কোর্সের বিষয়বস্তু
গবেষণায় হাতে খড়ি কোর্সটিতে গবেষণা বা রিসার্চ কী করে করতে হয়, সেটা হাতে কলমে শেখানো হবে।
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব — কিন্তু কীভাবে আমরা তা হলাম? মানবসভ্যতার ইতিহাসের অগ্রগতির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে আমাদের জ্ঞান বিজ্ঞানে উৎকর্ষ — আর তা সম্ভব হয়েছে কেবল গবেষকদের জন্য। নানা বিষয়ে গবেষণার মাধ্যমে অজানাকে জানা, নতুন উদ্ভাবন, রোগ-শোক-জরাকে জয় করা হয়েছে সম্ভব।
কিন্তু গবেষণা বলতে আসলে কী বোঝায়? কীভাবে একজন নবীন গবেষক গবেষণার, জ্ঞান বিজ্ঞানের রাজ্যে পা দিবেন? কীভাবে গুছিয়ে কাজ করে সমস্যার সমাধান করবেন, কীভাবে গবেষণাপত্র লিখবেন ও কোথায় প্রকাশ করবেন, এমনকি কীভাবে একটা নতুন আইডিয়াকে গুছিয়ে লিখবেন, চিন্তা করবেন, ও যাচাই করবেন — এসব নিয়ে নবীন গবেষকেরা অনেক সময়েই সমস্যায় পড়েন।
আমি পেশায় ও নেশায় একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী। গবেষণাই আমার ধ্যান-জ্ঞান। কিন্তু গবেষণা কীভাবে করতে হয়, তা আমাকে শিখতে হয়েছে। আমার শিক্ষাগুরুদের হাতে স্নাতক এবং পরে পিএইচডি করার সময়ে অনেক কিছু ধাপে ধাপে হাতে কলমে শিখে তবেই গবেষণার পদ্ধতি বুঝতে পেরেছি। গবেষণার কৌশল সম্পর্কে জানার পরে আমার মনে হয়েছে, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য এটা শেখাটা খুব কঠিন কিছু নয়, কেবল দরকার দিক নির্দেশনার।
বাংলা ভাষায় গবেষণা করার পদ্ধতি নিয়ে খুব বেশি আলোচনা করা হয়নি, এই সংক্রান্ত সবকিছুই ইংরেজিতে। বইমেলা ২০১৫ এর জন্য গবেষণায় হাতে খড়ি বইটা লেখার পরে প্রচুর পাঠকের অনুরোধ এলো, এইটার উপরে একটা কোর্স বানাবার জন্য। তাই গবেষণা করতে শেখার জন্য বাংলা ভাষায় এই কোর্সটা বানাচ্ছি, যাতে আগামী বছর নাগাদ কয়েক হাজার গবেষক তৈরী করতে পারি। আশা করি আমার সঙ্গে থাকবেন।
এই কোর্সটা করার জন্য আমার গবেষণায় হাতে খড়ি বইটা সাথে রাখতে পারেন (না রাখলেও খুব সমস্যা নাই, তবে হাতে থাকলে ভালো)। আর প্রতি সপ্তাহে বাড়ির কাজ এবং হাতে কলমে সংক্ষিপ্ত ভিডিও দেখানো হবে।
কাদের জন্য কোর্স
এই বইটা পড়ে উপকার পেতে হলে আপনাকে গবেষক হতে হবে না, বরং বইটা ছাত্র, গবেষক, শিক্ষক — সবার কথা মাথায় রেখেই লেখা। আপনার যদি স্নাতক, মাস্টার্স বা পিএইচডি পর্যায়ে গবেষণা করা বা থিসিস লেখার দরকার হয়, তাহলে এটা পড়ে আপনি গবেষণার সব পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা পাবেন। এছাড়া একাডেমিক লেখালেখি, গবেষণাপত্র প্রকাশ — এসব কাজের জন্য এখানে রয়েছে বিস্তারিত নির্দেশনা। আমি বইটা খুব সহজ ভাষায় লিখেছি, যাতে করে সবাই এটা পড়ে গবেষণার জগতে প্রবেশ করতে পারেন খুব সহজেই।
কতটি লেকচার?
মোটামুটি ১০-১২টি লেকচার দেয়ার পরিকল্পনা আছে।
কবে থেকে শুরু?
১৫ই ফেব্রুয়ারি ২০১৫ হতে।
কোর্সের সিলেবাস
গবেষণা: কী, কেনো, কীভাবে?
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে গবেষণা
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি
গবেষণা বা রিসার্চ কীভাবে করবেন?
গবেষণা শুরুর আগে কী কী শিখে নিবেন?
গবেষণার বিষয় নির্বাচন
গবেষণা পরিকল্পনা — কীভাবে লিখবেন বা যাচাই করবেন?
কীভাবে গবেষণা পত্র বা রিসার্চ পেপার পড়বেন?
রিসার্চ পেপার রিভিউ করবেন কীভাবে?
রিভিউ বা সার্ভে আর্টিকেল লেখা
আইডিয়া পাবেন কীভাবে?
আইডিয়াকে চিত্তাকর্ষকভাবে লিখবেন কীভাবে?
আইডিয়া ও সমাধান যাচাই
গবেষণার ফল প্রকাশ
গবেষণাপত্র বা রিসার্চ পেপার লিখবেন কীভাবে?
ভালো প্রেজেন্টেশন / লেকচার দিবেন কীভাবে?
গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন – প্রেজেন্টেশন ও বক্তৃতা
লেখার মান বাড়াবেন কীভাবে?
গবেষণার নৈতিকতা বা এথিক্স
গবেষণার পরিমাপ
গবেষণার খরচ যোগানো
গবেষকদের অভ্যাস
মেধাসত্ত্ব – সংরক্ষণ ও সতর্কতা
সময় ব্যবস্থাপনা
গবেষণার মানসিকতা
গবেষণা সংক্রান্ত আলাপ/ইমেইল
কেস স্টাডি — হাতে কলমে গবেষণা
নবীন গবেষকদের বাড়ির কাজ
লেখক পরিচিতি
ডঃ রাগিব হাসান একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও শিক্ষক। সরকারী চাকুরে মোঃ শামসুল হুদা ও স্কুলশিক্ষিকা রেবেকা সুলতানার সন্তান রাগিবের জন্ম চট্টগ্রামে। পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল এবং চট্টগ্রাম কলেজে। এসএসসিতে চতুর্থ ও এইচএসসিতে প্রথম মেধাস্থান অধিকার করে পরে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর কম্পিউটার কৌশল বিভাগ হতে সর্বোচ্চ জিপিএ নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন — সব বিভাগে সেরা ফলাফলের জন্য পান চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল। বুয়েটে কিছুদিন শিক্ষকতার পরে উচ্চশিক্ষার্থে যুক্তরাষ্ট্রে যান, সেখানে কম্পিউটার নিরাপত্তার উপরে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি — ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আরবানা শ্যাম্পেইন থেকে। তারপর যোগ দেন অধ্যাপনা পেশায়। বর্তমানে তিনি ইউনিভার্সিটি অফ আলাবামা অ্যাট বার্মিংহাম এর কম্পিউটার বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক এবং সিক্রেটল্যাব নামের গবেষণাগারের প্রতিষ্ঠাতা — গবেষণা করছেন কম্পিউটার নিরাপত্তা ও ক্লাউড কম্পিউটিং নিয়ে। গবেষণার উৎকর্ষের জন্য মার্কিন জাতীয় বিজ্ঞান ফাউন্ডেশন থেকে ২০১৪ সালে পেয়েছেন ক্যারিয়ার পুরস্কার।
মনোচিকিৎসক স্ত্রী জারিয়া আফরিন চৌধুরী ও ছেলে যায়ানকে নিয়ে রাগিব হাসান বসবাস করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের শহর বার্মিংহামে। পেশায় কম্পিউটার বিজ্ঞানী হলেও রাগিবের মন পড়ে থাকে বাংলায়, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির দিকে। বাংলা উইকিপিডিয়ার শুরু থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন, বাংলা ব্লগিং এর সাথে জড়িত থেকেছেন ২০০৫ থেকে। সবার কাছে জ্ঞানের আলো ছড়াবার জন্য অনলাইনে বাংলায় মুক্তজ্ঞানের সাইট শিক্ষক.কম (http//www.shikkhok.com) প্রতিষ্ঠা করেছেন ২০১২ সালে। সেজন্য পেয়েছেন ২০১২ সালে Google RISE Award, Information Society Innovation Fund Award, Internet Society Grant। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিদের জন্য ব্রেইল ও অডিও বই বানাবার ক্রাউডসোর্সড প্রজেক্ট বাংলাব্রেইল প্রতিষ্ঠা করেছেন ২০১৩ সালে, এর জন্য ২০১৪ সালে পেয়েছেন ডয়চে ভেলের The Best of Blogs and Online Activism (The BoBs) Award।