«

»

ডিসে. 13

স্কুলের পদার্থবিদ্যাঃ মেকানিক্স লেকচার ৯ (চাপ, আর্কিমিডিসের সূত্র, স্থিতিস্থাপকতা)

কোর্সের মূল পাতা

নিবন্ধনের লিংক

লেকচার ভিডিওঃ

চাপ ও ক্ষেত্রফলঃ

পড়াশুনার অনেক চাপ, কাজের অনেক চাপ, জোরে চাপ দাও…দৈনন্দিন জীবনে চাপ শব্দটা আমরা এভাবেই ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু পদার্থ বিজ্ঞানে চাপ কথাটা সুনির্দিষ্টভাবে ব্যবহার করা হয়। পদার্থবিজ্ঞানে চাপ(Pressure) শব্দটার সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা আছে। আমরা ইতিমধ্যে বল সম্পর্কে ধারনা পেয়েছি। কিন্তু কতটুকু জায়গা বা ক্ষেত্রফল জুড়ে কতটুকু বল প্রয়োগ করা হবে সেটা এখনো হিসাব করিনি। আমরা যখন কোনো বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করি তখন বস্তুটির কতটুকু অংশ জুড়ে কতটুকু বল প্রয়োগ করি (অর্থাৎ প্রতি একক ক্ষেত্রফলে কতটুকু বল প্রয়োগ করি)সেটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপ। এই অধ্যায়ে আমরা এই বিষয়টা (চাপ) সম্পর্কে জানব।

প্রথমেই কয়েকটা বাস্তব উদাহরন দেই।

 

  1. একটা কম ধারালো ছুরির (মানে ভোঁতা ছুরি) চেয়ে একটা ধারালো ছুড়ি খুব সহজে কাটতে পারে কেন?
  2. প্রথমে জুতা খুলে মেঝের উপর দাঁড়াও। এবারে মেঝের উপর কয়েকটা ছোট ইটের টুকরা রেখে ঐ ইটের টুকরাগুলোর উপর দাঁড়াও। কখন বেশী কষ্ট হয়? খালি মেঝের উপর দাঁড়াতে না ইটের টুকরাগুলোর উপর দাঁড়াতে?
  3. একটা কলম নিয়ে কলমের নিব দিয়ে হাতের তালু বা বুড়ো আঙ্গুলে চেপে ধর। এবার কলমের উল্টা অংশ দিয়ে একইভাবে একই বল দিয়ে চেপে ধর। কখন বেশি ব্যাথা লাগে?

 

ধারালো ছুরির ব্লেডের ধারালো অংশের ক্ষেত্রফল (মানে যে অংশ ব্যবহার করে কাটি) ভোঁতা ছুরির ক্ষেত্রফলের তুলনায় কম। তাই একই পরিমাণ বল প্রয়োগ করে কাটা সত্ত্বেও ধারালো ছুরির চাপ বেশি বলে (চাপ=বল/ক্ষেত্রফল)ধারালো ছুরি দিয়ে কাটতে সুবিধা হয়। অর্থাৎ ধারালো ছুঁরি একই পরিমান বল কম জায়গা জুড়ে প্রয়োগ করায় ধারালো ছুঁরি দিয়ে খুব সহজেই কাটা যায়।

বাকী দুটি উদাহরণের ক্ষেত্রেও একইভাবে চিন্তা করতে হবে। দেখা যাচ্ছে যত কম ক্ষেত্রফল দিয়ে বল প্রয়োগ করা হচ্ছে পায়ের পাতায় বা হাতের তালুতে ব্যাথা তত বেশি হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে একই পরিমাণ বল বেশি ক্ষেত্রফল জুড়ে কিংবা কম ক্ষেত্রফল জুড়ে প্রয়োগ করা যায়। কতটুকু ক্ষেত্রফল জুড়ে কতটুকু বল প্রয়োগ করা হচ্ছে সেই ব্যাপারটা এখানে হিসাবে আনতে হবে।

চাপ=বল/ক্ষেত্রফল

কঠিন করে বললে ‘একক ক্ষেত্রফলের উপর প্রযুক্ত বলকে চাপ বলে’। আর সহজ করে বলল… ‘ধরা যাক কোনো একটা জায়গা জুড়ে কিছু পরিমাণ বল প্রয়োগ করা হচ্ছে। এখন সেই মোট বলের পরিমাণকে ঐ জায়গার ক্ষেত্রফল দিয়ে ভাগ দিলে যেটা পাওয়া যায় সেটাই হচ্ছে চাপ।’

সিলিন্ডারটির প্রস্থছেদের ক্ষেত্রফল A বরাবর F বল প্রয়োগ করা হচ্ছে। ফলে চাপ P হবে P=F/A

 

বাম দিকের ছবিতে চাপ কম। কারণ নির্দিষ্ট পরিমান বল বেশি জায়গা জুড়ে প্রয়োগ করা হচ্ছে। ডান দিকের ছবিতে চাপ বেশি, কারণ একই পরিমাণ বল কম জায়গা জুড়ে প্রয়োগ হচ্ছে।

 

ঘণত্বঃএকটা বস্তুর প্রতি এক একক আয়তনের মধ্যে কতটুকু ভর আছে সেই সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায় ঘণত্ব থেকে। কোনো বস্তুর ভরকে এর আয়তন দিয়ে ভাগ দিলে এর ঘণত্ব পাওয়া যায়। একই আয়তনের একটা ইটের টুকরা আর কাঠের টুকরার মধ্যে ঘণত্বের পার্থক্য আছে। আয়তন সমান হলেও ইটের টুকরাটির ভর বেশি হবে।

ঘণত্ব= ভর/আয়তন

তোমরা খেয়াল করে থাকবে একই আয়তনের কাঠের টুকরা পানিতে ভাসে, কিন্তু ইটের টুকরাটা ডুবে যায়। এখন এরকম কোন কোন বস্তু পানিতে ডুববে আর কোন কোন বস্তু পানিতে ভাসবে আর কোন বস্তু ডুবে ডুবে ভাসবে সেটা জানতে হলে আমাদের আর্কিমিডিসের নীতি এবং বস্তুর কোনো তরলে ভাসা কিংবা ডোবা সম্পর্কিত কিছু শর্ত আছে, সেগুলো জানতে হবে।

আর্কিমিডিসের নীতিঃ কোনো বস্তুকে তরলে নিমজ্জিত করলে বস্তুটির ওজন হ্রাস পায়। এই হ্রাসের পরিমাণ বস্তু দ্বারা অপসারিত তরলের ওজনের সমান। অর্থাৎ,

বস্তুর তরলে ওজন = বস্তুর প্রকৃত ওজন – বস্তু কর্তৃক অপসারিত তরলের ওজন

পরবর্তী লেকচার গুলোতে আমরা এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত পড়াশুনা করব।

আমরা যদি একটা রবারের তারকে টেনে ধরি তাহলে সেটা দৈর্ঘ্যে বেড়ে যায়। আবার রাবারের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ বল প্রয়োগ করতে হয় তার চেয়ে অনেক বেশি বল প্রয়োগ করতে হয় একটা ইস্পাতের তারকে টেনে লম্বা করতে। আবার খেয়াল করে দেখ যখন এই তারটাকে আমরা ছেড়ে দেই তখন সেটা আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। যখন আমরা তারটাকে টেনে ধরি তখন এর মধ্যে একটা বাধাদানকারী বলের সৃষ্টি হয়। তবে শুধু তার টেনে ধরা না, কোনো বস্তুকে বল প্রয়োগ করে আকার-আকৃতি-আয়তনের কোনোরকম পরিবর্তনের চেষ্টা করা হলে আমরা খুব সহজে কিন্তু তা করতে পারি না। আকার-আকৃতি বা আয়তন পরিবর্তন করার জন্য বস্তুটার উপর বল প্রয়োগ করা হলে একটা বাধা আসে। আকৃতি বা আয়তন পরিবর্তনের এই বাধা দেবার প্রবণতা কোনো কোনো বস্তুর খুব বেশী (যেমন ইস্পাত) আবার কোনো কোনো বস্তুর কম (যেমন রাবার)। বস্তুর এই প্রবণতাকে স্থিতিস্থাপকতা বলে। তবে এখানে আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে স্থিতিস্থাপকতারও একটা সীমা আছে। কতটুকু বল প্রয়োগ করা যাবে তার একটা সীমা আছে-এই সীমা অতিক্রম করে ফেললে বস্তু আর আগের অবস্থায় ফিরে আসতে পারবে না, তার মাঝে একটা স্থায়ী বিকৃতি ঘটে যেতে পারে। এই সীমাকে স্থিতিস্থাপক সীমা বলে।

স্থিতিস্থাপকতাঃ বাহ্যিক বল প্রয়োগ করে কোনো বস্তুর আকার বা আয়তন বা উভয়ের পরিবর্তনের চেষ্টা করা হলে যে ধর্মের ফলে বস্তুটি এই পরিবর্তনের প্রচেষ্টাকে বাধা দেয় এবং বাহ্যিক বল অপসারিত হলে বস্তু তার পূর্বের আকার ও আয়তন ফিরে পায়, সেই ধর্মকে স্থিতিস্থাপকতা বলে।

বাহ্যিক বলের বিরুদ্ধে যে বস্তুর বাধা প্রদানের ক্ষমতা বেশি সেই বস্তুর স্থিতিস্থাপকতা বেশি। খেয়াল করে দেখ, আমরা রাবারের তারকে খুব সহজেই টেনে লম্বা করতে পারি। কিন্তু ইস্পাতের তারকে টেনে লম্বা করতে অনেক বেশি বল প্রয়োগ করতে হয়। ইস্পাতের স্থিতিস্থাপকতা তাই রাবারের চেয়ে অনেক বেশি।

 

Comments

comments

About the author

দ্বৈপায়ন দেবনাথ

আমি দ্বৈপায়ন দেবনাথ।ডাক নাম অথৈ।ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়েছি হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে। ক্লাস সিক্সে ভর্তি হই কলেজিয়েট স্কুল,চট্টগ্রামে।মাধ্যমিক পাশ করি সেখান থেকেই।উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করি চট্টগ্রাম কলেজ থেকে।এখন ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান,ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড কমিউনিকেশান ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪র্থ বর্ষে পড়ছি।আমার এখনো গ্রাজুয়েশনই শেষ হয়নি।তাই জীবনের অর্জন-এচিভম্যান্ট এসব সম্পর্কে বলার সময় এখনো আসে নি।তাই শুধু মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পাশের কথাই বলতে হল।যদি জিজ্ঞেস করা হয় ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি- তাহলে আমি বলব কিছু গণিত এবং পদার্থবিজ্ঞানের বই যোগাড় করেছি।সেগুলোই পড়ার পরিকল্পনা আছে।আমার অনেক বন্ধুই ম্যাথ-ফিজিক্স শিখে মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেছে।আর আমি গণিত-ফিজিক্সের কিছুই জানি না।পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি ভালবাসা আছে।আর আছে পদার্থবিজ্ঞান শেখার প্রয়োজনীয় গণিতের প্রতি আগ্রহ।ঐ আগ্রহ আর ভালবাসাকে কাজে লাগিয়ে পদার্থবিজ্ঞান শিখতে হবে।আপাতত এটাই প্ল্যান।

Leave a Reply