«

»

ডিসে. 16

নিউরোসায়েন্স লেকচার ৩ – নিউরনের কথা

[কোর্সের মূল পাতা | নিবন্ধনের লিংক]

নিউরোবিজ্ঞানের সরল পাঠ লেকচার সিরিজের লেকচার ৩

 

নিউরনের কথা

 

ভিডিও লিংক: ইউটিউব: http://youtu.be/QXoYayjYaiU

 

নিউরনের কথা

নিউরন এক অনন্য কোষ

নিউরন এক বিশেষ ধরণের কোষ বা সেল যা অন্য নিউরন অথবা অন্যান্য কোষ, পেশী বা গ্ল্যান্ডের সাথে যোগাযোগের জন্যে ব্যবহৃত হয়। ব্রেইনের প্রধান সেলই হলো নিউরন। সমষ্টিগতভাবে ব্রেইন যে এত জটিল কাজ করতে পারে, তার কারণ একক হিসাবে নিউরনগুলো ওই কাজ করে দেয়। ব্রেইনের মধ্যে কী পরিমাণ নিউরন থাকে? প্রাণীর প্রজাতি ভেদে এর পরিমাণ ১ বিলিয়ন থেকে ১০০ বিলিয়ন পর্যন্ত হতে পারে।

 

নিউরনের বিশেষায়িত কাঠামো

নিউরনের কাঠামোর দিকে তাকালে দেখা যাবে সেখানে প্রধানত: তিনটি অংশ রয়েছে। একটি সেল বডি বা কোষ দেহ, একটি লম্বা অ্যাক্সন এবং অনেকগুলো ডেনড্রাইট। সেল বডির মধ্যে থাকে নিউক্লিয়াস সহ কোষের সব অংশ। বৈদ্যুতিক ভাবে উত্তেজিত করা যায় এ ধরণের অ্যাক্সন সেল বডি থেকে শুরু হয় এবং অনেক ক্ষেত্রেই তারা শাখা উপশাখায় বিভক্ত হয় এবং সব শেষে নার্ভ প্রান্ত বা নার্ভ টারমিনাল নামক অংশে গিয়ে শেষ হয়। ডেনড্রাইটগুলো সেল বডি থেকে উৎপন্ন হয় এবং অন্যান্য নিউরন থেকে পাঠানো তথ্য গ্রহণ করে। এক নিউরন অন্য নিউরনের সাথে যে সংযোগস্থলে যুক্ত থাকে তাকে সাইন্যাপ্স বলে। মাইক্রোস্কোপের নীচে নিউরনের সেলবডি এবং ডেনড্রাইটকে অসংখ্য সাইন্যাপসে আবৃত অবস্থায় দেখা যায়। নিউরন তার অ্যাক্সন বরাবর বৈদ্যুতিক সংকেত চালিত করে, যার অতিক্রান্ত দূরত্ব এক ইঞ্চির কয়েক ভাগের মতো ছোট থেকে শুরু করে তিন ফুট বা তারও বেশি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কিছু অ্যাক্সনের চারপাশে মায়েলিন শীথ বা মায়েলিন আবরণ নামের একটি আবরক থাকে, যা ওই অ্যাক্সনের মধ্যে দিয়ে বৈদ্যুতিক সংকেত প্রবাহের গতি অনেক বাড়িয়ে দেয়। এই শীথ বা আবরণ কীসের দ্বারা গঠিত? ব্রেইনের মধ্যের নিউরনের অ্যাক্সনের ক্ষেত্রে এই শীথ গঠিত হয় ‘ওলিগোডেনড্রোসাইট’ নামের এক ধরণের সেল দিয়ে। আর প্রান্তীয় নার্ভাস সিস্টেম এর ক্ষেত্রে সেটি হয় স্চুয়ান সেল নামক বিশেষ এক ধরণের সেল দিয়ে।

 

নিউরোনাল মেমব্রেনের মধ্য দিয়ে আয়নের চলাচল ও অ্যাকশন-পটেনশিয়ালের উৎপত্তি

নিউরনের মেমব্রেন বা কোষপর্দায় আয়ন চ্যানেল নামের এক ধরণের সুড়ঙ্গ বা ছিদ্র থাকে যেগুলোর খোলা বা বন্ধ হবার মাধ্যমে বিভিন্ন আয়ন ও চার্জযুক্ত অণু নিউরনের মধ্যে ঢুকতে ও বাইরে যেতে পারে। এভাবেই নিউরনের মধ্যে দিয়ে ইলেকট্রিক ইম্পালস বা বৈদ্যুতিক তাড়নার মাধ্যমে তথ্য প্রবাহিত হয়। এই আয়নের উপস্থিতি অথবা অনুপস্থিতির কারণে নিউরনের মেমব্রেনের উপরে ভোল্টেজ বা বিভবের পার্থক্য সৃষ্টি হয়।

নিউরনের মেমব্রেনের ভেতরের দিকে ও বাইরের দিকে চার্জের পার্থক্যের উপরে নির্ভর করে নিউরণের ইলেকট্রিক ইমপাল্স সৃষ্টি করার ক্ষমতা। নার্ভ ইমপালস সৃষ্টির মুহূর্তে মেমব্রেনের কোন একটি অংশে হঠাৎ চার্জের বৈপরীত্য ঘটে, যার মানে হলো, সেলের ভেতরের ‘নেট’ নেগেটিভ চার্জ হঠাৎ করে ‘নেট’ পজেটিভ চার্জে পরিণত হয়। এই পরিবর্তনকে বলে “অ্যাকশন পটেনশিয়াল”। সাধারণ অবস্থায় বিশ্রামরত নিউরনের বাইরে প্রচূর সোডিয়াম আয়ন থাকলেও ভেতরে খুব কম থাকে। এ কারণে বাইরের চার্জ পজেটিভ ও ভেতরের চার্জ নেগেটিভ হয়। অ্যাকশন পটেনশিয়ালের সময় আয়ন চ্যানেল নামের সুড়ঙ্গ পথে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম আয়নের চলাচলের কারণে মেমব্রেনের দুইপাশে এরকম চার্জের বৈপরীত্য ঘটে থাকে। অ্যাকশন পটেনশিয়ালের মাধ্যমেই নার্ভের মধ্য দিয়ে তাড়না সামনের দিকে অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে এগিয়ে যায়।

 

নিউরোট্রান্সমিটারের নি:সরণ

ভোল্টেজের ব্যবধানের এই ঘটনাটি যখন অ্যাক্সনের একদম শেষে গিয়ে পৌছায়, তখন সেই শেষ প্রান্ত থেকে এক ধরণের অণু বের হয় যাদেরকে সাধারণ ভাবে নিউরোট্রান্সমিটার বলে। নিউরোট্রান্সমিটার অণুসমূহ হলো ব্রেইনের রাসায়নিক বার্তাবাহক, যারা একটি নার্ভ প্রান্ত থেকে রিলিজ হয়ে আন্ত:নিউরনীয় স্থান বা সাইন্যাপ্স অতিক্রম করে অন্য নিউরনের কিংবা অন্য সেল এর মেমব্রেনের উপরে রেসেপ্টরের সাথে সংযুক্ত হয় বা গৃহীত হয়।

রিসেপ্টর শব্দটির অর্থ হল গ্রাহক। এরা সাধারণত বেশ বড় প্রটিন হয় যাদের এক প্রান্তে লাইগ্যান্ড সংযুক্ত হয়। লাইগ্যান্ড বলতে বোঝানো হয় যে অণু রিসেপ্টরের সাথে সংযুক্ত হয়। রিসেপ্টরের সাথে কেবল নির্দিষ্ট কাঠামোর অণুই খাপে খাপ বসানোর মতো করে সংযুক্ত হতে পারে এবং নির্দিষ্ট সংকেত পরিবহন করতে পারে। এখানে “সংকেত পরিবহন” বাংলা টার্মটি আমি বায়োকেমিস্ট্রির বহুল ব্যবহৃত “সিগন্যাল ট্রান্সডাকশন” এর জন্য ব্যবহার করেছি।

পরবর্তী লেকচারে আমরা কিছু নিউরোট্রান্সমিটার ও নিউরোমডুলেটর সম্পর্কে জানবো।

 

 

Comments

comments

About the author

mamoonrashid

আমি ১৯৯৭ সালে ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৯৯ সালে নটরডেম কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করি। এর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে ভর্তি হয়ে বি ফার্ম পাশ করি এবং বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের বিপণন বিভাগে যোগ দিই। পরের বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজি বিভাগে ভর্তি হই এবং একই সঙ্গে চাকুরী বদল করে স্কয়্যার ফার্মাসিউটিক্যালস এর আন্তর্জাতিক বিপণন বিভাগে যোগ দিই। ২০০৭ সালের দ্বিতীয়ার্ধে আমি কর্পোরেট থেকে অ্যাকাডেমিয়া জগতে সরে আসি এবং একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মাসি বিভাগে শিক্ষক হিসাবে যোগ দিই। ২০০৮ সালের অগাস্ট মাসে আমি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করতে চলে আসি। আমার গবেষণার ক্ষেত্র হলো নিউরোসায়েন্স। মৃত্যুরত নিউরন কর্তৃক নিউরোলাইসিন নামক একটি এনজাইমের অতিরিক্ত উৎপাদন হলো আমার গবেষণার মূল বিষয়।

অনার্স পড়ার সময় আমি একটি ভারতীয় আইটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পূর্ণ বৃত্তি লাভ করি, যার মাধ্যমে তাদের ঢাকাস্থ ক্যাম্পাস থেকে আমি আইটি এর উপরে একটি তিন বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করি। ওয়েবসাইট ডেভেলোপার ও প্রোগ্রামার হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমি অনিয়মিত ভাবে কিছু বেতনভুক্ত কাজ করেছিলাম। তবে দীর্ঘদিন চর্চা থেকে দূরে থাকার কারণে আজ অনেক কিছুই ভুলে গেছি।

২০০৭ সালের জানুয়ারীতে জিআরই পরীক্ষা দিয়ে যখন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করছি, তখন আমি লক্ষ্য করি যে, বাংলাদেশী তরুণদের জন্যে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা এবং টিউটোরিং ও সঠিক কাউন্সেলিং সেবা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এই তাড়না বোধ থেকেই কয়েকজন সমমনা বন্ধুকে নিয়ে আমি স্ব উদ্যোগে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণদের নিয়ে সেমিনার ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি আন্দোলন শুরু করি। যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগ পর্যন্ত দেড় বছরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক স্টুডেন্ট ও শিক্ষককে আমি প্রত্যক্ষভাবে জিআরই পরীক্ষার জন্যে প্রস্তুতি নিতে অথবা কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে উপকার করতে চেষ্টা করেছি। অনেকের কাছে জিআরই মামুন প্রতীকী নামে শুধু এ কারণেই আমি পরিচিত।

আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনার এক বড় অংশ জুড়ে ব্যক্তি মামুন রশিদ নয়, বরং আমার দেশের উচ্চশিক্ষিত তরুণ সমাজ। আমি স্বপ্ন দেখি একটি মানবহিতৈষী প্রকল্পের, যেখানে দেশের ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রফেশনাল ও একাডেমিক পর্যায়ের সবার মধ্যে একটি দৃঢ় নেটওয়ার্ক থাকবে এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবাই নি:স্বার্থ ভাবে একে অন্যের উপকারে আসবে। যুক্তরাষ্ট্রের মেধাস্রোতে ভারত ও চীনাদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে থাকা আমার দরিদ্র মাতৃভূমির জন্যে একদিন কিছু একটা করতে পারবো এই সুখস্বপ্নই আমাকে প্রতি মুহূর্তে সামনে এগিয়ে যেতে প্রেরণা দেয়।

Leave a Reply