[কোর্সের মূল পাতা | নিবন্ধনের লিংক]
শুভেচ্ছা সবাইকে…
আজ আমরা শুরু করতে যাচ্ছি আমাদের প্রথম লেসন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে সংক্ষেপে কোরিয়ান ভাষার ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা। আসলে যে কোন ভাষার উৎপত্তির পেছনকার ইতিহাসের ব্যাপ্তি হয় বিশাল। আমাদের মূল উদ্দেশ্য যেহেতু ভাষাটা শেখা তাই ইতিহাসের বিশালত্বের দিকে না গিয়ে ওটা রেখে দিলাম ইতিহাসবিদদের জন্য। তার চেয়ে বরং একটা ছোট্ট গল্প দিয়ে শুরু করা যাক।
তখন স্বর্গের রাজা ছিলেন ‘হোয়ান ইন’। তাঁর একমাত্র পুত্র ‘হোয়ান উং’ একদিন বাবাকে জানালো, সে পৃথিবীতে গিয়ে থাকতে চায়। পুত্রের অনড় মনোভাবে অগত্যা রাজা তাকে পৃথিবীর শাসনভার দিয়ে পাঠালেন। সাথে পাঠালেন বৃষ্টি, মেঘ, বাতাস সহ তিন হাজার অনুসারীকে। পৃথিবীতে নেমে এসে ‘হোয়ান উং’ ‘বেক দু’ পাহাড়ে বসতি তৈরী করে সকলকে নিয়ে বসবাস শুরু করলেন।
‘বেক দু’ পাহাড়ের অদূরে বাস করত এক বাঘ আর আর এক ভালুক। মর্ত্যে রাজপুত্রের দেখা পেয়ে দুজনই তার কাছে গিয়ে মানুষ হওয়ার বর্ চাইল। একটু ভেবে ‘হোয়ান উং’ দুজনের হাতে রসুন, তেতো স্বাদের এক ধরণের গুল্ম আর একটা গুহার সন্ধান দিয়ে বললেন,“তোমরা দুজন যদি যদি সূর্যের আলো থেকে নিজেদের আড়াল করে শুধুমাত্র এগুলো খেয়ে একশ দিন কাটাতে পারো তবেই মানুষ রুপ লাভ করবে।“
ক’দিন পর পেটের ক্ষুধার কাছে এই কঠিন শর্ত তুচ্ছ করে বাঘ গুহা থেকে বেরিয়ে এল।আর ওদিকে এক…দুই…করে ঠিক একশ দিন পর গুহা থেকে বেরিয়ে এল এক পরমা সুন্দরী নারী। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, এই সেই ভালুক যে কঠোর সাধনা করে মানুষ রুপ লাভ করেছে। এরপরের কাহিনী হলো, এই পরমা সুন্দরীকে বিয়ে করলেন ‘হোয়ান উং’। তাদের পুত্রের নাম ছিলো ‘দাংগুন’। একটা সময় ‘দাংগুন’ ‘বেক দু’ পাহাড় থেকে নেমে সুন্দর একটা স্থানে নিজের দেশ নির্মাণ করলেন। আর এভাবেই কোরিয়ার জন্ম।
জানা যায় খ্রিষ্টের জন্মের আগে থেকেই দেশটির উত্তর ভাগে ওপর চীনের প্রভাব বিস্তারের কারণে লেখ্য রুপের মাধ্যম হিসেবে চীনা ভাষার ব্যবহার ছিলো সর্বত্র (তখন দুই কোরিয়া একত্রিত ছিলো)। কোরিয়ান ভাষায় একে বলা হত ‘হান্জা/হান্চা’। সঙ্গত কারণেই অত্যন্ত কঠিন এই ভাষায় প্রচলিত শিক্ষাদীক্ষা কেবল অভিজাত শ্রেণী বা বিত্তবানদের নাগালে ছিলো। ফলশ্রুতিতে শিক্ষাবঞ্চিত লোকের সংখ্যা ছিলো বাড়াবাড়ি রকমের।
এই অবস্থার অবসান ঘটাতেই ‘জোসন’ রাজবংশের চতুর্থ রাজা ‘সেজোং দ্য গ্রেট’ এর হাত ধরে ১৪৪৪ সালে আবিষ্কৃত হয় ‘হান্গুল’। তাঁকে এ ব্যাপারে সহায়তা করেছিলেন ভাষা বিশারদ্দের একটি দল। পন্ডিতেরা অনেকে তখন এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।তারপর চীনা ভাষা বহাল থাকল আরো অনেক দিন। উনিশ এবং বিশ শতকে চীনা ভাষা আর ‘হান্গুল’ মিলিতভাবে ব্যবহার হতে থাকল আর পাশাপাশি ‘হানগুল’ এর জনপ্রিয়তাও বাড়ছিল। ১৯৪৫ সালের দিকে চীনা ভাষার দৌরাত্ম কমে গিয়ে পূর্ণাংগ ভাবে যাত্রা শুরু করে ‘হানগুল’ ।
এবার আসি ভাষায়। কোরিয়ান ভাষা উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার অফিসিয়াল ভাষা হলেও দক্ষিণ কোরিয়াতে এর লেখ্য রুপের নাম ‘হান্গুল’ আর উত্তর কোরিয়াতে আর ‘জোসন গুল’।‘হান্গুল’ এর প্রাচীন নাম ‘হুন্মিন্জংউম্’। উইকিপিডিয়ার তথ্যানুসারে বর্তমানে কোরিয়ান ভাষাভাষীর সংখ্যা আনুমানিক ৭৮ মিলিয়ন।
সবমিলিয়ে ‘হানগুল’ এ রয়েছে মোট ৪০ টি বর্ণ। এর মধ্যে ১০ টি মৌলিক এবং আর ১১টি যৌগিক স্বরবর্ণ। আর ১৪ টি মৌলিক এবং ৫টি জোড় ব্যঞ্জনবর্ণ। আকাশের অসীমতা, ভূমির বিস্তৃতি আর দন্ডায়মান মানুষের আকারকে ভিত্তি করে তৈরী করা হয়েছে স্বরবর্ণ। আর উচ্চারণের সময় বাগযন্ত্রের পরিবর্তিত রুপের উপর ভিত্তি করে তৈরী করা হয়েছে ব্যঞ্জনবর্ণ। কোরিয়ান বর্ণমালা লেখার নিয়ম হচ্ছে, বাম থেকে ডানে এবং উপর থেকে নীচে। (পরের ক্লাসে বিস্তারিত থাকবে)
১৯৮৯ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘ইউনেস্কো কিং সেজোং লিটারেসি প্রাইজ’ এর প্রবর্তন হয় এবং ১৯৯৭ সালে ‘হুন্মিন্জংউম্’ এর ম্যানুস্ক্রিপ্টকে ‘ইউনেস্কো মেমোরী অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ হিসেবে তালিকাভূক্ত করা হয়। ৯ অক্টোবরকে দক্ষিণ কোরিয়াতে ‘হান্গুল ডে/দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে ‘রাজা সেজোং’ ভাষার ক্ষেত্রে যে অবদান রেখেছেন তার জন্যে বিশ্বে তিনি সম্মানিত এবং সমাদৃত। এই ক্ষণজন্মা প্রতিভার প্রতি আমাদের পক্ষ থেকেও রইল অশেষ শ্রদ্ধা।
কৃতজ্ঞতাঃ লেকচারটি তৈরীর সময় আমি সেজোং হানগুগ অ-১, উইকিপিডিয়া সহ আর কয়েকটি সাইটের সহযোগিতা নিয়েছি।
1 comment
Al Amin
নভেম্বর 9, 2016 at 8:09 অপরাহ্ন (UTC -5) Link to this comment
I want to learn korean language