«

»

জানু. 21

জীব জীবন পরিবেশ ৫: পৃথিবীর অতীত সম্বন্ধে আমরা জানি কিভাবে?

[কোর্সের মূল পাতা] [নিবন্ধন ফর্ম][পূর্বের লেকচার]

আজকে পড়বো পৃথিবীতে জীবের ইতিহাস, কিভাবে আমরা আমাদের অতীত বুঝতে পারি এসব বিষয় নিয়ে।

ভিডিও লেকচারটি এখান থেকে দেখে নাও

 

আমাদের পৃথিবী কি সবসময়ই এরকম ছিল? উত্তর হল ‘না’। ছিলনা। আমাদের পৃথিবী ছিল উত্তপ্ত গোলকের মত। মহাবিশ্বের বহু গ্রহের মতই পৃথিবীও একসময় দারুন উত্তপ্ত ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে তা ঠান্ডা বা শীতল হয়েছে, সেখানে প্রাণ তৈরি হয়েছে এবং আজকের পৃথিবীতে পরিনত হয়েছে। আমরা জানি প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী তৈরি হয় এবং প্রায় ৪ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে জীবের উদ্ভব হয়। তবে প্রথম জীবেরা ছিল অতিক্ষুদ্র, খালিচোখে দেখা যায়না এমন এবং এককোষী। এরকম অতিসরল জীব থেকে বিবর্তন ক্রমান্বয়ে আজকের অতিজটিল এবং বিচিত্রধরনের জীবের তৈরি করেছে। কিন্তু পৃথিবীতে জীবের বিবর্তন সবসময়ই খুব মসৃণ ছিলনা, অনেকধরনের প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। মহাদেশের নড়াচড়া, বিশালাকৃতির উল্কাপতন, একনাগাড়ে মিলিয়ন বছর ধরে ঠান্ডায় জমে থাকা কত কিছুই না হয়েছে। অন্তত: পাঁচবার পৃথিবী এমন অবস্থার সম্মুখীণ হয়েছিল যে প্রায় সব জীব বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। জীবের বিলুপ্তি হয়েছে বলা যায় যখন কোন কারনে কোন প্রজাতির সব জীব মারা যায়, একজনও বেঁচে থাকেনা। কিন্তু পৃথিবীতে প্রাণ টিকে ছিল। প্রতিবার বড়সড় বিলুপ্তির পরেই আরও বেশি বিকশিতভাবে পৃথিবীতে জীবের আবির্ভাব ঘটেছে।

একদিনে পৃথিবীতে জীবনের ইতিহাস

পৃথিবীতে প্রথম জীবের শুরু থেকে যত ঘটনা ঘটেছে তাকে ছোট করে বোঝানো প্রায় অসম্ভব। কিন্তু আমরা পৃথিবীতে জীবের ইতিহাসকে একটি ২৪ ঘন্টার ঘড়িতে বেঁধে দেখাতে চেষ্টা করতে পারি। নিচের ছবিটি দেখো। লক্ষ্য করলে দেখবে মানুষ মাত্র দিনের একদম শেষ মিনিটে আবির্ভূত হয়েছে। অর্থাৎ পৃথিবীর জীবের ইতিহাসের বেশিরভাগ সময়ই মানুষ পৃথিবীতে ছিলনা। কিন্তু এত কম সময় ধরে পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণ করে আমরা কিভাবে বুঝি আগে কি ঘটেছিল? অতিদূর অতীতের কোন ঘটনা আমরা কিভাবে দেখি?

পৃথিবীতে জীবনের ঘড়ি

 

অতীত সম্বন্ধে জানা

অতীতে জীবের ইতিহাসের বিস্তারিত আমরা জানতে পারি ফসিল বা জীবশ্ম রেকর্ড বা লিপি থেকে। আধুনিক জীব নিয়ে আমাদের বিস্তারিত জ্ঞানও কিভাবে জীবের উদ্ভব হয়েছিল সেটা সম্বন্ধে তথ্য দেয়।

ফসিল রেকর্ড বা জীবাশ্ম লিপি

ফসিল হল অতীতে বেঁচে থাকা কোন জীবের সংরক্ষিত দেহ বা দেহের অংশ। জীবের নরম অংশগুলি মৃত্যুর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বিনষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু, কিছু কিছু ক্ষেত্রে, শক্ত অংশগুলি, যেমন হাড়, দাঁত বা খোলস খনিজ পদার্থ দিয়ে পরিবর্তিত হওয়া পর্যন্ত টিকে থাকে এবং ফসিলে পরিণত হয়। নিচে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া একটি সিংহপ্রজাতির প্রায় সম্পূর্ণ ফসিল কঙ্কাল দেখতো পাচ্ছো। ফসিল রেকর্ড বা জীবাশ্ম লিপি হল গত ৪ বিলিয়ন বছর ধরে জীবের ইতিহাস যা ফসিলের মাধ্যমে একত্রিত করা হয়েছে।

বিলুপ্ত সিংহের জীবাশ্ম

 

ফসিল হিসেবে সংরক্ষিত হওয়ার জন্য জীবের মৃতদেহকে দ্রুত কোন দ্রব দিয়ে বা অন্যকোনভাবে ঢেকে ফেলা প্রয়োজন। যেমন, গ্লেসিয়ার নামক বরফের আচ্ছাদনে ঢেকে যাওয়া, বা নিচের ছবির মত গাছের রস বা রেসিন (এম্বার বলে) এর ভেতর আটকে যাওয়া। মাঝেমধ্যে কোন বিলুপ্ত জীবের উপস্থিতির কোন আভাস পাওয়া যায়, যেমন পায়ের ছাপ সংরক্ষিত থাকার ফলে (নিচের ডানদিকের ছবি)। ফসিল তৈরির জন্য যথার্থ পরিবেশ খুব বেশি পাওয়া যায়না। সেজন্য, একটি জীবের ফসিল তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাও খুব কম।

ফসিল বা জীবাশ্ম তৈরি হওয়া

যদি তুমি আরও অনেক আগ্রহ বোধ করো, তবে নিচের ভিডিওটি থেকে দেখে নিতো পারও কিভাবে ফসিল তৈরি হয়:

একটি ফসিল তখনই কোন জীবের গল্প বলবে যখন তার বয়সটা জানা যাবে। এই বয়স জানার প্রক্রিয়াকে বলে ডেটিং (dating)। বয়স জানা গেলে বিজ্ঞানীরা সেখান থেকে প্রাণ কিভাবে পরিবর্তিত হয়েছে সে সম্বন্ধে ধারনা পান। ফসিলকে দুইভাবে ডেটিং করা যায়: আপেক্ষিক ডেটিং এবং নিরঙ্কুশ ডেটিং। দুইটির বিবরণই নিচে দেয়া হল।

আপেক্ষিক ডেটিং

দুইটি ফসিলের মধ্যে কোনটার বয়স বেশি এবং কোনটার কম সেটা খুঁজে বের করে এই ডেটিং। কিন্তু এই ডেটিং এর মাধ্যমে বছর হিসেবে ফসিলের বয়স বোঝাটা সম্ভব নয়। প্রস্তর বা পাথরের স্তরে কোন জায়গায় জীবাশ্ম আছে সেটা খুঁজে বের করে আপেক্ষিক ডেটিং করা হয়। নিচের ছবিটি দেখে নিন। নিচের স্তরগুলিতে থাকা জীবাশ্মগুলি উপরের স্তরের জীবাশ্ম থেকে বেশি পুরানো জীবের জীবাশ্ম।

নিরঙ্কুশ ডেটিং

নিরঙ্কুশ ডেটিং কত বছর আগে কোন জীব বেঁচে ছিল সেটা খুঁজে বের করা হয়। এর ফলে কোন ফসিলের বয়স বছর হিসেবে কত সেটা জানা যায়। নিরঙ্কুশ ডেটিং মাঝেমধ্যেই কি পরিমান কার্বন-১৪ (তেজষ্ক্রিয় কার্বন) অথবা অন্য তেজষ্ক্রিয় পদার্থ ফসিলটির মধ্যে আছে সেটা হিসেব করে বের করা হয়। এই এনিমেশানটি দেখে কার্বন ডেটিং সম্বন্ধে আরও অনেক কিছু জেনে নিতে পারবে।

 

প্রস্তরের স্তরে জীবাশ্ম থেকে ডেটিং এর উপায়

 

 

যারা অনেক আগ্রহী তারা নিচের এই ভিডিও থেকে ডেটিং সম্বন্ধে আরও অনেককিছু জানতে পারবে

 

 

কুইজগুলির উত্তর দিয়ে দাও ঝটপট

Comments

comments

About the author

খান ওসমান

আমি টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের মলিকিউলার জেনেটিক্স এর একজন পিএইচডি ছাত্র। কাজ করছি ম্যালেরিয়া জীবাণুর একধরনের প্রোটিন নিয়ে। আমার কাজ মূলতঃ এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফির মাধ্যমে প্রোটিনের গঠন নির্ণয়, এর সঙ্গে ম্যালেরিয়া রোগের সম্পর্ক নির্ধারণ এবং ঔষধ তৈরিতে সহায়তা করা ইত্যাদি বিষয়ের উপর। স্নাতক এবং মাস্টাসর্ ডিগ্রী অজর্ন করেছি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুজীববিজ্ঞান নিয়ে। আমার বতর্মান ল্যাব এর ওয়েবসাইটে ঢু মেরে দেখতে পারেন এখানে: www.thesgc.org.