(আজকে ফাইন্যান্স ১০১ – অর্থবিজ্ঞান পরিচিতি কোর্সের প্রথম ক্লাস যার পুরোটাই টেক্সট আকারে দেয়া । আমার জন্য অডিও আপলোড করা একটু সমস্যা, তাই আপনাদের খানিকটা কষ্ট করে পুরোটা পড়তে হবে। তবে খুব সমস্যা হলে জানাতে পারেন । ঈদের ব্যস্ততা শেষ করে কুইজও দিয়ে দিলাম । )
এখানে কোর্সে নিবন্ধন করুন
কোর্স পরিচিতি দেখুন
ফাইন্যান্স কী এবং কেন:
১.১: অর্থের ব্যবহার কেন জানতে হবে?
আপনার ছোটবেলায় এক রোযার ঈদের বিকেল বেলার কথা । মনটা বেজায় ফুরফরে, কারণ এবার ঈদ সেলামীর আমদানী আশাতীত রকম ভাল হয়েছে । কেন জানি এবার বড়রা সবাই খোশমেজাজে ছিল, তাই সকাল বেলা থেকে যাকে যাকে সালাম করেছেন, মোটামুটি সবাই হাতভরে সেলামী দিয়েছে । দশটাকার কম তো কেউ পকেট থেকে বেরই করেনি ! বিকেলবেলা পর্যন্ত হিসাব করে দেখলেন, সব মিলিয়ে ২৭০ টাকা সেলামী পেয়েছেন; এর মধ্যে বিভিন্ন আত্মীয়দের বাসায় যাতায়াত ভাড়া বাবদ খরচ পড়েছে ২৫ টাকা, ইগলুর নতুন কোনআইসক্রিম খেয়েছেন ২০ টাকা আর সকালে বাসার সামনে বসা চটপটির দোকানে চটপটি খেয়েছেন ১০ টাকা । বর্তমানে আপনার কাছে নগদ আছে ২১৫ টাকা । অবশ্য এই টাকা দিয়ে কি করবেন আগেই ঠিক করা । ঈদের ছুটির আগে স্কুলের সামনে যে খেলনার দোকানটা আছে, সেখানে একটা নতুন টয়ট্রেন দেখে খুব পছন্দ হয়েছে, দাম ১৮০ টাকা । বন্ধুদের কাছে বলা আছে, ঈদের দিনই ট্রেনটা কিনে ফেলবেন – যদিও একটু সংশয় ছিল, না জানি এবার কি রকম ঈদ সেলামী পাওয়া যায় ! তবে আজ যা সেলামী পেয়েছেন তাতে ট্রেনটা কিনেও হাতে টাকা থাকবে, তাই আপনি বেজায় খুশী ।
বিকেলবেলা ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে খেলনার দোকানে পৌছালেন টয়ট্রেন কেনার জন্য । দোকানী ট্রেন বের করে আপনার সামনে দিয়েছে, আপনি কেনার আগে শেষবারের মত সেটাকে পর্যবেক্ষণ করছেন । ঠিক এমন সময় শোকেসে রাখা একটা নতুন খেলনা আপনার চোখে পড়লো । দোকানী জানালো এটা একটা হ্যান্ডগেম, যখন যেখানে খুশি খেলা যাবে, সাথে নিয়ে ঘোরা যাবে – মারাত্মক জিনিষ; এক দেখাতেই আপনার পছন্দ হয়ে গেল । মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন ট্রেনের বদলে হ্যান্ড গেমটা কিনবেন; ট্রেনতো আপনার আগেও ছিল । কিন্তু জিনিষটার দাম ২৫০ টাকা ! আপনার আছে ২১৫ টাকা, আরো ৩৫ টাকা লাগবে । ছোট ভাইয়ের কাছে ধার চাইলেন ৩৫ টাকা, আপনার মত সেও এবার ভাল সালামী পেয়েছে । ওকে বোঝালেন, গেমটা কেনা হলে তো দুই ভাইই খেলা যাবে । কিন্তু সে দ্বিধাগ্রস্থ – দোনোমনো করছে কি করবে । তাই ওকে প্রস্তাব দিলেন স্কুলের হাতখরচ বাবদ দৈনিক যে ৫ টাকা করে পান, তা থেকে জমিয়ে যে টাকা নিচ্ছেন তার কিছু বেশিই ওকে ফেরত দেবেন । শেষমেষ রফা হল ছোটভাই ২০ টাকা দেবে, কিন্তু শর্ত হচ্ছে দুই সপ্তাহ পর তাকে ২২ টাকা ফেরত দিতে হবে – সেই সাথে কেনার পরপরই ওকে একবার গেম খেলতে দিতে হবে – আপনার রাজি না হয়ে উপায় নাই । তাহলে সবমিলিয়ে ২৩৫ টাকা হল, এখনো ১৫ টাকা বাকি । সব দিক চিন্তা করে মনে হল, মায়ের কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ ঘ্যানঘ্যান করলেই বাকি ১৫ টাকা পাওয়া যবে । সত্যি সত্যি মায়ের কাছে কিছুক্ষণ চাইতেই টাকাটা পাওয়া গেল । আপনি সাথেসাথে ছোটভাইকে সঙ্গে নিয়ে বেড়িয়ে গেলেন এবং সন্ধ্যায় চকচকে নতুন হ্যান্ডগেম নিয়ে বাসায় ফিরলেন; এবার বন্ধুরা সব তাক লেগে যাবে ! স্কুল পড়ুয়া সেই ছোট্ট আপনি কত আগে থেকেই বিভিন্ন আর্থিক সিদ্ধান্ত নেয়া শুরু করেছেন, সেটা কখনো ভেবে দেখেছেন কি?
১.২: ফাইন্যান্স বা অর্থবিজ্ঞান কী এবং কেন পড়বো?
লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে অর্থ/টাকাপয়সা ব্যবহারের ইতিহাস ৩৫০০ বছরের পুরোনো । সেই প্রাচীনকাল থেকেই অর্থের সাথে মানুষের সম্পর্ক, যা সময়ের সাথে সাথে আরো নিবিড় থেকে নিবিড়তর হয়েছে । বর্তমান সময়ে অর্থ বা টাকাপয়সা সভ্যতার এক অন্যতম চালিকা শক্তি । পৃথিবীতে পার্থিব প্রায় সবকিছুরই অর্থমূল্য রয়েছে, – সেটা হতে পারে সম্পদ, পণ্য বা সেবা । চলতে-ফিরতে, উঠতে বসতে সবখানে অর্থ একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নিয়ে আছে । আর তাই আর্থিক সিদ্ধান্ত কমবেশি আমাদের সবাইকেই নিতে হয় । একটু আগেই আমরা দেখলাম ছোট বেলায় স্কুলে পড়ার সময় থেকেই আমদের কিভাবে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে হয় । তাই পরিকল্পিতভাবে অর্থের ব্যবহার জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । আর অর্থ ও অর্থসম্পর্কিত যাবতীয় কর্মকান্ড যে বিষয়ের অধীনে অধ্যায়ন করা হয় সেটাই ফাইন্যান্স বা অর্থবিজ্ঞান । বাংলা ভাষায় ফাইন্যান্সের চর্চা অনেকটাই সীমিত । যেসব বই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ি তার প্রায় সবগুলোই বাইরের এবং ইংরেজিতে লেখা; বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমেরিকান বই । তাই বাধ্য হয়েই এই কোর্সে আমাকে অনেক ইংরেজি টার্ম/শব্দ ব্যবহার করতে হবে । এর মূল কারণ এই না, যে এসব শব্দের বাংলাকরণ করা যাবে না; বরঞ্চ কারণটা হল, আমাদের এখানে ফাইন্যান্সের ইংরেজি টার্মগুলোই সচরাচর ব্যবহৃত হয় । তাই এসবের বাংলা করলে দুর্বোধ্যতা বা কনফিউশন তৈরি হতে পারে ।
এবার আসি ফাইন্যান্স শব্দের মানে কি কি হতে পারে । ফাইন্যান্সকে একটি পাঠ্য বিষয় হিসেবে যদি আমরা দেখি তবে একে বলতে হয় অর্থবিজ্ঞান, যা লেকচারের শুরুতেই বলা হয়েছে । এছাড়া ফাইন্যান্সের পরিসরের মধ্যে আছে অর্থ (Money) ও আর্থিক বিভিন্ন উপকরণ (Monetary Instruments), অর্থায়ন (Financing), আর্থিক বাজার (Financial Markets), অর্থব্যবস্থাপনা (Financial Management), আর্থিক সিদ্ধান্ত (Financial Decision), বিনিয়োগ (Investment), ব্যবসায়িক অর্থায়ন (Business/Corporate Finance), অর্থপ্রকৌশল (Financial Engineering), সরকারি অর্থায়ন (Government/Public Finance) এবং অর্থসম্পর্কিত আরো যত যা কিছু আছে ।
ফাইন্যান্স অনেকক্ষেত্রেই অর্থনীতির সাথে সম্পর্কিত । বলা যায়, অর্থনীতির পথ ধরেই ফাইন্যান্সের উৎপত্তি । সম্পদের সুষম বন্টন অর্থনীতির একটি চিরন্তন সমস্যা । সম্পদের সুষম বন্টন না হলে একটি সমাজে নানাধরণের সমস্যার সৃষ্টি হয় যা আমরা প্রতিনিয়তই দেখি । একটা ছোট্ট উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা বোঝা যাবে । উৎপাদনের একটি অন্যতম অনুষঙ্গ হল মূলধন । সম্পদের সুষম বন্টন না হলে মূলধনও কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ে, ফলে উৎপাদনের সবগুলো সম্ভাবনা কাজে লাগানো যায় না বা সেক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হয় এবং ফলশ্রুতিতে উৎপাদনও কম হয় । একই কথা প্রযোজ্য উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণের ক্ষেত্রেও এবং সর্বোপরি আমাদের জীবনের অর্থসম্পর্কিত সর্বক্ষেত্রে । এই সমস্যাগুলোর বাস্তব সমাধান দেয় ফাইন্যান্স বা অর্থবিজ্ঞান । যেমন, ফাইন্যান্সই পথ করে দেয়, যাতে মূলধন কেন্দ্রীভূত হয়ে অলস পড়ে না থেকে উৎপাদনের ক্ষেত্রগুলোতে কাজে লাগতে পারে । এবার একটু আসি জনকল্যাণের দিকে । সমাজে সম্পদ সুষমভাবে বন্টিত না হলে অপচয় ও অদক্ষতা বৃদ্ধি পায় । যেমন কারো কাছে যদি মাত্রাতিরিক্ত সম্পদ থাকে এবং অন্যজনের কাছে প্রয়োজনের চেয়ে কম সম্পদ থাকে, তবে যে বেশি সম্পদের অধিকারী, তার ব্যয়ের ক্ষেত্রে অপচয় বেশি হয় । উপরন্তু অতিরিক্ত সম্পদের কারণে সে হয়তো সব সম্পদ উৎপাদনশীল কাজে লাগাতে চায় না বা পারে না, – যার করণ হতে পারে প্রয়োজন না থাকার কারণে উৎসাহহীনতা বা অদক্ষতা অথবা অন্য কোন কারণ । অন্যদিকে যার কাছে সম্পদের পরিমান কম সে তার উৎপাদনশীলতা পরোপুরি কাজে লাগাতে পারেনা । তার জীবনযাত্রার মান হয় নিম্ন এবং সমাজে বৈষম্য দেখা দেয় । বাস্তবজীবনে অর্থনীতির এ সব সমস্যার সমাধানের প্রচেষ্টা করাই ফাইন্যান্স বা অর্থবিজ্ঞানের কাজ ।
১.৩: একটা ছোট্ট উদাহরণ
এবার ফাইন্যান্সের প্রয়োগের ছোট্ট এবং খুবই সাধারণ একটা উদাহরণ দিয়ে শেষ করবো, যার অভিজ্ঞতা আমাদের প্রতিনিয়তই হয় । আমরা অনেকেই হয়তো এ ব্যাপারে সচেতন ভাবে চিন্তা করি, আবার অনেকে হয়তো ভাবি না । ধরে নেই একজন ব্যক্তি একটি মুদি দোকানের ব্যবসা করবে । এ জন্য তার কাছে প্রয়োজনীয় যে সম্পদ আছে তা হল: বাজারে নিজের একটা দোকানঘর এবং ১০ লক্ষ টাকা । সে নিজেই একবছর ব্যবসাটা চালালো এবং তাতে বছর শেষে মুনাফা হল ৪,০০,০০০ টাকা । অর্থাৎ সরল হিসাবে সে মূলধনের ওপর (১০ লক্ষ টাকার ওপর) ৪০% মুনাফা করেছে এবং একে বেশ ভাল রিটার্ন বা আয় বলতে হবে । এখন দেখি, খুব সাধারণ ফাইন্যান্সের জ্ঞান আমাদের কি বলছে । লোকটি ব্যবসায়ে ১০ লক্ষ টাকা মূলধন বিনিয়োগ করেছে । এই সম্পদের একটি বিকল্প ব্যবহার হতে পারতো ব্যাংকে FDR করে রাখা । তাই যদি সে ব্যাংকে টাকাটা FDR করে রাখতো, তবে ১৩% হিসাবে বছর শেষে তার ইন্টারেস্ট পাবার কথা ১,৩০,০০০ টাকা । এবার আসি দোকান ঘরটির প্রসঙ্গে । দোকানটি সে নিজে না ব্যবহার করে যদি ভাড়া দিয়ে রাখতো, তবে মাসিক ভাড়া ১২,০০০ টাকা (একটা ধরে নিলাম) হিসেবে বছরে ভাড়া পেত ১,৪৪,০০০ লক্ষ টাকা । এবার আসি ওই লোকটি ব্যবসায়ে বছর জুড়ে যে শ্রম দিয়েছে তার হিসাবে । সে নিজে ব্যবসা না করলে অন্য কোথাও চাকরি করতে পারতো । ধরি কোথাও চাকরি করলে তার মাসিক বেতন হতো ১৫,০০০ টাকা (এটাও ধরে নিলাম) । চাকরি থেকে বছরে তার বেতন বাবদ পাবার কথা ১,৮০,০০০ টাকা । এসবগুলো যোগ করলে আমরা পাই মোট ৪,৫৪,০০০ টাকা ,যা লোকটি ব্যবসা না করে সম্পদগুলো বিকল্প পথে ব্যবহার করলে উপার্জন করতে পারতো । অর্থাৎ ব্যবসা করার ফলে সে তার সব সম্পদের রির্টান বা আয় হিসাবে ৫৪,০০০ টাকা (৪,০০,০০০ – ৪,৫৪,০০০ = – ৫৪,০০০) কম পাচ্ছে ! তাই এক্ষেত্রে সঠিক আর্থিক সিদ্ধান্ত হতে পারে, লোকটা নিজে ব্যবসা না করে একটি চাকরি করুক এবং তার অন্য সম্পদগুলো বিকল্প ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করুক । লোকটির জন্য ব্যবসা করাটা আর্থিক দিক থেকে তখনই যুক্তিযুক্ত হবে যখন সেই ব্যবসা থেকে সেই বছর তার আয় হবে ৪,৫৪,০০০ টাকার বেশি । তবে এখানে যে উদাহরণটি আমরা দেখলাম, তার পারিপার্শ্বিক উপাদানগুলো পরিবর্তণ হলে ফলাফলও ভিন্ন হবে । তবে আর্থিক জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সঠিক আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারটি সবসময়ই লাভজনক হয়, সেটা ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য ।
আশা করছি আমাদের প্রথম ক্লাসে ফাইন্যান্স সম্পর্কে আপনাদের কিছুটা প্রাথমিক ধারণা দিতে পেরেছি । কোর্সটি সম্পর্কে আপনাদের মতামত/ফিডব্যাক এটিকে আপনাদের জন্য আরো উপযোগী করার প্রচেষ্টায় আমাকে অনেক সাহায্য করবে । সামনের লেকচারগুলোতে আপনাদের সাথে আবার দেখা হবে । ধন্যবাদ সাথে থাকবার জন্য ।
3 comments
Ridho
ফেব্রুয়ারী 2, 2013 at 6:05 অপরাহ্ন (UTC -6) Link to this comment
Everyone would bneefit from reading this post
Aparecida
ফেব্রুয়ারী 2, 2013 at 6:05 অপরাহ্ন (UTC -6) Link to this comment
I don’t even know what to say, this made things so much esaeir!
Md shihab shekh
জানুয়ারী 1, 2017 at 12:51 পূর্বাহ্ন (UTC -6) Link to this comment
Khub valo laglo