মহানায়ক অনন্ত জলিল ২২ তলা থেকে লাফ দিয়েছিলেন সিনেমার স্বার্থে । উপর থেকে তিনি যখন পড়ছিলেন প্রতিটা মূহুর্তে তার বেগ কত সেটা বের করা যায় ডিফারেন্সিয়েশন জেনে। এই লেকচারের আওতায় সেটা নেই, তবে সেটা বুঝতে হলে এই লেকচারটা খুব মন দিয়ে বুঝতে হবে!
———————————————————————————————————————————————————-
———————————————————————————————————————————————————-
ক্যালকুলাসের অ-আ-ক-খ এর মূল কোর্স পাতা
নিবন্ধন করতে চাইলে
ভগর ভগর ২.২ : ডিফারেন্সিয়েশনের মূল নিয়ম
ইউটিউবে দেখতে চাইলে এই লিঙ্কে যান।
এই লেকচারটি আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্বগুলোর একটি। এখানেই বোঝা যাবে ডিফারেন্সিয়েশন দিয়ে আমরা আসলে কী করি। যারা একটু একটু ডিফারেন্সিয়েশন জানেন তারা অনেকেই হয়তো শুনে থাকবেন x^3 (এক্স কিউবড) কে ডিফারেন্সিয়েট করলে 3x² পাওয়া যায়। এই কথাটার মানে কী? আমি আমার আগের পর্বগুলোতে বলেছিলাম ডিফারেন্সিয়েশন মানে হলো ঢাল বের করা। একটা বিন্দুতে না হয় ঢাল বের করা যায়, কিন্তু পুরো ফাংশনের ঢাল কিভাবে বের করব। এক্স কিউবের ঢাল আবার কিভাবে 3x² হয়? তার জন্য এই গ্রাফটার দিকে চোখ দেয়া যাক। এটি y= x^3 এর গ্রাফ। x এর বিভিন্ন মানের জন্য y এর বিভিন্ন মান হিসেব করে গ্রাফটাকে আঁকা হয়েছে। যেখানে x এর মান এক সেখানে y এর মান ১, যেখানে x এর মান ২ সেখানে y এর মান ২^৩=৮, যেখানে x এর মান ৩ সেখানে y এর মান ৩^৩=২৭, এইরকম করে বিন্দু বসিয়ে বসিয়ে গ্রাফটা আঁকা। আমরা ফাংশন দিয়ে লিখলে বলতে পারতাম এটা f(x)=x^3 এর গ্রাফ। এই ফাংশনের কাজ হলো যাকে পাবে তাকে ঘন করবে।
এখন বিন্দুগুলোকে অন্য একটা স্টাইলে লেখা শেখাই, যেটা খুব কাজে দেবে। আমরা দেখি f(2)=2^3=8 , তার মানে f(2) বলতে বোঝায় x এর মান যেখানে ২, সেখানে কোটি কত। এই বিন্দুটিকে আমরা (২,৮) বিন্দু বলতে পারি। ভেবে দেখুন, চাইলে এটাকে আরেকভাবেও লেখা যায় (2,f(2)) অর্থাৎ f(2) পুরোটা আসলে একটা কোটি প্রকাশ করছে। তাহলে আমরা এখন যেকোন বিন্দুর কোটিকে চালাকি করে বলতে পারব। x এর মান যেখানে ৫৫, সেখানে বিন্দুটাকে আমার লিখতে পারব (55,f(55))
এইবার আমাদের মূল চিন্তা শুরু। প্রশ্ন হচ্ছে ‘x=2 বিন্দুতে এই গ্রাফের ঢাল কত?’ যেখানে x=2 ,সেখানে y এর মান হবে 2^3=৮ অর্থাৎ আমরা আসলে (২,৮) বিন্দুতে ঢাল কত সেটা জানতে চাই। ঢাল ব্যাপারটা কী মনে আছে তো?- এটা হলো উন্নতির গতি। x এর মান এক একক বাড়ালে y যতখানি বাড়ে সেটাই ঢাল। ঢালের মান বের করতে সাধারণত দুইটি বিন্দু লাগে। সরলরেখার উপর দুইটি বিন্দু থাকলে ঢাল বের করা যায় কোটিদুইটির বিয়োগফল ভাগ ভুজ দুইটির বিয়োগফল দিয়ে। সরলরেখার ক্ষেত্রে এভাবে বের করা যায় কারণ সরলরেখাতে সব জায়গাতেই ঢাল একই থাকে। একইভাবে সে উন্নতি করতে থাকে। কিন্তু বক্ররেখার উন্নতি সব জায়গায় তো একরকম না। তাহলে (২,৮) বিন্দুতে আমরা কিভাবে ঢাল বের করতে পারি? আমরা লক্ষ করি এই গ্রাফটা ধীরে ধীরে খাড়া উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে, এটার ঢাল বেড়েই চলেছে। (২,৮) বিন্দুতে যেই ঢাল হবে (৩,২৭) বিন্দুতে নিশ্চয়ই ঢাল সেইরকম হবে না।
এই দুটো বিন্দুকে যোগ করে দিলে যেই রেখাটা পাওয়া যাবে তার ঢাল হবে (২৭-৮)/(৯-২)=১৯
কিন্তু আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি না যে, এটাই (২,৮) বিন্দুতে ঢাল। আমরা যদি (২,৮) বিন্দুতে ঢাল কত হবে বের করতে চাই , তাহলে (২,৮) এর সাথে এর খুব খুব কাছের একটা বিন্দু নিয়ে ভাবতে হবে। ধরা যাক বিন্দুটা (২.০১, ২.০১^৩ ) বা (২.০১, ৮.১২০৬০১)
তাহলে (২,৮) এবং (২.০১, ৮.১২০৬০১) বিন্দু দুইটির সংযোগ রেখার ঢাল পাওয়া যাবে
=(৮.১২০৬০১-৮)/(২.০১-১)=০.১২০৬০১/০.০১=১২.০৬০১
এটা ঢালের একটা ভালো অনুমান। কিন্তু আমরা যদি আরও নিখুঁত করে জানতে চাই আমাদেরকে আরও কাছের একটা বিন্দু নিয়ে ভাবতে হবে , এবার নিই (২.০০১,২.০০১^৩ ) বা (২.০০১,৮.০১২০০৬০০১)। এবার আগের মতো হিসাব করলে ঢাল পাওয়া যাবে
= (৮.০১২০০৬০০১-৮ )/(২.০০১-২)= ১২.০০৬০০১ । মোটামুটি আমরা একটা ‘সন্দেহ’ করতে পারি যে x=2 বিন্দুতে অর্থাৎ (২,৮) বিন্দুতে ঢাল হতে পারে ১২ । থাক আমরা এবারে আরও গাণিতিকভাবে ভাবতে চাই।
একটু আগে যে ফাংশনের স্টাইলে বিন্দু লেখা শেখালাম, সেই স্টাইলে যদি আমরা (২,৮) আর (২.০০১, ৮.০১২০০৬০০১) বিন্দু দুইটির সংযোগরেখার ঢাল বের করতাম, তখন আমরা কিভাবে লিখতাম ? আমরা লিখতাম
(2,f(2)) এবং (2,f(2.001)) বিন্দুদ্বয়ের সংযোগ রেখার ঢাল = (f(2.001)-f(2))/(2.001-2)
খেয়াল করে দেখুন f(2) আর ৮ কিন্তু একই , এটা কোটিই প্রকাশ করছে। আবার f(2.001) আর 8.012006001 ও কিন্তু একই জিনিস। তার মানে যখন আমরা এভাবে লিখছি (f(2.001)-f(2))/(2.001-2) সেখানেও উপরে আছে কোটিদ্বয়ের অন্তর নিচে ভুজদ্বয়ের অন্তর।
এখন একটা ব্যাপার বলি। ২.০০১ বিন্দুটা আমি কেন নিয়েছিলাম? যেন ২ এর থেকে অল্প একটু বেশি হয়, ২ এর খুব কাছাকাছি হয়। আমরা জানি যে এর চেয়েও কাছাকাছি নেওয়া যায়। তখন আরও নিখুঁতভাবে ঢালের মান পাওয়া যাবে। এই যে ২ এর থেকে যতটুকু বেশি আমরা নিচ্ছি , এই ০.০০১- এটাকে আমরা h নাম দিলাম। তাহলে একটু আগে লেখা ঢালের মানকে এভাবে লেখা যায়
=(f(2+h)-f(2))/(2+h-2)
=(f(2+h)-f(2))/h
এটা খুবই দারুণ একটা আকার। h এর মান যদি ০.০০১ থেকে আরও আরও ছোট হতো, আরও আরও নিখুঁতভাবে পাওয়া যেত। সবচেয়ে নিখুঁত হতো যদি h এর মান শূন্য হয়ে যেত। কিন্তু সেটা আমরা পারছি না। কারণ h=0 হলে ঢাল দাঁড়াবে = (f(2)-f(2))/0=0/0 . যেটা অনির্ণেয় আকার।
কিন্তু দাঁড়ান ! আমরা তো জানি এই অবস্থায় নিখুঁতভাবে মান জানতে কী করতে হয়। এই অবস্থায় নিতে হয় ‘লিমিট’। আমার আগের লেকচারটাতে এই জন্যেই আমি লিমিট শিখিয়ে নিয়েছি! তার মানে যখন h -> 0 , তখন যদি আমরা লিমিট দিয়ে ঢালের মান বের করি সেটাই হবে (২,৮) বিন্দুতে নিখুঁতভাবে ঢালের মান।
তাহলে (২,৮) বিন্দুতে বা (2,f(2)) বিন্দুতে নিখুঁতভাবে ঢালের মান
$latex = lim_{h to 0} frac{f(2+h)-f(h)}{h} &s=2$
আসলে এই লাইনটাকেই বলে ডিফারেন্সিয়েশনের মূল নিয়ম। এটা নিয়ে আরও কথা হবে, তার আগে যা করছিলাম, সেটা শেষ করি। ঢাল
$latex = lim_{h to 0} frac{f(2+h)-f(h)}{h} &s=2$
$latex = lim_{h to 0} frac{(2+h)^3-2^3}{h} &s=2$ [এই f ফাংশনের কাজই হলো কিউব করা]
$latex = lim_{h to 0} frac{2^3+3.2^2.h+3.2.h^2+h^3-2^3}{h} &s=2$ [ছেলেবেলার $latex (a+b)^3 &s=2$ এর সূত্র]
$latex = lim_{h to 0} frac{3.2^2.h+3.2.h^2+h^3}{h} &s=2$
$latex = lim_{h to 0} frac{ h(3.2^2+3.2.h+h^2)}{h} &s=2$
$latex = lim_{h to 0} (3.2^2+3.2.h+h^2) &s=2$
[$latex 2^3 $ কাটাকাটি করে h কমন নিলাম, তারপর h কাটলাম। h কাটতে পারি, কারণ h শূন্য নয়, tends to zero]
এখন যেই আকারে আমরা এসে পৌঁছেছি , সেখান থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, h এর মান শূন্যে গেলে ঢালের মান কোথায় যাবে। h এর মান শূন্যে পৌঁছালে $latex 3.2h+h^2 $ এই অংশটুকু শূন্য হয়ে যাবে, থাকবে $latex 3.2^2 $
অর্থাৎ (2,f(2)) বিন্দুতে ঢাল হলো $latex 3.2^2 $ বা ১২, যেটা আমরা সন্দেহ করেছিলাম।
এইবার চিন্তাশীল মানুষেরা, ভাবুন তো, এখানে যদি আমরা (5,f(5)) বিন্দুতে ঢাল চাইতাম, ঢাল কত হত? সেটা হত
$latex = lim_{h to 0} frac{f(5+h)-f(h)}{h} = 3. 5^2 &s=2$
(1,1) বিন্দুতে ঢাল হতো $latex 3.1^2 $, (3,27) বিন্দুতে ঢাল হতো $latex 3.3^2 $ , (p,f(p)) বিন্দুতে ঢাল হতো $latex 3.p^2 $ , (x,f(x)) বিন্দুতে ঢাল হতো $latex 3.x^2 $
অর্থাৎ f(x)= x^3 এর যেকোন বিন্দুতে ঢাল বের করার ফর্মুলা হলো $latex 3.x^2 $ । এই ব্যাপারটাকেই বলা হয় যে x^3 কে ডিফারেন্সিয়েট করলে পাওয়া যায় $latex 3x^2 $ ।
এটাকে লেখা হয় এভাবে
$latex = frac{d}{dx} (x^3) = 3x^2 &s=2$
আবার f(x) কে ডিফারেন্সিয়েট করলে কী হবে সেটাকে f এর উপরে একটা প্রাইম চিহ্ন দিয়েও দেখানো যায়।
$latex = frac{d}{dx} (f(x)) = f'(x) &s=2$
একটু আগে যেটা লিখেছিলাম, সেটার সাধারণ আকার টাও এখন লেখা যেতে পারে, f(x) এর কোন একটা বিন্দু (x,f(x)) এ ঢাল=
$latex = lim_{h to 0} frac{f(x+h)-f(h)}{h} &s=2$
$latex = frac{d}{dx} f(x)=f'(x)= lim_{h to 0} frac{f(x+h)-f(h)}{h} &s=2$
এটাই ডিফারেন্সিয়েশনের মূল নিয়মের বর্ণনা। আমরা এরপর এটাকে আরও গভীরভাবে দেখতে শিখব। অনেক কিছু দেখার আছে, এখানে- যেটা না দেখলে ডিফারেন্সিয়েশনকে অনুভব করা যাবে না।
————————————————————————-