[কোর্সের মূল পাতা] [নিবন্ধন ফর্ম]
– স্কুলের জীববিজ্ঞান সিরিজের প্রথম কোর্স এটি। তাই শিক্ষার্থীরা এই কোর্সের লেকচার থেকে প্রথমে জীববিজ্ঞান পড়াটা শুরু করতে পারেন।
-জীববিজ্ঞানকে বুঝতে হলে প্রথমে বিজ্ঞানকে বুঝতে হবে। আর, শিক্ষক.কম এ যেহেতু স্কুলের বিজ্ঞানের প্রথম কোর্সগুলির একটি এই কোর্সটি তাই বিজ্ঞান বলতে আমরা কি বুঝি সেটা আলোচনা করে নেয়া প্রয়োজন ছিল। প্রথম দুটি লেকচার তাই বিজ্ঞানের সংজ্ঞা, পদ্ধতি এসব নিয়ে।
আজকে পড়ব:
জীবন, প্রকৃতি এবং বিজ্ঞান
– কেন জীববিজ্ঞান পড়বো
– বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যগুলি কি কি
কখনো কি ভেবে দেখেছো কিভাবে গরু শুধু পাতা আর ঘাস খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে, মাংস খাওয়ার দরকার হয়না? অথবা কেন পাখি এত সুন্দর সুরে গান করে? সূর্যের আলো দেয়া কি একদিন বন্ধ হয়ে যাবে? মহাকাশের অন্য কোথাও কি আমাদের মতই কোন প্রাণী আছে? তুমি যদি এভাবে প্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন করতে শেখো তবে তুমি একজন বিজ্ঞানীর মত চিন্তা করছ। বিজ্ঞানের ইংরেজী হল Science, শব্দটি ল্যাটিন (প্রাচীন রোম শহরের ভাষা) ভাষা থেকে নেয়া। অর্থ হল ‘জ্ঞান’। বিজ্ঞান হল প্রকৃতিকে বোঝার একটি প্রক্রিয়া যেটা শুরু হয় কোন প্রশ্ন দিয়ে এবং তারপর প্রশ্নটার উত্তর খোঁজা হয় বিভিন্নরকম প্রমাণ এবং যুক্তি দিয়ে। অর্থাৎ বিজ্ঞান হল আমাদের মনের মধ্যে জাগা সব ‘কেন’ এবং ‘কিভাবে’ প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজে পাবার দারুন মজার চেষ্টা। তুমিও এরকম খোঁজার অংশ হতে পারো, পৃথিবীর যে কেউ চাইলে বিজ্ঞানী হতে পারে। শুধু প্রশ্ন করতে শিখতে হবে আর তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করতে হবে। যেকোন ধরনের প্রশ্ন হতে পারে, যেমন, কেন গাছের রঙ সবুজ হয়, কেন মানুষের পাগুলি এরকম কিন্তু গরুরটা ভিন্ন, কেন শীতকালে ঠান্ডা লাগে, কিভাবে আমরা খাবার হজম করি, কিভাবে বৃষ্টি পরে, কিভাবে কাঁঠাল পাকে, কেন সাপের পা নাই ইত্যাদি। সবগুলি প্রশ্নই হল তোমার মনের কৌতুহল। কৌতুহল নিবারণ করতে হলে তো আমাদেরকে বিজ্ঞানী হয়ে উঠতে হবে। সেটা বোঝার জন্য আমাদেরকে বুঝতে হবে কিভাবে বিজ্ঞানীরা চিন্তাভাবনা করেন, বিজ্ঞানের লক্ষ্য কি, কিভাবে বিজ্ঞান তৈরি হয় ইত্যাদি। আজকে লেকচারে আমরা এসব নিয়েই আলোচনা করবো।
প্রশ্ন করতে শেখা এবং উত্তর খোঁজা হল বিজ্ঞান: পাখি কেন গান করে?
বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য:
১. গোছালোভাবে নিয়ম বা তত্ত্ব দিয়ে প্রকৃতিকে বোঝা
২. বিজ্ঞানের সব উত্তরকেই সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে
৩. বিজ্ঞানের দারুন তত্ত্বগুলি সময়ের পরীক্ষায় টিকে থাকে
৪. বিজ্ঞান দিয়ে সব প্রশ্নের উত্তর নাও পাওয়া যেতে পারে
সবগুলি পয়েন্ট নিয়েই আমরা আলোচনা করবো নিচে।
১. প্রকৃতিকে বোঝা সম্ভব:
বিজ্ঞানীরা মনে করেন প্রকৃতি হল একটি একক ব্যবস্থা যা প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে চলে। এই প্রাকৃতিক নিয়মগুলি খুঁজে বের করেই বিজ্ঞানীরা প্রকৃতিকে বুঝতে পারেন। প্রকৃতির নিয়মগুলিকে বৈজ্ঞানিক নিয়ম বা তত্ত্ব (scientific law) হিসেবে প্রকাশ করা হয়। বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হল এমন একটি তথ্য যেটা প্রকৃতির কোন নির্দিষ্ট পরিবেশে সবসময়েই একইরকমভাবে ঘটবে।
বৈজ্ঞানিক তত্বের একটি উদাহরণ হল অভিকর্ষ বল (gravity) বা পৃথিবীর দিকে বস্তুর আকর্ষণ। এই বলটি আবিষ্কার করেন স্যার আইজ্যাক নিউটন। অভিকর্ষ বল বলছে যে যেকোন বস্তুই উপর থেকে ছেড়ে দিলে নিচের দিকে, অর্থাৎ পৃথিবীর দিকে পরে যাবে, কারন পৃথিবী বস্তুটিকে আকর্ষণ করছে। যেমন, তুমি যদি একটা লাফ দাও তবে উপরের দিকে উড়ে যাচ্ছোনা, বরং আবার নিচে নেমে আসছো এই অভিকর্ষ বলের কারনে। এই তত্বের উপর ভিত্তি করে নিউটন পৃথিবীর বুকে ঘটা অনেক ঘটনা ব্যাখ্যা করতে পারছিলেন। আমরাও পারি, যেমন, কেন বৃষ্টির পানি আকাশের উপরে উঠে না গিয়ে পৃথিবীতে নেমে আসছে, কেন গাছ থেকে ফলটি মাটিতে পরছে, কেন ক্রিকেট বলটিকে ব্যাটসম্যান ছক্কা হাঁকালে সেটা আবার গ্যালারিতে এসে পরছে আবার কেন চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে ইত্যাদি।
নিউটন ভাবছেন আপেলটা নিচের দিকেই পড়ছে কেন
২. বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব পরিবর্তিত হতে পারে:
বিজ্ঞান ঠিক কোন জ্ঞানের আধার নয়, বরং একটি প্রক্রিয়া যা জ্ঞান তৈরি করে। বিজ্ঞানীরা ক্রমাগত তাদের চিন্তাভাবনাকে পরীক্ষা এবং যাচাই করে থাকেন। ফলে যখন নতুন পর্যবেক্ষণ নতুন তথ্য দেয় তখন পুরানো তত্ত্বগুলি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীণ হয়, মানে ভুল প্রমাণিত হতে পারে। পুরানো ধারনা বা তত্ত্বগুলি নতুন তত্ত্ব দিয়ে প্রতিস্থাপিত হতে পারে যেটা কার্যকারণকে আরও ভালভাবে ব্যাখ্যা করে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরানো তত্ত্বগুলিকে শুধু সংস্কার বা সংশোধন করা হয়। যেমন, আইনস্টাইন যখন তার আপেক্ষিকতা সূত্র দিলেন তখন তিনি কিন্তু নিউটনের অনেক আগে দেয়া গতিসূত্রকে বাতিল বা খারিজ করে দেননি। বরং তিনি দেখিয়েছেন যে নিউটনের সূত্র অন্যভাবে আসলে সত্য। এভাবে বিজ্ঞানীরা দিনেদিনে নিখুঁত থেকে নিখুঁততর প্রাকৃতিক নিয়ম খুঁজে বের করেন। ছবির উদাহরণটি দেখতে পারো। তবে মনে রেখো এই উদাহরণটা বানানো (সহজভাবে বোঝানোর জন্য দেয়া)।
৩. বৈজ্ঞানিক জ্ঞান সময়ের পরীক্ষায় টিকে থাকে:
অনেক বৈজ্ঞানিক ধারনা বা তত্ত্বই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টিকে থাকে, যদি পরীক্ষা দিয়ে খুব ভালভাবে প্রমাণিত হয়। যেমন, ২০০ বছর আগে বিজ্ঞানী জন ডালটন আণবিক তত্ত্ব দিয়েছিলেন যেখানে তিনি বলেছিলেন যে সব বস্তুই অণু নামক অতিক্ষুদ্র কণা দিয়ে তৈরি। তত্ত্বটি এখনও একইরকম সত্যি। এরকম আরও বহু বৈজ্ঞানিক ধারনা বা তত্ত্বই বিভিন্ন সময়ে বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং এখনও টিকে আছে। আমরা যখন জীববিজ্ঞান পড়বো তখন অনেকগুলি এরকম তত্ত্বের সঙ্গে পরিচিত হব।
৪. বিজ্ঞান সব প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারেনা:
বিজ্ঞান প্রমাণ এবং যুক্তি দিয়ে কাজ করে। তাই সে শুধু সেসব বিষয় নিয়েই পরীক্ষা করতে পারে যা পর্যবেক্ষণ করা যায়। মানুষ নিজে কোন বস্তু, কণা বা শক্তি অনুভব করে অথবা কোন যন্ত্র দিয়ে কোন বস্তু, কণা বা শক্তি উপস্থিতি বুঝতে পেরে পর্যবেক্ষণ করে। মানে এসব বস্তু, কণা বা শক্তিকে আমরা পর্যবেক্ষণ করতে পারি। কিন্তু যেসব জিনিস মানুষ পর্যবেক্ষণ করতে পারেনা, যেমন (সম্ভবত কল্পিত) অতিপ্রাকৃত জীব বা বস্তু, সেগুলি বিজ্ঞানের আওতায় আসেনা। যদিও কার্যকারণ, প্রাকৃতিক নিয়ম এবং যুক্তি দিয়ে কোন একটা ধারনাকে ভুল প্রমাণ করা যায়। যেমন নিচের প্রশ্ন দুটি নিয়ে একটু চিন্তা করতে পারো:
ক. পৃথিবীতে প্রাণ কি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিবর্তিত হয়েছে?
খ. পৃথিবীতে প্রাণ কি সৃষ্টি করা হয়েছে অন্য কোন উপায়ে?
প্রথমটার উত্তর আমরা প্রমাণ এবং যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে পারি। কিন্তু দ্বিতীয়টা বিশ্বাসের বস্তু, তাই এটা বিজ্ঞানের আওতার বাইরে।