের ব্যয় হয়, যেমন: রক্ষনাবেক্ষন ব্যয়, যাতায়াত ব্যয়, মুদ্রন ব্যয়, বিদ্যুত-পানি-গ্যাসের ব্যয়, বিভিন্ন ধারণের ভর্তুকী ইত্যাদি। সাধারণত সরকারের যে সমস্ত ব্যয়ের জন্য কোন নিদিষ্ট সময়সীমা ঠিক করা নেই যে সেগুলো কতদিন চলবে এবং যেসব ব্যয় চলমান সেগুলোকে অনুন্নয়ন ব্যয়ের অর্ন্তগত করা হয়।
উন্নয়ন ব্যয়:
সরকার প্রতিবছর বিভিন্ন ধরণের উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকে, এসব ব্যয়কে উন্নয়ন খাতের অন্তর্গত করা হয়। এর মধ্যে আছে নতুন রাস্তাঘাট নির্মাণ, ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ, নতুন বাঁধ নির্মাণ এবং কোন এলাকা বা জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় – নতুন হাসপাতাল নির্মাণ ইত্যাদি এবং এ ধরণের আরো বহুকিছু। এখানে আমাদের দেশের বাজেটের একটা বৈশিষ্ট্যের কথা বলে রাখি, – প্রতিবছর আমাদের বাজেটের উন্নয়ণ ব্যয়ের একটা বড় অংশ গিয়ে পড়ে ঘাটতি বাজেটের মধ্যে, অর্থাৎ উন্নয়নমূলক কাজগুলোর ব্যয় কীভাবে নির্বাহ করা হবে তা আগে থেকে ঠিক করা থাকে না। এর মানে হলো: যদি টাকার ব্যবস্থা হয় তবে এসব কাজ করা হবে আর যদি টাকার ব্যবস্থা না করা যায় তবে সেগুলো অবাস্তবায়িতই থেকে যাবে। ফলে আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো অনেকাংশেই ‘পরিকল্পনামাফিক’ হয় না।
** বেশ অনেকদিন আগে এই লেকচারের প্রথম অংশটি প্রকাশ করেছিলাম। এর পর নানা ব্যস্ততায় পুরোটা শেষ করতে অনেক দিন সময় লেগে গেল। এ জন্য সবার কাছে দু:খ প্রকাশ করছি। আগ্রহের সাথে সাথে থাকার জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।