«

»

ডিসে. 10

কোরিয়ান ভাষার সহজ পাঠ – লেকচার ১০ (শেষ) – সংস্কৃতি ও পালা পার্বণ

কোরিয়ান ভাষার সহজ পাঠ-লেকচার-১০

[কোর্সের মূল পাতা নিবন্ধনের লিংক]

কোরিয়ান ভাষার সহজ পাঠ এর আজ আমাদের শেষ লেকচার। আমরাতো এখন কোরিয়ান বর্ণমালা শিখে ছোট বা মাঝারি ধরনের বাক্য লিখতে এবং পড়তে পারি, টুকিটাকি ব্যাকরণ জানি। শুধু তাইনা, কোরিয়ান কারো সাথে হালকা পাতলা কথাবার্তাও বলতে পারি। আগের ৯টা লেকচার থেকে এগুলো আমরা আয়ত্ত করেছি। আজ আমরা জানব কোরিয়ান সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক এবং কিছু পালা পার্বণ সম্বন্ধে। তাই আজ কোন ভিডিও লেসন থাকছেনা।

কোরিয়া কেমন দেশ, লোক সংখ্যা, আয়তন, ধর্ম এগুলো নিয়ে তথ্যসম্ভার আপনাদের জন্য কেবল একটা ক্লিকের ব্যাপার। তাই এসব প্রসঙ্গে যাচ্ছিনা। আজ আলোচনা সাধারণ কিছু ব্যাপার নিয়ে, যা আসলে দৈনন্দিন জীবনে জানা থাকা দরকার। প্রথমে আসি খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে। ওখানকার এয়ারপোর্টে নেমে লাগেজ বুঝে নেয়ার পর নিশ্চয়ই পেট চোঁ চোঁ করে উঠবে ক্ষুধায়। কোরিয়ান খাবারের সাথে ওতপ্রোতভাবে যে নামটি জড়িত তা হলো, ‘খিমছি’। বাঁধাকপি, মুলা, শসা এগুলোকে লবণ, মরিচের পেস্ট, সয়াসস, রসুন, আদা এসব বিভিন্ন রকম উপাধান ব্যবহার করে অনেকদিন পর্যন্ত খাবার উপযোগি করে সংরক্ষন করা হয়। বছরের একটা বড় সময় সবজি উৎপাদন করা যায়না বলেই প্রাচীন সময় থেকেই এভাবেই সংরক্ষন করে দৈনিক খাদ্যতালিকায় সবজি রাখা হত। আমাদের মত ওরাও ভাত প্রধান জাতি।অনেকে তিন বেলাও ভাত খায়। তবে আমাদের মত ভাত দিয়ে তরকারী না খেয়ে তরকারী দিয়ে ভাত খায়। অবশ্য এ যুগের কোরিয়ানরা অনেকেই কন্টিনেন্টাল খাবারে আগ্রহী হয়ে উঠছে কিন্তু তারপরো ভাত আছেই। আমরা বাড়ি্তে কেউ এলে জিজ্ঞাসা করি ভাত খেয়েছে কিনা তেমনি করে কোরিয়ানরাও জিজ্ঞাসা করে, 밥 먹었어요?  মানে ভাত খেয়েছেন? বেশ কিছু মজার খাবার আছে কোরিয়াতে যা না খেয়ে আসবেননা প্লিজ। যেমন, বিবিম বাপ্‌, গালবি, তক পোক্‌কি, বুলগোগি, কোরিয়ান ফ্রাইড চিকেন। এছাড়া আরো কিছু খাবার আছে যা মুসলিমরা খেতে পারেননা পর্ক দিয়ে তৈরী বলে। যেমন, সাম গিয়প সাল।

খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে কিছু আদব বা অবশ্য পালনীয় কিছু ব্যাপার আছে। কেউ দাওয়াত করলে তার বাড়িতে খালি হাতে না যাওয়ার মত ব্যাপারগুলো আমাদের মত ওরাও পালন করে। খেতে বসার আগে পরিবারের বড়রা বসলেন কিনা এটা খেয়াল করা ভদ্রতা। গোগ্রাসে না খেয়ে অন্যরা কি গতিতে খাচ্ছে তা খেয়াল করতে হবে। আমরা অনেক সময় ভাতের প্লেট বা বাটি হাতে তুলে নিয়ে খাই। এটা করা যাবেনা। টেবিলে রেখে খাওয়াই দুরস্ত ওখানে। একেবারে অনেক খাবার প্লেটে তুলে খাবার নষ্ট করাটা অশোভনীয়। সূরাপান কোরিয়ান সংস্কৃতির একটা অংশ। পান করবার সময় যদি বয়স্ক কেউ সামনে থাকনে তাহলে তার মুখোমুখি হয়ে পান না করে বরং পেছন ফিরে পান করতে হয়। মুরুব্বী কেউ যদি গ্লাসে ঢেলে দেন তাহলে দুহাতে গ্লাস ধরে থাকতে হয় আর তাঁদের ঢেলে দিতে গেলেও দুহাতে ধরেই গ্লাসটা এগিয়ে দিতে হয়।

কোরিয়ান কারো সাথে কথা বলার সময় লক্ষ্য রাখুন তাকে নাম ধরে ডাকার ব্যাপারে। আমাদের পারিবারিক টাইটেল বা উপাধি সাধারণত থাকে নামের শেষে আর ওদের থাকে শুরুতে। যেমন, কারো নাম যদি হয় লি জাং উক্‌ তাহলে ‘লি’ হচ্ছে তার পারিবারিক উপাধি আর ‘জাং উক্‌’ তার নাম। আপনি তাকে ‘জাং উক’ বলে ডাকতে পারেন। বডি ল্যাঙ্গুয়েজের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, ডান হাতে কিছু নেয়া/দেয়া, মুরুব্বীদের চোখে চোখে তাকিয়ে কথা না বলাটাই ভদ্রতা। কেউ যদি প্রশংসা করে তাহলে তাকে ধন্যবাদ না দিয়ে আমাদের দেশের মত, ‘আরে না না… কি যে বলেন…’ এভাবে প্রত্যুত্তর করাটা ওখানে প্রচলিত। হ্যান্ড শেক করবার উদ্দেশ্যে নারীদের দিকে হাত না বাড়ানোটাই ভাল। প্রথম দেখাতে কোরিয়ান কেউ যদি আপনার বয়স জানতে চায় তাহলে মনঃক্ষুন্ন না হয়ে উত্তর করুন। আপনাকে সম্মান করবে নাকি বয়সের সাদৃশ্যে বন্ধু হিসেবে নেবে এটাই নির্ণয় করাটাই হচ্ছে এই জিজ্ঞাসার মূল উদ্দেশ্য।

বিভিন্ন উৎসবতো আছেই তবে আমাদের  দুই ঈদের মত ওদের আছে, সললাল্‌ এবং ছুসক্‌। এই দুটো উৎসবেই কোরিয়ানরা যার যার গ্রামের বাড়িতে বা জন্মস্থানে ছুটে যায় পারিবারিকভাবে দিনগুলোকে উদযাপন করবার জন্য। সল্‌লাল্‌ হচ্ছে নতুন বছরের প্রথম দিন। বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার, নতুন পোশাক, দিনভর আনন্দের মধ্য দিয়েই কোরিয়ানরা এই দিনটি উপভোগ করে থাকে। গড় হয়ে প্রণাম করবার মত করে বড়দের সম্মান প্রদর্শন, বাচ্চাদের সালামী দেয়া, ‘তক্‌গুক্‌’ নামের স্যুপ খাওয়া, পরিবারের সবাই মিলে হৈচৈ করা…এভাবেই ওরা স্বাগত জানায় নতুন বছররে প্রথম দিনকে। তারপর আছে ‘ছুসক্‌’। ঘরে ফসল ওঠার পর  পূর্বসূরীদের প্রতি ধন্যবাদ  এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন হচ্ছে এই দিনের বৈশিষ্ট্য। সল্‌লাল্‌ এর মত ছুসক এও অনেক রকম খাবার তৈরী করা হয়। অনেকে পূর্বসূরীদের সমাধিদর্শনে যান। এগুলো ছাড়াও আরো অনেক উৎসব আছে। সব লিখতে গেলে আসলে বিশাল কাহিনী হয়ে যাবে।

নিজেদের ঐতিহ্যের ব্যাপারে কোরিয়ানরা খুব বেশি যত্নবান। ঘুরে ফিরে দর্শনীয় স্থানগুলোতে একই রকম প্রাসাদ রয়েছে। কিন্তু তাও সবকিছু থাকে ভীষণ যত্নে। কিছু টার্ম আছে যা কোরিয়ান সংস্কৃতিতে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। যেমন, ‘তায়কোয়ানদো’ –কোরিয়ান মার্শাল আর্ট, ‘থাল ছুম’-মুখোশ নাচ, ‘পান্‌সোরি’- ঐতিহ্যবাহী লোকগীতি, হানবোক-কোরিয়ানদের পোশাক, ‘হানোক’- পুরোনো নির্মাণ শৈলিতে নির্মিত কুঁড়েঘর, ‘সোজু’-সুরা, ‘তক’-চালের তৈরী পিঠার মত, আরিরাং-একটি প্রাচীন গান… আরো অনেক কিছু। কোরিয়ানরা এমনিতে বন্ধু বৎসল। তবে ইংরেজী কম জানায় একটু অন্তর্মুখী। কোনভাবে ওদের ভাষায় কথা বলে একটু আশ্বস্ত করতে পারলে বন্ধু হয়ে যাবে খুব সহজেই।

আসলে সংস্কৃতি এত বিশাল একটা ব্যাপার যার একটা ছোট্ট অংশ নিয়ে বড় বড় বই হয়ে যায়। অল্পকথায় আমি কেবল ধারণা দিতে চেষ্টা করলাম। যাতে কোরিয়ার কথা মনে হলে এই ব্যাপারগুলো আপনাদের চোখে ভেসে ওঠে। আমাদের কোরিয়ান ভাষার সহজ পাঠের শেষে আশা করছি যে যে এখান থেকে কিছু শিখতে চেষ্টা করেছেন তাদের সকলেরই একবার কোরিয়া ভ্রমণের সুযোগ হোক। লেকচার শেষ হলেও কোর্সের পাতায় চোখ রাখব ঠিকই। আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকলে জানাতে পারেন। আপনাদের আগ্রহ থাকলে আরেকটু এডভান্সড কোর্স হতে পারে। সকলের জন্যে শুভ কামনা। সবাই ভাল থাকুন,সুস্থ থাকুন।

 

 

 

Comments

comments

About the author

রিফাত ফারজানা

আমি রিফাত ফারজানা পড়াশোনা করেছি মূলত সমাজবিজ্ঞানের ওপর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান পড়াকালিন সময়ে মায়ের উৎসাহে ভর্তি হই আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের কোরিয়ান ভাষা বিভাগে। তারপর থেকেই কোরিয়ান ভাষার সাথে পথচলা। কোরিয়ার Chonbuk National University থেকে এক বছর মেয়াদী International Fellowship Research Program শেষ করে দেশে ফিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করি। কোরিয়ান ভাষায় উচ্চতর ডিপ্লোমা করি। তারপর যথাক্রমে কয়েকটি কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কোরিয়ান দূতাবাসের উন্নয়ন শাখায় কাজ করেছি। বর্তমানে একটি ইন্টারন্যাশনাল এনজিওতে কাজ করছি পথবাসীদের জীবনমান উন্নয়ন নিয়ে। এছাড়াও একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরিয়ান ভাষার খন্ডকালিন শিক্ষক হিসেবে তালিকাভূক্ত আছি।

Leave a Reply