দৈর্ঘ্যঃ
১১২০ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন ইংল্যান্ডের রাজা ঘোষনা করেন যে তাঁর রাজ্যে দৈর্ঘ্যের এককের নাম হবে ‘Yard’.আর সেই এককের স্ট্যান্ডার্ড হবে তাঁর হাত প্রসারিত করে নাকের ডগা থেকে হাতের শেষ পর্যন্ত যে দৈর্ঘ্য হয় সেটা।অনেকটা একই ধরনের খেয়াল হয় ফ্রান্সের রাজা লুইস চতুর্দশের।দৈর্ঘ্যের একক ফুট নির্ধারিত হয় তাঁর রাজকীয় পা’র (Royal Foot) দৈর্ঘ্য দিয়ে!তবে আঠারো শতকে কিছু ভাল ভাল ধারণা আসে দৈর্ঘ্যের একক ঠিক করার জন্য।যে সরল দোলকের অর্ধ-পর্যায়কাল এক সেকেন্ড সেটার দৈর্ঘ্যকে এক মিটার প্রস্তাব করা হয়।আরেকটা ধারণা আসে যেটাতে উত্তর মেরু থেকে প্যারিসের মধ্য দিয়ে বিষুবরেখার দূরত্বকে ব্যবহার করা হয়।যেটাকে বলা হয় Meridional definition.উত্তর মেরু (North pole) থেকে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস হয়ে বিষুবরেখা (Equator) পর্যন্ত যতটুকু দূরত্ব তার এক কোটি ভাগের এক ভাগকে এক মিটার বলে ধরার প্রস্তাব করা হয়।
ফরাসী বিপ্লবের পরপর ১৭৯১ সালে French Academy of Science এই প্রস্তাবটিকেই গ্রহণ করে।কারণ পৃথিবীর বিভিন্ন যায়গায় মহাকর্ষ ধ্রুবক ‘g’ এর মান বিভিন্ন।ফলে ঐ সরল দোলকের দৈর্ঘ্যও বিভিন্ন হবে।সেই জন্য সরলদোলক পদ্ধতি নির্ভরযোগ্য কোনো পদ্ধতি হবে না।(সরল দোলক,পর্যায়কাল,g এসব সম্পর্কে আমরা পরে জানব।)
এভাবেই উত্তর মেরু থেকে প্যারিস দিয়ে বিষুব রেখার দূরত্বের ১/১০০০০০০০ (১০-৭)কে বা এক কোটি ভাগের একভাগকে মিটার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।যদিও পৃথিবীর ঘুর্ণনজনিত কারণে তখনকার বিজ্ঞানীদের হিসাবে একটু ভুল হয়ে গিয়েছিল।ফলে মিটারের তখনকার প্রটোটাইপটা সত্যিকার হিসাব থেকে .২ মিলিমিটার কম ছিল।এরপর ১৮৮৯ সালে প্লাটিনাম-ইরিডিয়াম সংকর দিয়ে মিটারের একটা প্রোটোটাইপ বানানো হয় যেটা মাপা হয়েছিল বরফের গলণাংকে।একটু পরিবর্তন করে ১৯২৭ সালে 00 সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এটাকে আরো সূক্ষভাবে নির্মান করা হয়।
কিন্তু পরবর্তীতে আরো সূক্ষ পরিমাপের প্রয়োজন হয়।১৯৬০ সালে ক্রিপটন-৮৬ পরমানুর রেডিয়েশনের তরংগ দৈর্ঘ্যকে ভিত্তি ধরে মিটারকে সংজ্ঞায়িত করা হয়।১৯৮৩ সালে মিটারের সংজ্ঞাটা দেয়া হয় এভাবেঃ
বায়ু শুন্য স্থানে আলো (১/২৯৯ ৭৯২ ৪৫৮) সেকেন্ডে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে মিটার বলে।
তবে এখানেই শেষ না।বিজ্ঞানের প্রয়োজনেই হয়ত ভবিষ্যতে আমাদের আরো সূক্ষভাবে মিটারের সংজ্ঞা ঠিক করতে হতে পারে।এককের সংজ্ঞাগুলোকে প্রকৃতির মধ্যে ছেড়ে দেবার একটা কথা বলা হয়েছিল।আসলেই কিন্তু তাই হয়েছে।ধরা যাক আমাদের কাছে কোনো মিটার বার বা লাঠি নেই।কিন্তু এই তথ্যটি জানা আছে যে বায়ু শুন্য স্থানে আলো (১/২৯৯ ৭৯২ ৪৫৮) সেকেন্ডে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে মিটার বলে।এখন পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের যেকোনো ল্যাবরেটরীতে বসে আমরা এই দৈর্ঘ্যটি কিন্তু বের করে নিতে পারি।