«

»

জানু. 07

কম্পিউটার ভিশন পরিচিতি – লেকচার ১ – বাংলাদেশের পতাকা কীভাবে দেখলাম?

[কোর্সের মূল পাতা | নিবন্ধনের লিংক | পরবর্তী লেকচার]

 

 

ভিডিওর লিংক (http://www.youtube.com/watch?v=wAl4REKXYis)
——————————————————————————————–
যন্ত্রকে দেখা শেখানোর আগে চলুন দেখে নেই আমরা মানুষেরা কি করে দেখি? মানুষ দেখে তার চোখ ও মস্তিষ্ক দিয়ে। এই দেখার ও পরবর্তীতে বোঝার প্রক্রিয়ার প্রথম অংশ সম্পাদন করে আমাদের চোখ। আলো চোখে প্রবেশ করে লেন্স দ্বারা ফোকাস হয়ে রেটিনার  আলোক-সংবেদনশীল কোষের ঊপরে পড়ে। এই রেটিনাতে প্রধানত দুই ধরনের আলোক-সংবেদনশীল কোষ থাকে।

  • রড– যা Fovea বাদে রেটিনার অন্যান্য অংশে থাকে ও অত্যন্ত কম আলোতে কাজ করে।
  • কোন–প্রধানত Fovea তে পাওয়া যায়। রং প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ এরাই সম্পাদন করে।

কোন আবার তিন ধরনের হতে পারে।

  • লম্বা-তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট আলোর প্রতি -সংবেদশীল (L-cone) [লাল রং]
  • মাঝারি -তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট আলোর  প্রতি -সংবেদনশীল    (M-cone)  [সবুজ  রং]
  • ছোট –  তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট আলোর প্রতি সংবেদনশীল  (S-cone) [ বেগুনী রং]

আমরা কিভাবে রং দেখি (Models of Color Vision) সেটা নিয়ে তিনটি Theory আছে।

  • Trichromatic theory
  • Opponent Process theory
  • Dual Process theory

চলুন সংক্ষেপে জেনে নেই এসব Theory-তে আসলে কি বলা হয়েছে।

  • Trichromatic theory

Tri মানে তিন। আর, তিন ধরনের  তরঙ্গ দৈর্ঘ্য- সংবেদনশীল তিন ধরনের কোন (Cone) আমাদের রেটিনাতে আছে এটাই এই Theory এর তত্ত্বকথা! একেবারে সাধারণ এই Theory দিয়ে রং এর ত্রিমাত্রিক (3D) ধারনাকে  ব্যাখ্যা করা যায়। সেই সাথে Metamerism (ভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্য-ও আমাদের রেটিনারে একই রং তৈরি করতে পারে ) ও রং- অন্ধত্ব (Color Blindness) এই Theory দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়।

  • Opponent Process theory

এই Theory আগেটির চাইতে ভালো । মানুষের মাথায় রং প্রক্রিয়া কে এই Theory আরো ভালো করে ব্যাখ্যা করতে পারে।  এটি আগেটির মতই তিন ধরনের Cone আছে তা বিশ্বাস করে। কিন্তু এই theory এর নতুন কথা
হচ্ছে Cone গুলোর কাজ বিপরীতভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। একটা ঊদাহরন দেয়া যাক। লাল রঙ L-Cone কে নাড়া দেয় সত্য, কিন্তু প্রক্রিয়াজাত হয় সবুজ এর সাথে। সুতরাং লাল এর বিপরীত রং হল সবুজ। তেমনি হলুদ এর বিপরীত রং হচ্ছে বেগুনী ও সাদা এর বিপরীত রঙ হচ্ছে কালো। এই Theory এর মাধ্যমে After-Image পরীক্ষাটি (বাংলাদেশের পতাকা দেখার) কিছুটা ব্যাখ্যা করা যায়।

  • Dual Process theory

এই Theory বলে যে উপরের দুটি Theory-ই সত্য। কিন্তু সেটি ঘটে মস্তিষ্কের ভিন্ন ভিন্ন অংশে । আলোক-সংবেদনশীল কোষেরা তিন ধরনের কিন্তু রেটিনাতে আলো প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপে Receptive Fields গুলো Oppnonent Process Theory ব্যবহার করে।

তাহলে চলুন চিন্তা করে দেখি কি করে আমরা বাংলাদেশের পতাকা কয়েক সেকেন্ডের জন্য দেখেছিলাম?

একটি 8-bit ছবিতে লাল, সবুজ ও বেগুনী রঙকে 2^8=256 টি লেভেলে ভাগ করা যায় যেখানে হিসাব শূন্য (০) থেকে শুরু  হয়। যেমন ধরুন,  কালো রং-কে R=G=B=0 বা লাল=সবুজ=বেগুনী=0 দিয়ে চিনহিত করা হয়। একইভাবে সাদা রং-কে   লাল=সবুজ=বেগুনী  =২৫৫  দিয়ে চিনহিত করা হয়।

পরীক্ষাটি যেভাবে করা হয়েছে
——————————–
এই পরীক্ষাটির সময়ের আমরা নীচের ছবিটির দিকে তাকিয়ে থেকে থেকে আমাদের চোখ ও মস্তিষ্ক-কে Adapt করে নিচ্ছিলাম।

এবং ৪০-৫০ সেকেন্ড এই রং গুলোতে Adapt করবার পরে, সাদা রঙ এর আরেকটি উইন্ডো আসার পরে আমরা লাল-সবুজের বাংলাদেশের পকাতা কয়েক সেকেন্ডের জন্য দেখতে পেলাম। এর কারন কি? ব্যাপারটিকে কি আমরা Dual Process Theory দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করতে পারি?
সে ব্যাখ্যার শুরুর আগে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমরা মানুষেরা দেখি মস্তিষ্ক দিয়ে এবং চোখ সেখানে আলো সংগ্রাহক মাত্র!

অনেকেই এটির ব্যাখ্যা করেছেন।  চলুন তাহলে তার মাঝে আমার পছন্দের একটি ব্যাখ্যা নিয়ে আলাপ করি।

আমাদের চোখ যখন একবারে প্রথম উপরের এই Pink-Cyan পতাকা দেখতে পায় তখন সে মস্তিষ্ক-এ একটি সিগনাল পাঠায়। কিন্তু পরের মূহুর্তেই (ধরে নিন পরের কয়েক সেকেন্ড) সে একই সিগনাল দেখতে পায়। আরো কয়েক সেকেন্ড পরে? একই সিগনাল। কারন, আমরা তো একই জিনিসের দিকে তাকিয়ে আছি । প্রতি মূহুর্তে একই সিগনাল পাঠানো তো বুদ্ধিমানের কাজ না। এবংচোখ- মস্তিষ্ক সেইটা ভালো করেই জানে। তাই প্রতি মূহুর্তের সিগনাল না পাঠিয়ে পরপর দুই মূহুর্তের মাঝে পার্থক্য থাকলে সেটি পাঠায় । এভাবেও চিন্তা করা যায়  যে ে  Adaptation এর কারনে যে রংগুলো বারবারে দেখেই যাচ্ছে, সেগুলোর প্রতি সংবেদনশীলতা কমে যায়।

৪০-৫০ সেকেন্ড শেষে যখন সাদা রং এর উইন্ডো আসে সেখানে  আমরা জানি লাল=সবুজ=বেগুনী  =২৫৫ (  R=G=B=255)।  চোখের জন্য এই পরিবর্তন ধরতে সময় লাগে ও এই  সময়ে সে   বৃত্ত অংশে   পাঠিয়ে যেতে থাকে লাল=২৫৫, কিন্তু সবুজ=বেগুনী =0 (কারন রং যে সাদা হয়ে গেছে সেটা চোখের বুঝে ঊঠতে সময় লাগে।)

চোখ যতক্ষন এটা বুঝে ঊঠতে পারে না ততক্ষন সে যেহেতু বৃত্ত অংশে লাল=২৫৫, কিন্তু সবুজ=বেগুনী =0 পাঠায়, ঐ সময়টুকুতে বৃত্তটি লাল দেখায়। পতাকার সবুজ অংশের জন্যও একই ব্যাখ্যা।

বাড়ীর কাজঃ
এখন আপনি একটি বাড়ীর কাজ করলেই এই পুরো ব্যাপারটা আরো পরিষ্কার হয়ে যাবে। আপনার পছন্দের যেকোন দেশের পতাকার After-Image তৈরী করে আমাদের সাথে ফেসবুকে শেয়ার করুন আর আপনার বন্ধুকে চমকে দিন! আজ যেহেতু প্রথম বাড়ীর কাজ, সেজন্য একটি সাহায্য ভিডিও রইল।

এই ভিডিওতে দেখানো হয়েছে কি করে Microsoft Paint ব্যাবহার করে জাপানের পতাকার After-Image তৈরী করা যায়।

কম্পিউটার ভিশনে স্বাগতম। ইহা দারূন মজার জিনিস। 🙂

 

সাহায্য ভিডিওর লিংক  http://www.youtube.com/watch?v=mJ4oFV71ofs

অন্যান্য লেকচারসমূহ

[কোর্সের মূল পাতা | নিবন্ধনের লিংক | পরবর্তী লেকচার]

Comments

comments

About the author

শেখ ফরিদুল হাসান

বর্তমানে কোর্স শিক্ষক Technicolor R&D, France-এ Postdoctoral গবেষক হিসাবে কর্মরত আছেন।

Leave a Reply