[কোর্সের মূল পাতা] [নিবন্ধন ফর্ম][পূর্বের লেকচার]
আজকে পড়বো:
– প্রাণের কিকি বৈশিষ্ট্য আছে
– জীববিজ্ঞানের চারটি সূত্র
লেকচার ভিডিওটি এখান থেকে দেখে নাও
[youtube http://www.youtube.com/watch?v=6QDcU2_V0sw]
প্রাণের বৈশিষ্ট্য:
মনে কর তুমি রাস্তা দিয়ে হাঁটছো, পাশে একটি পুকুর দেখলে। পুকুরের পানিতে কিছু হাঁস ভেসে বেড়াচ্ছে। কিছুক্ষণ দেখে টেখে তুমি আবার হাঁটা দিলে। এবার যাচ্ছো একটি খেলনার দোকানের সামনে দিয়ে। খেলনার দোকান দেখে ভেতরে না ঢুকে কি থাকা যায়? তুমি ভেতরে ঢুকে দেখলে অনেক খেলনা। তারমধ্যে কয়েকটা আছে খেলনা হাঁস, চাবি ঘুরিয়ে দিলে পানিতে ভেসেও বেড়ায়। তাহলে একটু আগে পুকুরে যেই হাঁসগুলি দেখলে তার সাথে খেলনা হাঁসটির কি পার্থক্য তবে? আসলে এই পার্থক্যই প্রাণের বৈশিষ্ট্য। একেই আমরা বোঝার চেষ্টা করবো আজকের পড়ায়।
পৃথিবীর জীবন নিয়ে প্রথমেই এই দারুণ ভিডিওটি দেখে নাও:
যার প্রাণ বা জীবন আছে তাকে আমরা জীব বলি। তবে কোন বস্তুকে জীবিত হতে হলে বা বস্তুটির প্রাণ থাকতে হলে নিচের সবগুলি বৈশিষ্ট্য তার থাকতে হবে:
১. এটা পরিবেশের প্রতি সাড়া দেয়
২. এটা বৃদ্ধি পায় এবং বিকশিত হয়
৩. এটা বংশবৃদ্ধি করে
৪. এটা নিজের দেহে স্থিতি রক্ষা করে
৫. এর মধ্যে জটিল রসায়ন আছে
৬. এটা কোষ দিয়ে তৈরি
হয়তো একটু কঠিন মনে হচ্ছে। আসলে তেমন কঠিন নয়। আমরা এখন একে একে সবগুলি পয়েন্ট পড়ে নিলে সব সহজভাবে বুঝে যাবে:
১. পরিবেশের প্রতি সাড়া
সব জীবই পরিবেশের বিভিন্ন পরিবর্তন বুঝতে পারে এবং সেই অনুযায়ী সাড়া দেয়। যখন তুমি হাঁটতে গিয়ে কোন পাথরের ওপর পাড়া দাও তখন পাথরটি কি করে? কিছুই করেনা। কারন তার প্রাণ নাই। কিন্তু তুমি যদি একটা কচ্ছপ বা ব্যাঙের ওপর পাড়া দিতে যাও তখন কি হয়? কচ্ছপটি বা ব্যাঙটি দ্রুত সরে যেতে চায়। হয়তো তোমাকে কামড়ও দিয়ে দিতে পারে ভয় পেয়ে। অর্থাৎ এই জীবগুলি পরিবেশের পরিবর্তন (তোমার পা দিয়ে পাড়া দেয়াটা হল এখানে পরিবর্তন) এ সাড়া দেয়।
২. বৃদ্ধি এবং বিকাশ
সব জীবই বৃদ্ধি পায় এবং বিকশিত হয়। যেমন কুমড়ার বীজকে তো দেখেছো। তাকে দেখতে হয়তো নির্জীব মনে হচ্ছে কিন্তু তার মধ্যে প্রাণের বীজ লুকিয়ে আছে। মাটিতে পুঁতে সার, পানি, আলো দিয়ে দেখো, দেখবো একদিন সেটা থেকে সুন্দর চারাগাছ বের হয়েছে। চারগাছটি আবার বড় হয় দিন দিন এবং একদিন দারুন হলুদ রঙের ফুল তৈরি করে। সেউ ফুল থেকে একদিন আবার বড় বড় কুমড়া তৈরি হয়। অর্থাৎ বীজটি থেকে গাছ বিকশিত হয়েছে এবং আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সব জীবই এই বৈশিষ্ট্য বহন করে। আমরাও শিশু থেকে বড় হয়ে উঠি।
৩. বংশবৃদ্ধি
সব জীবই বংশবৃদ্ধি করে। একটি বা দুইটি জীব থেকে যখন আরও অনেক একই রকম জীব তৈরি হয় তখন সেটাকে বংশবৃদ্ধি বলে। খুব সাধারন একটি কোষ দুইভাগ হয়ে দুইটি কোষ হয়ে যেমন বংশবৃদ্ধি হতে পারে আমাদের মত প্রাণীদের ক্ষেত্রে একটু জটিল উপায়ে বংশবৃদ্ধিও হতে পারে। যাই হোক, একটি বিরাট আকারের নীল তিমি থেকে একটি অতিক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়া- এরা সবাই বংশবৃদ্ধি করে।
৪. স্থিতি অবস্থা বজায় রাখা
সব জীবই নিজের দেহের ভেতরে একটি স্থিতি অবস্থা বজায় রাখতে পারে। একটু সহজ করে বলছি। আমাদের দেহের ভেতরে যেই পরিবেশ থাকে সেটাকে আমরা প্রায় সবসময়েই একইরকমভাবে রাখতে পারি। বাইরের পরিবেশ যেমনটাই হোক না কেন। যেমন আমরা যখন অনেক শীতের বা অনেক গরম কোন দেশে বা জায়গায় যাই তখনও আমরা দেহের ভেতরে একইধরনের তাপমাত্রা ধরে রাখি। আসলে আমাদের শরীর বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করে স্বাভাবিক অবস্থাটি ধরে রাখতে। একেই স্থিতি অবস্থা ধরে রাখা বলা যায়। ইংরেজীতে এই স্থিতি অবস্থা ধরে রাখাকে বলে হোমিওস্ট্যাসিস (homeostasis)। [এই শব্দটি মনে রাখতে পারো। আরও যখন অনেক জীববিজ্ঞান পড়বে তখন বারবার এই শব্দটি ব্যবহার আসবে।]
৫. জটিল রসায়ন
সকল জীবিত বস্তু, এমনকি খুবই ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়ার মধ্যেও কাজ করে অতি জটিল রসায়ন। জীবেরা জটিল এবং বৃহৎ অণু দিয়ে তৈরি এবং তারা অনেক জটিল রাসায়নিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় জীবকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। জীবের বেঁচে থাকার সকল উপায়গুলি চালাতে জটিল রসায়নের প্রয়োজন।
৬. কোষ
সকল ধরনের জীব কোষ দিয়ে গঠিত। কোষ হল আমাদের দেহের গঠনের মৌলিক একক। একটা জীব থেকে আরকেটা হয়তো বাইরে দেখতে আলাদা, কিন্তু তাদের কোষগুলির গঠন এবং কাজের ধরন প্রায় একইরকম। আবার একটা ব্যাকটেরিয়ায় একটাই কোষ। আবার অন্যদিকে বহুকোষী জীব বিভিন্নধরনের কোষ অনেকগুলি কোষ দিয়ে তৈরি।
এবার আমরা জীববিজ্ঞানকে বোঝার চেষ্টা করবো। বুঝতেই পারছো জীবকে নিয়ে যে বিজ্ঞান তাকেই জীববিজ্ঞান বলে। আসলে আমরা জীববিজ্ঞানকে কিছু সূত্র দিয়ে বুঝতে পারি যেগুলি আসলে ৪ টি তত্ত্ব। নিচে এগুলি নিয়ে আলোচনা করা হল।
জীববিজ্ঞানের সমন্বিত সূত্র:
জীববিজ্ঞানকে ৪ টি সমন্বিত সূত্র দিয়ে বোঝা যায়। একজন বিজ্ঞানী হয়তো অনেক প্রাচীন কোন জীবকে নিয়ে কাজ করছেন, আরেকজন হয়তো অতিক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়া নিয়ে কাজ করছেন বা অন্যজন মানুষ নিয়ে কাজ করছেন- যেকোন ধরনের জীব নিয়েই কাজ করুন না কেন, জীববিজ্ঞানের এই ৪ টি সূত্র সব ক্ষেত্রেই খাটবে। অর্থাৎ জীববিজ্ঞান এই ৪ টি সূত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
১. কোষতত্ত্ব
২. জীনতত্ত্ব
৩. স্থিতাবস্থা বা homeostasis
৪. বিবর্তন
আমাদের জীববিজ্ঞান সিরিজের বাকি কোর্সগুলোতে আমরা এসব বিষয় আরও ভাল করে পড়ে নেব। এখন দেখি এই সূত্রগুলি কি বলছে:
কোষতত্ত্ব
কোষতত্ত্ব বলছে সব জীবিত বস্তুই কোষ দিয়ে তৈরি এবং একটি কোষ থেকেই শুধুমাত্র আরেকটি কোষ আসে বা জন্ম নেয়। আসলে প্রত্যেকটি জীবই একটিমাত্র কোষ থেকে তৈরি হয়েছে। কিছু জীব, যেমন ব্যাকটেরিয়া একটি কোষ হিসেবেই থাকে। আবার কিছু জীব, যেমন উদ্ভিদ এবং প্রাণী অনেকগুলি কোষ নিয়ে তৈরি হয়। তোমার নিজের শরীরই কয়েক ট্রিলিয়ন (এক হাজার বিলিয়নে এক ট্রিলিয়ন, একশ কোটিতে এক বিলিয়ন) কোষ দিয়ে তৈরি! তারপরও, তোমার দেহ তৈরি শুরু হয়েছিল একটিমাত্র কোষ থেকে। জীববিজ্ঞান সিরিজের অন্যান্য কোর্সগুলোতে তোমরা এসব নিয়ে আরও পড়তে পারবে।
জীনতত্ত্ব
জীনতত্ত্ব বলছে জীবের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে জিন এবং জিন পিতামাতা থেকে সন্তানে পরিবাহিত হয়। জিন আসলে খুঁজে পাওয়া যায় ক্রোমোজম নামক একধরনে গঠনে, যেটা কোষের ভেতরে থাকে। ক্রোমোজম ডিএনএ (DNA, এটা নিয়ে আমরা পরে আরও অনেক পড়বো) নামক একধরনের বৃহৎ অণু দিয়ে গঠিত। ডিএনএ’র মধ্যে তথ্য লুকানো থাকে যাকে জিন বলে আর এটা জীবকে বলে দেয় এটা করো, ওটা করো ইত্যাদি। তোমরা এখনই ডিএনএ নিয়ে আরও অনেককিছু জেনে নিতে চাইলে এইখানে ক্লিক কর।
স্থিতাবস্থা বা homeostasis
স্থিতাবস্থা রক্ষা শুধু জীবের ধর্ম নয়, বরঞ্চ প্রকৃতিরই একটি ধর্ম। জীবজগৎ এবং পরিবেশ নিয়ে আমাদের প্রকৃতি। যেমন, আমাদের পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ২১% (একশ ভাগের ২১ ভাগ) অক্সিজেন আছে আর এটা মোটামুটি স্থিরভাবেই আছে। বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমানে তেমন কোন তারতম্য হয়না। কিভাবে এরকম স্থিতাবস্থা আছে। কারনটাও হল জীবের প্রভাব। কিছু জীব অক্সিজেন গ্রহণ করে বেঁচে থাকে, তার ফলে বাতাসে অক্সিজেন কমে যাওয়ার কথা। কিন্তু উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় আবার অক্সিজেন বায়ুমন্ডলে ফিরিয়ে দেয়। ফলে অক্সিজেনের পরিমানটা একইরকম থাকে।
বিবর্তন
বিবর্তনকে সাধারনভাবে বলতে গেলে বলা যায় বিবর্তন হল সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবের বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন এবং এভাবে নতুন জীবের উদ্ভব। বিবর্তন মূলতঃ ঘটে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে। যেমন, কিছু কিছু জীব অন্য জীবের চেয়ে বেশি পরিমান সন্তান জন্ম দেয় এবং ফলে বেশি পরিমান জিন তারা পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এটা গুণ একটি বিরাট ভূমিকা রাখে পরিবেশের জীববৈচিত্রে এবং জীবের বৈশিষ্ট্যে। বর্তমান সময়েও কিভাবে জীবেরা পরিবর্তন হয় এবং কিভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া জীব থেকে আধুনিক জীব এসেছে তার ব্যাখ্যা দেয় বিবর্তন তত্ত্ব। যখন জীবের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটে তখন তারা মূলতঃ পরিবেশে ভালভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পারে বলেই ঘটে। কোন নির্দিষ্ট পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেয়াটা জীবের জন্য জরুরী। কারন এর উপরই তার বংশবৃদ্ধি এবং বেঁচে থাকা নির্ভর করে। একটা উদাহরণ দেই।
নিচের ছবিতে দেখো একটি ছুঁচোর ছবি দেখা যাচ্ছে। লক্ষ্য করলে দেখবে এদের মুখের কাছে একধরনের অঙ্গ আছে। ছুঁচোগুলি গর্তের মধ্যে থাকে যেখানে সবসময়ই অন্ধকার। কিন্তু খাবার খোঁজার জন্য ছুঁচোটির একধরনের অঙ্গ আছে যার ফলে সে বিন্দু পরিমান খাবারও অন্ধকারের মধ্যে খুঁজে খেতে পারে এবং বেঁচে থাকতে পারে। যদি ছুঁচোটি আলোতে বসবাস করতো তবে তার এই অঙ্গটি দরকার ছিলনা। অর্থাৎ অন্ধকার পরিবেশে (নির্দিষ্ট পরিবেশে) ছুঁচোটি খাপ খাইয়ে নিতে পারছে খুব ভালভাবে।