«

»

অক্টো. 15

প্রোটিনের গাঠনিক জীববিজ্ঞানঃ লেকচার ৩ক- গাঠনিক রসায়ন-দ্বিতীয় মাত্রার গঠন

পূর্ববর্তী লেকচার | কোর্সের মূল পাতা | নিবন্ধনের লিংক ]

আজকের লেকচারটিতে পড়ানো হয়েছে প্রোটিনের দ্বিতীয় মাত্রার গঠন নিয়ে। দ্বিতীয় মাত্রার গঠনকে বলে প্রোটিনের প্রাথমিক গাঠনিক একক। তার মানে, এই মাত্রার গঠন প্রোটিনের সম্পূর্ণ গঠন লাভের প্রথম ধাপ। এই লেকচারটি বোঝার জন্য ভিডিও এবং টেক্সট দুইটাই অনুসরন করা জরুরী বলে মনে করি।

সহায়ক বই: Biochemistry, Stryer et al.

 

 

সংশোধনীঃ ভিডিও লেকচারটিতে বেটা স্ট্র্যান্ডকে ভুলভাবে ‘বেটা হেলিক্স’ বলা হয়েছে দুইএক যায়গায়।

 

যারা ইউটিউব ব্যবহার করতে পারছেন না তাদের জন্য বিকল্প লিংক

 

ক) পেপটাইড বন্ধন দুই প্রকারঃ

আমরা জানি এমিনো এসিড পেপটাইড বন্ধনে যুক্ত হয়ে প্রোটিনের প্রাথমিক গঠন তৈরি করে। প্রোটিনে সাধারনত দুই ধরনের পেপটাইড বন্ধন দেখতে পাওয়া যায়। ট্রান্স এবং সিস।

উপরে একটি ডাইপেপটাইডের দুই ধরনের পেপটাইড বন্ধন (মাঝখানে গোলাপি রঙ) দেখানো হচ্ছে। ট্রান্স পেপটাইড বন্ধনে  একটি এমিনো এসিডের ভ্যারিয়েবল গ্রুপ (সবুজ) অন্য এমিনো এসিড থেকে দূরবর্তী অবস্থানে আছে। কিন্তু সিস বন্ধনে (ডানের ছবি) এর উল্টা ঘটে, যেখানে দেখা যাচ্ছে ভ্যারিয়েবল গ্রুপগুলো খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। ফলে দুজনের মধ্যে সংঘর্ষের সম্ভাবনা দেখা দেয়, যাকে স্টেরিক কলিশান বা স্টেরিক হিনড্রেন্স  (steric collision or steric hindrance) বলা হয়। প্রোটিনে ট্রান্স বন্ধনটি সিস বন্ধনের চেয়ে অনেক অনেক বেশি দেখা যায়, কারন এই বন্ধন গঠন প্রোটিন চেইনে এমিনো এসিডের পাশাপাশি থাকা এবং সম্পূর্ণ গঠন তৈরির জন্য সুবিধাজনক (কম সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনা)।

 

খ) পেপটাইড বন্ধন হল প্ল্যানারঃ

লিনাস পাউলিং নামে একজন নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী দেখিয়েছিলেন যে  প্রোটিনের এই পেপটাইড বন্ধন গুলো হল প্ল্যানার মানে একটি পেপটাইড বন্ধন একটি প্লেইনে বা সমতলে অবস্থান করে। নিচের ছবিটিতে একটি প্ল্যানার পেপটাইড বন্ধন দেখানো হচ্ছে। হলুদ এলাকাটিতে (যেটা একটা সমতল) একটি এমিনো এসিডের কার্বক্সিল কার্বন এবং আরেকটি এমিনো এসিডের এমিনো নাইট্রোজেন এর সঙ্গে বন্ধনটি একটি প্লেইন এ আছে বা এই সমতলে আছে। আবার একটা পেপটাইড বন্ধন এর তল পাশের পেপটাইড বন্ধনের সাথে একই সমতলে থাকেনা।

 

গ) টরশন কোণঃ

উপরের ছবিটি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে প্রোটিনের ব্যাকবোন চেইন বা মূল চেইনে আরো দুইটা বন্ধন আছে। Cα এর সঙ্গে কার্বক্সিল কার্বনের (Cα-C)যেই বন্ধন আর Cα এর সঙ্গে নাইট্রোজেনের (Cα-N) যেই বন্ধন সেটা। যেহেতু পেপটাইড বন্ধন হল প্ল্যানার সেহেতু এমিনো এসিড চেইনকে বিভিন্নভাবে ভাঁজ হতে গেলে অন্য দুইটি বন্ধনকে ফ্লেক্সিবল হতে হবে। আসলেই বন্ধন দুইটি ফ্লেক্সিবল (উপরের ছবিতে বন্ধনদুটির উপরে ঘোরানো চিহ্ন দিয়ে দেখানো হয়েছ) এবং এরা দুইটি প্ল্যানার অংশের মধ্যে কোণ দুইটি তৈরি করে। এভাবে Cα এর সঙ্গে তৈরি হওয়া দুই ধরনের কোণকে বলে ফাই (Φ, Cα-C এর মধ্যে), এবং সাই (Ψ, Cα-N এর মধ্যে) কোণ। পেপটাইড বন্ধনের ফিক্সড কোণকে বলে ওমেগা কোণ। আর এই তিনটি কোণকে একসঙ্গে বলে টরশন কোণ। টরশন কোণ হল সেই ধরনের কোণ যারা দুইটি প্লেইন বা সমতলের কোণ তৈরি করে। নিচের ছবিতে সেটাই দেখানো হয়েছেঃ

এখানে দেখা যাচ্ছে ফাই এবং সাই কোণের বিভিন্ন মান-এর জন্য পেপটাইড সমতলগুলো বিভিন্নভাবে বেঁকে আছে।

 

ঘ) রামাচন্দ্রনের প্লটঃ

পেপটাইডের মধ্যে ফাই (Φ ) এবং সাই (Ψ) কোণের মানগুলিকে রামাচন্দ্রন নামক একজন ভারতীয় বিজ্ঞানী একটি প্লটের মধ্যে সাজিয়েছেন। একে রামাচন্দ্রনের প্লট বলা হয়। তিনি যা করেছেন তা হল, অনেকগুলো ছোট ছোট পেপটাইড নিয়ে কম্পিউটারে তাদের Φ এবং Ψ মানগুলিকে বসিয়ে দেখেছেন কোন মানগুলি এনার্জেটিকালি সুবিধাজনক এবং যেখানে কোন স্টেরিক কলিশান হবেনা, অথর্াৎ কোণের কোন মানগুলি প্রোটিন চেইনে থাকা সবচেয়ে সুবিধাজনক। নিচের ছবিটি লক্ষ্য করুনঃ

 

ছবির মাঝখানে প্লটটিতে X-axis বরাবর পেপটাইডের Φ কোণের মান এবং Y-axis বরাবর পেপটাইডের Ψ কোণের মান -১৮০ থেকে +১৮০ ডিগ্রী পর্যন্ত সাজানো আছে। এবার যদি পেপটাইড চেইনের কোণগুলির মান এখানে বসাতে থাকি ডট দিয়ে দিয়ে তবে কয়েকটি যায়গায় ডটগুলি বেশি মাত্রায় আসবে (সবুজ অংশগুলি)। মানে হল, এসব যায়গাতে কোণগুলি বেশি তৈরি হবে একটি পেপটাইডে। এখানে মূলতঃ তিনটি যায়গায় সবুজের আধিক্য দেখা যাচ্ছে। এই তিন যায়গার কোণগুলি তিন ধরনের দ্বিতীয়মাত্রার গঠন নির্দেশ করে। পরের অংশে এটা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্লটের সাদা অংশগুলো হল এমন সব যায়গা যেখানে Φ এবং Ψ কোণের মান এমন গঠন তৈরি করবে যা সাইড চেইন গুলোর মধ্যে সংঘর্ষ বা স্টেরিক কলিশান ঘটাবে। পেপটাইডের মধ্যে এরকম কোণ প্রায় কখনোই লক্ষ্য করা যায়না (শুধু গ্লাইসিন এমিনো এসিডের বন্ধন ছাড়া)। মনে রাখা দরকার, পেপটাইডের মধ্যে আলাদা আলাদা এমিনো এসিডের জন্য এই ধরনের রামাচন্দ্রনের প্লট তৈরি করা যায়, যেখান থেকে আমরা অনুমান করতে পারি রামাচন্দ্রনের প্লটের কোন যায়গাতে কোণের মান থাকলে সেটা কোনরকম দ্বিতীয় মাত্রার গঠন তৈরি করবে।

 

ঙ) দ্বিতীয় মাত্রার গঠনঃ

তিন ধরনের দ্বিতীয় মাত্রার গঠন লক্ষ্য করা যায়ঃ আলফা হেলিক্স (α-helix), বেটা স্ট্র্যান্ড বা বেটা শিট (β-strand) এবং লুপ (loop)।

ঙ-১) আলফা হেলিক্সঃ

আলফা হেলিক্স হল এমিনো এসিড চেইনের একধরনে ব্যারেলে আকৃতির পেঁচানো গঠন।

উপরের ছবিটিতে আলফা হেলিক্সের গঠন দেখা যাচ্ছে। এই হেলিকাল গঠনটি একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্নে হয়। প্রতিটা হেলিকাল টার্ন এ ৩.৫ টি এমিনো এসিড থাকে (বামপাশের ছবি)। মাঝখানের ছবিটি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে আলফা হেলিক্সের আণবিক গঠনটি এমনভাবে আছে যাতে প্রথম এমিনো এসিডের কার্বক্সিল গ্রুপের সাথে পঞ্চম এমিনো এসিডের এমিনো গ্রুপের মধ্যে হাইড্রোজেন বন্ধন তৈরি হতে পারে। এভাবে একটার পর একটা (যেমন দ্বিতীয়টার সঙ্গে ষষ্ঠটা, তৃতীয়টার সঙ্গে সপ্তমটা ইত্যাদি) হাইড্রোজেন বন্ধন তৈরি করে এই গঠনকে স্থিতি অবস্থা প্রদান করে। এবার দেখি আলফা হেলিক্স রামাচন্দ্রনের প্লটে কেমন দেখা যায়ঃ

 

 

উপরের ছবিটিতে রামাচন্দ্রনের প্লটের লাল অংশের যায়গা দুটিতে যদি Φ এবং Ψ এর মান থাকে তবে পেপটাইডটি হবে একটি আলফা হেলিক্স। তবে দুইধরনের আলফা হেলিক্সের জন্য প্লটের দুইটি যায়গায় মানগুলি অবস্থিত। একটা হল রাইট হ্যান্ডেড হেলিক্স (নিচের ছবির ডানে), আরেকটি হল লেফ্ট হ্যান্ডেড হেলিক্স। তবে প্রোটিনে রাইট হ্যান্ডেড হেলিক্স বেশি দেখা যায়।

 

ঙ-২) বেটা স্ট্র্যান্ডঃ

আরেকধরনের দ্বিতীয় মাত্রার গঠন হল বেটা স্ট্র্যান্ড।

বেটা স্ট্র্যান্ড বা বেটা শিট তৈরি হয় যখন এমিনো এসিড চেইন পেঁচানো অবস্থায় না থেকে একটু ছড়ানো অবস্থায় থাকে (উপরের প্রথম ছবি) এবং একটা শিট বা চাদরের এর মত আকার নেয় (উপরের দ্বিতীয় ছবি, মাঝখানে)। এই আকার গুলিকে তীর চিহ্ন দিয়ে দেখানো হয়। তীরটা যেদিকে ফেরানো সেদিকে থাকে কার্বক্সিল গ্রুপ। এইরকম ছড়ানো আকৃতির কারনে একটা বেটা স্ট্র্যান্ড অন্য একটি এক বা একাধিক স্ট্রান্ডের সঙ্গে হাইড্রোজেন বন্ধন তৈরি করে স্থিতি অবস্থা তৈরি করে। তীর বা দিকের উপর ভিত্তি করে এরা প্যারালাল, এন্টি-প্যারালাল বা মিশ্রণ হিসেবে গঠন তৈরি করতে পারে। নিচের ছবিগুলি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে হাইড্রোজেন বন্ধন তৈরির প্যাটার্নে পরিবর্তন হচ্ছে প্যারালাল এবং এন্টি-প্যারালাল গঠনে।

এন্টি-প্যারালাল বেটা স্ট্র্যান্ড

প্যারালাল বেটা স্ট্র্যান্ড

 বেটা স্ট্র্যান্ডের রামাচন্দ্রন প্লট

আবার এখন যদি রামাচন্দ্রন প্লটের দিকে তাকাই তবে দেখতে পাবো উপরের ছবির লাল অংশটিতে Φ এবং Ψ এর মান থাকলে সেটা বেটা স্ট্র্যান্ডের গঠন হয়। লক্ষ্য রাখা দরকার যে, বেটা স্ট্র্যান্ড তৈরির জন্য Φ এবং Ψ কোণ দুইটি বেশ কিছু এলাকায় মানটি দেয় তবে সব মানই প্লটের উপরের বাম দিকের ঘরে।

এসাইনমেন্টঃ

এখন তাহলে একটা এসাইনমেন্ট করে ফেলা যাক। মনে করি একটা পেপটাইডের অর্ধেক ফাই এবং সাই কোণের মান যথাক্রমে -৭০ এবং -৬০; আর বাকি অর্ধেক ফাই এবং সাই কোণের মান যথাক্রমে -৭০ এবং ১২০। তাহলে রামাচন্দ্রনের প্লট থেকে কি বলা যায় প্রোটিনটি আলফা হেলিক্স বা বেটা শিট সমৃদ্ধ হবে? উত্তর হবে উভয়ের মিশ্রণ। কারণ রামাচন্দ্রনের প্লটে কোণগুলির মান অর্ধেক হয় রাইট হ্যান্ডেড আলফা হেলিক্সের যায়গায় আর বাকি অর্ধেক হয় বেটা শিট বা স্ট্র্যান্ডের যায়গায়।

ঙ-৩) লুপঃ

উপরে উল্লেখিত দ্বিতীয় মাত্রার গঠনগুলোকে একধরনের ফ্লেক্সিবল এমিনো এসিডের চেইন দিয়ে যুক্ত থাকতে দেখা যায়। এদেরকে লুপ বলে।

রিভার্স টার্ন নামক লুপের গঠন

উপরের প্রথম ছবিটিতে একটি লুপের আণবিক গঠন দেখানো হয়েছে। এখানে প্রথম এমিনো এসিডের সঙ্গে চতুর্থ এমিনো এসিড হাইড্রোজেন বন্ধন তৈরি করে গঠনটিকে স্থিতি দিয়েছে, এই লুপটিকে বলে রিভার্স টার্ন। আর দ্বিতীয় ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে কয়েকটি বেটা স্ট্র্যান্ড (দ্বিতীয় মাত্রার গঠন) যুক্ত হয়েছে কয়েকটি লুপ দিয়ে (মেরুন রঙ)। এভাবে বিভিন্ন সংখ্যায় বেটা স্ট্যান্ড, আলফা হেলিক্স এবং লুপ নিয়ে একটা সম্পূর্ণ প্রোটিন আকার লাভ করে।

পরবর্তী লেকচার ৩(খ) তে  থাকছে রামাচন্দ্রন প্লট নিয়ে আরো কিছু আলোচনা এবং প্রোটিনের তৃতীয় ও চতর্ুথ মাত্রার গঠন।

Sorry, the file you have requested has been deleted.

Make sure that you have the correct URL and the owner of the file hasn't deleted it.

Get stuff done with Google Drive

Apps in Google Drive make it easy to create, store and share online documents, spreadsheets, presentations and more.

Learn more at drive.google.com/start/apps.

Comments

comments

About the author

খান ওসমান

আমি টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের মলিকিউলার জেনেটিক্স এর একজন পিএইচডি ছাত্র। কাজ করছি ম্যালেরিয়া জীবাণুর একধরনের প্রোটিন নিয়ে। আমার কাজ মূলতঃ এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফির মাধ্যমে প্রোটিনের গঠন নির্ণয়, এর সঙ্গে ম্যালেরিয়া রোগের সম্পর্ক নির্ধারণ এবং ঔষধ তৈরিতে সহায়তা করা ইত্যাদি বিষয়ের উপর। স্নাতক এবং মাস্টাসর্ ডিগ্রী অজর্ন করেছি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুজীববিজ্ঞান নিয়ে। আমার বতর্মান ল্যাব এর ওয়েবসাইটে ঢু মেরে দেখতে পারেন এখানে: www.thesgc.org.

Leave a Reply