কেমিকৌশল পরিচিতি কোর্সের এ সপ্তাহে থাকছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় – জ্বালানি শক্তি। সবচেয়ে বেশি প্রচলিত যে জীবাশ্ম জ্বালানি -তেল ও গ্যাস – সে সম্পর্কে যথাক্রমে আমরা আলোচনা করবো ৩য় ও ৪র্থ সপ্তাহে। এই সপ্তাহে থাকছে প্রাকৃতিক গ্যাস। মোট তিনটি লেকচার ভিডিও এবং সাথে সংক্ষিপ্ত লেকচার নোটের মাধ্যমে আমরা জানবো – জ্বালানি শক্তি ও কেমিকৌশলের সম্পর্ক, প্রাকৃতিক গ্যাস ও এর পরিবহনের নানান উপায়, এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজির সাপ্লাই চেইন সম্পর্কে। আরও থাকছে পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অ-আ-ক-খ নিয়ে একটি মূল্যবান সাক্ষাতকার যেখানে কেমি ও পেট্রোলিয়ামকুশলী এস এম ইশিতিয়াক হোসেন বলেছেন কীভাবে মাটির নিচের খনি থেকে পেট্রোলিয়াম পদার্থ যেমন তেল ও গ্যাস উত্তোলিত হয় – তার চমৎকার বর্ণনা ও নানান কারিগরি দিক।
জ্বালানি শক্তি ও কেমিকৌশলের সম্পর্ক
শুরুর ভিডিওটিতে আমি আলোচনা করেছি বৈশ্বিক জ্বালানির চাহিদা, ব্যবহার এবং এতে কেমিকৌশলীদের অংশগ্রহন নিয়ে।
সারাবিশ্বে শক্তির যে চাহিদা তার প্রায় শতকরা ৮৫ ভাগ মেটানো হয় জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে। জীবাশ্ম জ্বালানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ক্রমানুসারে জ্বালানি তেল, কয়লা এবং প্রাকৃতিক গ্যাস। খনি থেকে এই তেল-কয়লা-গ্যাস কীভাবে উত্তোলিত-পরিশোধিত-পরিবাহিত করে চাহিদার জায়গায় পৌছে দেয়া যায় – সেই বিশাল কর্মযজ্ঞের (সাপ্লাই চেইন বা যোগান শৃংখলের) নানান ধাপে একজন কেমিকৌশলী ভূমিকা রাখতে পারেন।
সাক্ষাতকারঃ পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অ-আ-ক-খ
নরওয়েবাসী কেমি ও পেট্রোলিয়ামকুশলী এস এম ইশিতিয়াক হোসেনের সাক্ষাতকারে নিচের বিষয়গুলি সম্পর্কে জানতে পারবো-
- পেট্রোলিয়াম কৌশল কাকে বলে? এর সাথে কেমিকৌশলের সম্পর্ক কি?
- পেট্রোলিয়াম কৌশলের প্রধান প্রধান বিষয়গুলি কি কি?
- ক্রুড অয়েল জিনিসটা আসলে কি? সেটি কি কি কাজে লাগে?
- মাটির নিচ থেকে কীভাবে তেল-গ্যাস উত্তোলন করা হয়?
প্রাকৃতিক গ্যাস ও এর পরিবহনের নানান উপায়
প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান হচ্ছে মিথেন। এই মিথেনকে পুড়ীয়ে তাপ উৎপন্ন করা যায় যা দিয়ে বাস্প তৈরি করা যায় এবং বিদ্যৎ উৎপন্ন করা হয়। এছাড়াও প্রাকৃতিক গ্যাস ইউরিয়া সার কারখানাসহ অনেক কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশসহ অনেক দেশে প্রাকৃতিক গ্যাস গৃহস্থালি জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
প্রাকৃতিক গ্যাসকে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে বিভিন্ন উপায়ে পরিবহন করা যায়। যদি ভূমিতে দুই হাজার মাইলের কমে প্রাকৃতিক গ্যাসকে পরিবহন করতে হয় তাহলে পাইপলাইনই হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম। সমুদ্রপথে এই দূরত্ব কমে গিয়ে সাতশো মাইল। পাইপলাইন ছাড়াও সিএনজি এবং এলএনজি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসকে পরিবহন করা যায়। সিএনজি মানে হচ্ছে কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস বা সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস। এটাও মিথেন কিন্তু এলএনজির মত তরল অবস্থায় থাকে না, গ্যাসকে কেবল প্রচন্ড চাপে সংকুচিত (কম্প্রেস) করা হয় যাতে অনেক বেশি গ্যাস ছোট একটা সিলিন্ডারে জমা করে রাখা যায়। অন্যদিকে, এলএনজিকে কম্প্রেস করা হয় না, বরং প্রাকৃতিক গ্যাসকে এত বেশি ঠান্ডা (রেফ্রিজারেশন) করা হয় যে একসময় সাধারণ চাপেই সে তরল হয়ে যায়। এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বাঁ Liquefied natural gas) হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস যাকে সংরক্ষণ ও পরিবহনের সুবিধার্থে অস্থায়ীভাবে তরলে রূপান্তর করা হয়েছে। এলএনজি আলাদা কোন জ্বালানি নয়, আদতে এটি প্রাকৃতিক গ্যাসেরই তরল রূপ। প্রাকৃতিক গ্যাস সাধারণ চাপ ও তাপমাত্রায় গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে। শীতলকরণ (refrigeration) প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাসের তাপমাত্রা কমিয়ে -১৬০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নামিয়ে আনলে গ্যাস তরলে পরিণত হয়। এই তরল প্রাকৃতিক গ্যাসকেই এলএনজি বলা হয় যা মূলত প্রাকৃতিক গ্যাসকে তার উৎস থেকে বাজার পর্যন্ত পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হয় এবং এর আবির্ভাব কেবলমাত্র সমুদ্রপথে গ্যাস পরিবহনের সুবিধার জন্য। এলএনজির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, যখন প্রাকৃতিক গ্যাসকে সাধারণ বায়ুমন্ডলীয় চাপে তরল করে ফেলা হয় তখন এর আয়তন কমে যায় প্রায় ৬০০ গুন।
তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের যোগান শৃংখল বা সাপ্লাই চেইন
এলএনজি মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাসের স্তানান্তর প্রক্রিয়ার রয়েছে বেশ কয়েকটি ধাপ। প্রাকৃতিক গ্যাসের উত্তোলন থেকে আরম্ভ করে এলএনজিতে রূপান্তর, সামুদ্রিক পরিবহন, পুনরায় গ্যাসে রূপান্তর এবং বন্টন – এই পুরো প্রক্রিয়াকে বলা হয় এলএনজি যোগান শৃঙ্খল (ইংরেজি: LNG Supply Chain)। এই শৃঙ্খলের ধাপগুলি হচ্ছে-
- প্রাকৃতিক গ্যাসের অনুসন্ধান, আহরণ ও যোগান
- এলএনজি উৎপাদন ও সংরক্ষণ
- এলএনজি পরিবহন
- সংরক্ষণ ও পুনঃগ্যাসিকরণ
- গ্যাস বন্টন / বিপণন
******************************
আজকের লেকচারের মাধ্যমে আমরা কোর্সের অর্ধেক সম্পন্ন করলাম। সামগ্রিকভাবে পুরো কোর্সটি আপনাদের কেমন লাগছে সেটি কমেন্টের মাধ্যমে জানালে খুব খুশি হবো।
কুইজ
Does this form look suspicious? Report