কোর্সের প্রাথমিক কথা জানতে চাইলে এখানে যান।
নিয়মিত আপডেট পেতে এবং আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে নিবন্ধন করুন। নিবন্ধনের লিঙ্ক।
প্রথম লেকচার মানে প্রথম ভগর ভগর দুইটি ভিডিও দিয়ে বুঝিয়েছি। প্রথম ভিডিওতে আছে ঢালের ধারণা। আর দ্বিতীয় ভিডিওতে আছে ঢালের ধারণা থাকলে কিভাবে গ্রাফ দেখেই ডিফারেন্সিয়েট করে ফেলা যায় সেটা।
প্রথম ভিডিও:
দ্বিতীয় ভিডিও:
ঢাল (slope):
ঢালের কথা বললেই আমার সামনে ভেসে ওঠে এইচএসসি-তে পড়ার সময়ে মুখস্থ করা এক ভয়ানক সংজ্ঞার কথা- একটি সরলরেখা এক্স অক্ষের ধনাত্মক দিকের সঙ্গে যেই কোণ উৎপন্ন করে সেই কোণের ট্যানজেন্টের মানকে ঐ সরলরেখার ঢাল বলে।
কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, এটা হলো ঢালের সেই সংজ্ঞা যেই সংজ্ঞা বললে ঢাল সম্পর্কে কিচ্ছু বোঝা যায় না! আমি তাই একটু নিজের মতো করে বলি। ‘দুই ধার উঁচু তার ঢালু তার পাড়ি’ এখানে ঢালু বললে যেমন একটা হেলে পড়া চেহারা মাথায় আসে, ঢাল শব্দটার মধ্যেও তেমন একটা ব্যাপার আছে। ঢাল ব্যাপারটা দিয়ে আসলে বোঝায় একটা সরলরেখা কতটা খাড়া ভাবে উপরের দিকে উঠে গেছে। যেমনঃ এখানে এক নম্বর ছবিতে সরলরেখাটার যে ঢাল সেটা দুই নম্বর ছবির রেখার ঢালের চেয়ে বেশি।
কিন্তু এমনটাই বা কেন? এভাবে উপরে উঠে যাওয়াটা কী বোঝায় ? সরলরেখা কি সবসময় উপরের দিকেই উঠে যায়, নিচের দিকে নামে না? এমন কিছু প্রশ্ন আমাদের মাথায় ঘুরঘুর করতেই পারে। তাই আরও একটু সহজ করে ব্যাখ্যা করি।
চৌধুরি সাহেব তার মৃত্যুশয্যায় তার পাঁচ ছেলে আবুল, বাবুল, কাবুল, ডাবুল এবং ইবুলকে ডেকে বললেন- বাবারা আমি তো গেলাম। আমার যে টাকা ছিল আমি তোদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দিয়ে গেলাম।
পরে দেখা গেল সবাই ৪০ হাজার করে টাকা পেয়েছে। এরপর প্রতি দুই বছর পরপর দেখা হলো কার কাছে কত টাকা আছে। কেউ উচ্ছৃঙ্খল হয়ে বাপের টাকা উড়িয়েছে, কেউ ব্যবসা করে বাড়িয়েছে, কারও অবস্থা শুরুতেও যা শেষেও তা। সেই হিসেবটাই আমি নিচের ছকে দেখাচ্ছি। এখানে (২,৬০) এর মানে হচ্ছে বাবার মৃত্যুর ২ বছর পর আছে ৬০ হাজার টাকা। তাহলে শুরুতে সবার অবস্থা ছিল (০,৪০) কারণ বাবার মৃত্যুর ০ বছর পরে মানে মৃত্যুর সময়ে সবার কাছে ছিল ৪০ হাজার টাকা। এবার দুই বছর পরপর হিসেবটা দেখা যাক
মৃত্যুর সময় | দুই বছর পর | চার বছর পর | ছয় বছর পর | |
আবুল (A) | (০,৪০) | (২,৬০) | (৪,৮০) | (৬,১০০) |
বাবুল (B) | (০,৪০) | (২,৩০) | (৪,২০) | (৬,১০) |
কাবুল (C) | (০,৪০) | (২,৪০) | (৪,৪০) | (৬,৪০) |
ডাবুল (D) | (০,৪০) | (২,৮০) | (৪,১২০) | (৬,১৬০) |
ইবুল (E) | (০,৪০) | (২,২০) | (৪,০০) | (৬,-২০) |
প্রথমে আমরা আবুল, বাবুল আর কাবুল এই তিনজনের হিসাবের দিকে তাকাই।
আবুল ভালো ছেলে। বাবার টাকা ধীরে ধীরে বাড়িয়েছে। প্রতি দুই বছরে সে ২০ হাজার টাকা করে বাড়িয়েছে। তার লক্ষণ ভালো। সে ‘উন্নতি’ করছে।
বাবুলের লক্ষণ কিন্তু সুবিধার না! সে টাকা ধরে রাখতে পারে নি। ধীরে ধীরে তার টাকা কমেছে। প্রতি দুই বছরে তার টাকা ১০ হাজার করে কমে গেছে। তার ‘অবনতি’ হচ্ছে।
কাবুলের লক্ষণ ভালোও না, খারাপও না- তার টাকা বাড়েও নি, কমেও নি। যা ছিল তাই রয়ে গেছে। তার উন্নতিও হয় নি অবনতিও হয় নি।
এই যে আমরা যখন বারবার বলছি ‘লক্ষণ ভালো , লক্ষণ সুবিধার না’ আমরা আসলে ঢালের কথাই বলছি। লক্ষণ ভালো মানেই হলো ঢাল ভালো, ঢাল ধনাত্মক (positive slope)। লক্ষণ খারাপ মানে ঢাল খারাপ, ঢাল ঋণাত্মক (negative slope)। । লক্ষণ খারাপও না, ভালোও না মানে হলো ঢাল শূন্য।
আবুলের ক্ষেত্রে আমরা দেখি, সময় এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তার টাকার পরিমাণ বাড়ছে। এভাবে একটা চলকের মান বেড়ে গেলে যদি অন্য চলকের মানও বেড়ে যায় তখন আমরা বলি ঢাল ধনাত্মক। একটা চলকের মান কমলে অন্যটা যদি কমে সেটাও কিন্তু ধনাত্মক। অর্থাৎ ধনাত্মক ঢাল হলে পরিবর্তনটা একসাথে হয় – বাড়লে বাড়ে, কমলে কমে।
বাবুলের ক্ষেত্রে , সময় এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তার টাকার পরিমাণ কমছে। এভাবে একটা চলকের মান বেড়ে গেলে যদি অন্য চলকের মান কমে যায় তখন আমরা বলি ঢাল ঋণাত্মক। এক্ষেত্রে পরিবর্তন হয় উলটো পথে- বাড়লে কমে, কমলে বাড়ে।
এখন বিন্দুগুলো বসিয়ে বসিয়ে আমরা যদি একটা গ্রাফ আঁকি কেমন দেখাবে, দেখা যাক-
একটু তাকালেই দেখা যায় ডানদিকে গেলে আবুলের গ্রাফটা ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। আমরা বলি আবুলের উন্নতি হচ্ছে। বাংলার এই উন্নতি শব্দটা আসলে খুব সুন্দর আর ‘গাণিতিক’, এটা এসেছে উদ (উৎ) +নতি থেকে। নতি মানেই হলো নত হয়ে থাকা, এটা ঢালেরই আরেক নাম। উদ মানে উপরের দিকে। উন্নতি মানেই উপরের দিকে ওঠা। এ রকম পৃথিবীতে যত গ্রাফ উপরের দিকে উঠে যায়, তাদের সবার ঢাল ধনাত্মক।
আবার বাবুলের গ্রাফের দিকে তাকালে আমরা দেখি সেটা ধীরে ধীরে নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। বাবুলের ‘অবনতি’ হচ্ছে। অবনতি মানেই নিচে নেমে যাওয়া। এ রকম পৃথিবীতে যত গ্রাফ নিচে নেমে যায় তাদের সবার ঢাল ঋণাত্মক। কাবুলের গ্রাফটা মজার। বাবা যে টাকা দিয়েছিল, সে সেই টাকা বাড়াতেও পারে নি, কমাতেও পারে নি। ৬ বছর পরেও সেই আগের ৪০ হাজার টাকাই রয়ে গেছে। দেখলেই বোঝা যায়, এই গ্রাফটা ঢালু না, একেবারে সমান। এটা উপরেও ওঠে না, নিচেও নামে না। তাই এটার ঢাল নেই অর্থাৎ এর ঢাল শূন্য।
এখন আমরা আবুল আর ডাবুলের দিকে একবার তাকাই।
মৃত্যুর সময় | দুই বছর পর | চার বছর পর | ছয় বছর পর | |
আবুল | (০,৪০) | (২,৬০) | (৪,৮০) | (৬,১০০) |
ডাবুল | (০,৪০) | (২,৮০) | (৪,১২০) | (৬,১৬০) |
আবুল যেমন ভালো ছেলে, ডাবুলও কিন্তু ভালো। দুই জনই উন্নতি করছে। তাহলে কে বেশি ভালো? কে বেশি দ্রুত উন্নতি করেছে? ৬ বছরে আবুল পৌঁছেছে ১০০ হাজারে অর্থাৎ এক লাখ টাকায় আর ডাবুল পৌঁছেছে ১ লাখ ৬০ হাজারে। তার মানে ডাবুল বেশি দ্রুত উন্নতি করেছে। এখন ছবিতে দেখি।
ছবিতে আবুলের গ্রাফ থেকে ডাবুলের গ্রাফ বেশি খাড়া হয়ে উপরে উঠে গেছে। এটার মানেই হলো ডাবুলের উন্নতির গতি আবুলের থেকে বেশি আর এটাকেই গাণিতিকভাবে বলে ডাবুলের ঢাল আবুলের থেকে বেশি।
অন্যদিকে আমরা যদি বাবুল এবং ইবুলের দিকে তাকাই তখন দেখা যাবে এক কষ্টের উপাখ্যান।
মৃত্যুর সময় | দুই বছর পর | চার বছর পর | ছয় বছর পর | |
বাবুল | (০,৪০) | (২,৩০) | (৪,২০) | (৬,১০) |
ইবুল | (০,৪০) | (২,২০) | (৪,০০) | (৬,-২০) |
এই দুজনের ভিতর দেখা যায় খারাপ হওয়ার প্রতিযোগিতা। বাবুলের লক্ষণ যে খারাপ সেটা আমরা আগেই দেখেছি। এখন ইবুলের দিকে তাকাই। তার অবস্থা আসলে আরও খারাপ। ইবুলের যে টাকা ছিল ৪ বছরেই তার সব শেষ। সে এত উড়ণচন্ডীর মতো খরচ করেছে যে ৬ বছরে তার ২০ হাজার টাকা ঋণ হয়ে গেছে।
তখন আমরা বলি যে ইবুলের বেশি দ্রুত অবনতি হচ্ছে। এখানে দুজনের ঢালই ঋণাত্মক তবে ইবুলের ঢাল বেশি ঋণাত্মক!
তার মানে ঢাল মানে হলো উন্নতির গতি । কিন্তু এই গতিটাকে মাপা যাবে কিভাবে?
এজন্য শুধু আবুল আর ডাবুলের ছবিটার (উপরের ছবিটার আগের ছবি) দিকে আরেকবার তাকাই। ডাবুলের গতি বেশি এটা আমরা কিভাবে বুঝলাম? আমাদের মন কী চিন্তা করল? মনে মনে আমরা যে হিসেব করেছি সেটা এমনঃ আবুলের ক্ষেত্রে প্রতি দুইবছরে বেড়েছে ২০ হাজার টাকা, আর ডাবুলের ক্ষেত্রে প্রতি দুই বছরে বেড়েছে ৪০ হাজার টাকা। তাহলে ডাবুলের গতি বেশি। মজার ব্যাপার হচ্ছে আমরা আসলে ঢালই চিন্তা করেছি। আমরা দুই বছর না ভেবে ১ বছর ভাবলে যেটা হতো সেটাই ঢাল। খুব সহজ করে বললে,
x এর মান ১ বাড়লে y যতটুকু বাড়ে সেটাই ঢাল
এখানে, আবুলের ক্ষেত্রে, x অর্থাৎ বছর সংখ্যা ২ বাড়লে y অর্থাৎ টাকা বেড়েছে ২০ হাজার
অতএব ঐকিক নিয়মে, x এর মান ১ বাড়লে y বাড়বে ২০/২=১০ হাজার । এই ১০ ই হলো এখানে ঢালের মান।
x এর মান δx পরিমাণে বাড়ালে y যদি δy বেড়ে যায়,
তাহলে, x এর মান ১ পরিমাণে বাড়ালে y বাড়বে δy/δx
এটাই হলো ঢাল। δy হলো কোটি দুটোর বিয়োগফল আর δx হলো ভুজ দুটোর।
তাহলে ইবুলের রেখার ঢাল= (২০-৪০)/(২-০) =-১০ [শুধু প্রথম দুটো বিন্দু নিয়ে হিসেব করেছি, যেকোন দুটো বিন্দু নিয়ে হিসেব করলেই একই আসবে। প্রথমটা আর শেষটা নিয়ে হিসেব করলে ঢাল আসত (৪০-(-২০))÷(০-৬)=৬০/(-৬)=-১০, একই এসেছে ]
এভাবে ডাবুলের রেখার ঢাল = (৮০-৪০)/(২-০)=৪০/২=২০
সেই ভয়ানক সংজ্ঞা:
আমরা এখন যখন জানি, ঢাল হচ্ছে y এর পরিবর্তন ভাগ x এর পরিবর্তন বা δy/δx, তখন শুরুতে যে ভয়াবহ সংজ্ঞা শিখেছিলাম, সেটা সহজেই বোঝা যাবে। ছবিতে দেখি, θ কোণের জন্য ট্যানজেন্ট হবে δy/δx । x অক্ষের সাথে যেখানে রেখাটি মিলেছে, সেখানে বামে ডানে দুইটা কোণ আছে। এখানে শুধু ডানের কোণটিকে আমরা θ নাম দিয়েছি। এই ডানপাশের কোণটাকেই বলে x অক্ষের ধনাত্মক দিকের সাথে কোণ। এই কোণের ট্যানজেন্ট নিলে সেটা ঢালের সাথে মেলে। তার মানে ট্যানজেন্টের মাধ্যমে যে সংজ্ঞাটা , সেটা ঠিক আছে কিন্তু এটাই মূল বিষয় নয়। ঢালের মূল বিষয় x এর সাথে y এর পরিবর্তনের গতি। তারপর সেখান থেকেই একসময় ঐ সংজ্ঞাটাতে পৌঁছানো যাবে।
শীঘ্রই প্রথম লেকচারের বাকি অংশ এখানে সংযুক্ত করা হবে। শেষে একটি ছোট্ট কুইজও থাকবে। ভয় পাবেন না। সেটা হবে সহজ আর মজার একটা কুইজ। আপনাকে কষ্ট দিতে না, আপনার জানার জানার আনন্দটুকু বাড়িয়ে দিতেই সেই কুইজের অংশটুকু থাকবে।
1 comment
Shanto
সেপ্টেম্বর 11, 2012 at 2:08 অপরাহ্ন (UTC -5) Link to this comment
Thats great.chömok vai mane e chomok