জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিচিতি: লেকচার ০১.৩
অথবা ভিমিও থেকে দেখতে পারেন:
টলেমির ভূকেন্দ্রিক মডেল from Khan Muhammad on Vimeo.
জ্যোতির্বিজ্ঞান ১০১ কোর্সের প্রথম লেকচারে বলেছি টলেমির আলমাজেস্ট বই প্রকাশের মধ্য দিয়েই পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যে ভুলের খেসারত আমাদেরকে দিতে হয়েছে প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে। এই সাপ্লিমেন্ট ভিডিওতে আমরা জানব কিভাবে গ্রিকদের প্রায় অর্ধ সহস্রাব্দের প্রচেষ্টা টলেমির মাধ্যমে পূর্ণতা পেয়েছে। আমাদের আলোচনার বিষয় টলেমির ভূকেন্দ্রিক মডেল, এ এমন এক মহাবিশ্বের মডেল যার কেন্দ্রে আছে পৃথিবী।
টলেমির বিশ্বমডেলে বস্তুগুলোর ক্রম
টলেমি ১৪৫ খ্রিস্টাব্দে আলমাজেস্ট বইটি লিখেন যা প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে বিশ্বজুড়ে পঠিত হয়েছিল। বইটিতে তিনি প্রথমেই মহাবিশ্বের মডেলটা দাড় করান, তারপর সেই মডেল থেকে পাওয়া গাণিতিক ফলাফলের সাথে পর্যবেক্ষণের তুলনা করেন। পিথাগোরাস-প্লেটো-এরিস্টটল দের মাধ্যমে গ্রিকদের মননে একটি চিন্তা গভীরভাবে প্রোথিত হয়েছিল, তা হচ্ছে মহাবিশ্বের একমাত্র গতি হচ্ছে বৃত্তীয় সুষম গতি। টলেমির অনেক আগেই বিশেষ করে এরিস্টটলের মাধ্যমে মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল যে পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্রে এবং তার চারপাশে আকাশে আমরা যেসব বস্তু দেখি তারা সবাই বৃত্তীয় কক্ষপথে সুষম বেগে আবর্তন করছে। টলেমি এর কোন পরিবর্তন করেননি। তবে তিনিই প্রথমবারের মতো প্রতিটি বস্তুকে মডেলে নির্দিষ্ট স্থান দেন।
গ্রিকদের মতে আকাশে প্রধানত দুই ধরণের বস্তু দেখা যায়: তারা এবং গ্রহ। ধূমকেতু এবং উল্কাকে তারা আমাদের বায়ুমণ্ডলের ভেতরকার ঘটনা মনে করতো। গ্রহগুলোর কোন বার্ষিক গতি নেই, তারা খ-গোলকে স্থির। এই স্থির পটভূমিতে যেসব বস্তু বছর ব্যাপী ভ্রমণ করে তাদেরকেই গ্রিকরা গ্রহ বলতো। সে হিসেবে সূর্য এবং চাঁদও গ্রহ। তার মানে গ্রিকদের চোখে গ্রহ ৭টি: সূর্য, চাঁদ, বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং শনি। আসলে গ্রহের ইংরেজি planet শব্দটি গ্রিক যে শব্দ থেকে এসেছে তার অর্থ ভ্রমণকারী। তো ৭টি গ্রহ এবং তারাদের গোলকের মধ্যে কোনটিকে পৃথিবীর কাছে এবং কোনটিকে দূরে স্থাপন করা হবে সেটাই টলেমির প্রথম চিন্তার বিষয় ছিল। আমাদের সাধারণ বুদ্ধি বলে যে বস্তু যতো দূরে তাকে ততো ধীরে যেতে দেখা যায়। তারাদের যেহেতু কোন গতিই নেই তাই টলেমির সিদ্ধান্ত নিতে একদমই দেরি হয়নি যে তারাদের গোলক আমাদের থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থিত। অবশ্য এরিস্টটলের মডেলেও খ-গোলক সবচেয়ে দূরে ছিল।
টলেমি গ্রহগুলোকেও নির্দিষ্ট জায়গা করে দেন। তিনি ভাবেন যে গ্রহের বেগ যতো কম তা তারাদের ততো কাছে অবস্থিত। অর্থাৎ তার মডেলটি শুরু হয় বাইরে থেকে। গতিবেগ অনুযায়ী তিনি তাই তারাদের গোলকের পর স্থান দেন যথাক্রমে শনি, বৃহস্পতি এবং মঙ্গল গ্রহকে। তারাগুলো যেহেতু স্থির সেহেতু তাদের সাপেক্ষে বেগ নির্ণয় করা যায়। কোন একটি তারার কাছে শনি গ্রহের আবার ফিরে আসতে সময় লাগে ৩০ বছর, বৃহস্পতি গ্রহের ১২ বছর আর মঙ্গল গ্রহের মাত্র ২ বছর। চাঁদের যেহেতু এমনটি করতে মাত্র ১ মাস সময় লাগে সেহেতু স্বভাবতই এটি পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে। বাকি থাকে কেবল সূর্য, বুধ ও শুক্র। টলেমির ভাগ্য খারাপ বলতে হবে যে, এই তিনটি বস্তু পরষ্পরের কাছাকাছি থাকে এবং সেহেতু খ-গোলক একবার পরিভ্রমণ করতে তাদের একই সময় লাগে। তাই কোনটা আগে কোনটা পরে তা নির্ধারণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এ পর্যায়ে তাই টলেমিকে অনুমান ও বিশ্বাসের আশ্রয় নিতে হয়।
সূর্য যেহেতু সবচেয়ে প্রভাবশালী সেহেতু পূর্বতন জ্যোতির্বিদদের মতামতকে সম্মান করে টলেমিও সূর্যকে ঠিক মাঝখানে রাখার সিদ্ধান্ত নেন, যাতে তার উপরে তিনটি (মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি) এবং নিচে তিনটি (বুধ, শুক্র, চাঁদ) গ্রহ থাকে। এখন বুধ ও শুক্রের মধ্যে কোনটা আগে কোনটা পরে হবে সেটা টলেমি নিছক অনুমানের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করেছিলেন। সবশেষে তাই তার মডেলে আকাশের বস্তুগুলোর ক্রম দাঁড়ায় এমন:
চাঁদ — বুধ — শুক্র — সূর্য — মঙ্গল — বৃহস্পতি — শনি — স্থির তারাদের গোলক
আহ্নিক গতি
১. প্রতিদিন সূর্য পূর্বে উদিত হয়ে পশ্চিমে অস্ত যায়
২. প্রতি রাতে তারাদের গোলকটা পূর্বে উদিত হয়ে পশ্চিমে অস্ত যায়
৩. ভোর এবং সন্ধ্যায় শুক্র এবং বুধ গ্রহকে দেখা যায়। অর্থাৎ তারা সূর্যের খুব কাছাকাছি থাকে।
৪. অন্য তিনটা গ্রহও রাতে পৃথিবীর সাপেক্ষে পূর্ব থেকে পশ্চিমে যায়
সমগ্র মহাবিশ্বের এই পশ্চিমমুখী ধাবমানতার একটা মর্মভেদী ব্যাখ্যা দরকার ছিল। আজ আমরা জানি যে পৃথিবী নিজ অক্ষের সাপেক্ষে পূর্বদিকে ঘুরছে বলেই মহাকাশের সবকিছুকে আমরা পশ্চিমে যেতে দেখি। আসলে মহাকাশের এসব বস্তুনিচয়ের কোন পরম আহ্নিক বেগ নেই, এটা আপাত গতি, আমাদের দৃষ্টির সীমাবদ্ধতা। কিন্তু টলেমির যুগে মানুষের পৃথিবী ঘুরছে- এটা ভাবতে খুব কষ্ট হতো। কারণ তা আমাদের সকল উপস্থিত বুদ্ধির বিপরীতে যায়। উপস্থিত বুদ্ধিকে জয় না করে তাই টলেমির আগেই এরিস্টটল এবং প্লেটো একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে ফেলেছিলেন- খ-গোলক অর্থাৎ যে গোলকে সকল তারা প্রোথিত সেই গোলকটা প্রতিদিন আসলেই পূর্ব থেকে পশ্চিমে ঘুরে। তারা বলেছিলেন সূর্য এবং সবগুলো গ্রহও একেকটা গোলকে প্রোথিত যে গোলকগুলো আবার খ-গোলকের সাথে কোন না কোনভাবে যুক্ত। তাই খ-গোলক তার দৈনিক ভ্রমণের সময় বাকি গোলকগুলোকেও সাথে করে নিয়ে যায়। এমনকি এক সময় এটাও মনে করা হতো যে খ-গোলকের বাইরে প্রাইম মুভার অর্থাৎ সর্বশক্তিমানের গোলক আছে যেখানে বসে তিনি সবগুলো গোলককে নিয়মমাফিক ঘুরিয়ে চলেছেন।
বার্ষিক গতি
তারকা ছাড়া অন্য সব জ্যোতিষ্কের আবার বার্ষিক গতিও আছে। অবশ্যই বার্ষিক গতিটা অবিচ্ছিন্নভাবে দেখা সম্ভব না। প্রতিদিন কোন একটা জ্যোতিষ্ককে আকাশের কোন জায়গায় দেখা যাচ্ছে সেটা যদি কোন পটভূমির সাপেক্ষে একটা বিন্দু দিয়ে চিহ্নিত করে রাখা যায় তাহলে ৩৬৫ দিনে ৩৬৫ টা বিন্দু পাব, এভাবেই বার্ষিক গতিপথ পাওয়া যাবে। কিন্তু কথা হচ্ছে এই বিন্দুটা কিসের সাপেক্ষে আঁকব? উত্তর: তারকাদের সাপেক্ষে। আপাতদৃষ্টিতে তারাদের কোন বার্ষিক গতি নেই। প্রতি রাতে প্রতিটি তারা আকাশের একই বিন্দু থেকে আহ্নিক যাত্রা শুরু করে। এজন্যই প্রাচীনরা ভাবতো, তারাগুলো একটা গোলকে বসে আছে এবং গোলকটাই প্রতিদিন নিয়ম করে পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে।
তো তারাদের অবস্থান যেহেতু কখনও পরিবর্তিত হয় না সেহেতু যেসব জ্যোতিষ্ক বছরের একেক দিন একেক জায়গায় থাকে তাদের অবস্থানগুলো তারাদের সাপেক্ষে নির্ণয় করাটাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। প্রাচীনরা সত্যিকার অর্থেই তারাগুলোকে বাড়ির নম্বর হিসেবে ব্যবহার করতো। একটা শহরের কথা ভাবা যাক, শহরের একটাই রাস্তা, রাস্তার দুই ধারে বাড়ি, প্রতিটা বাড়ির নম্বর আছে। রাস্তা দিয়ে চলমান কোন গাড়ি কখন কোন জায়গায় আছে সেটা বোঝানোর একমাত্র উপায় বাড়ির নম্বর বলা। বলতে পারি, দুপুড় ১২ টায় গাড়িটা ৩২ নম্বর বাড়ির কাছে ছিল, এখন আছে ১০৮ নম্বর বাড়ির কাছে। আকাশের ব্যাপারটাও তাই, আকাশটা এক মফস্বল, একটা রাস্তাই তার প্রাণকেন্দ্র। একটু পরিষ্কার করে বলি।
আকাশের সব জায়গায় তারা দেখা গেলেও, সূর্য, চাঁদ এবং গ্রহগুলোকে কিন্তু সব তারার কাছ দিয়ে যেতে দেখা যায় না। এদের বার্ষিক গতি তারাদের শহরে একটামাত্র রাস্তা অনুসরণ করে। এই রাস্তা বরাবর কোনদিকে যায় চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ? যেহেতু তারাদের শহরের কথা বলছি সেহেতু দিকটাও পৃথিবীর বদলে তারাদের সাপেক্ষে কল্পনা করা উচিত। আমরা যদি উত্তর দিকে মাথা দিয়ে মাটির উপর উপুড় হয়ে শুই তাহলে পা দক্ষিণ, বাম হাত পশ্চিম ও ডান হাত দক্ষিণ দিক নির্দেশ করবে। এবার যদি ঘুরে আকাশের দিকে মুখ করে অর্থাৎ চিৎ হয়ে শুই তাহলে কিন্তু পুরো ব্যাপারটা উল্টে যাবে- মাথা উত্তর, ও পা দক্ষিণ দিক নির্দেশ করলেও এবার বাম হাত পূর্ব এবং ডান হাত পশ্চিম দিক নির্দেশ করবে। সুতরাং পৃথিবীর মানচিত্রের সাপেক্ষে কোনকিছুর গতি যদি পূর্ব থেকে পশ্চিমে হয়, আকাশের মানচিত্রের সাপেক্ষে অর্থাৎ আকাশপটে তার গতি হবে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে।
জ্যোতিষ্কগুলো ‘সাধারণত’ তারাদের সাপেক্ষে বছর জুড়ে পশ্চিম থেকে পূর্বে যায়। এজন্যই পশ্চিম-পূর্ব গতিকে বলা হয় prograde মোশন বা প্রগতি। মনে রাখা উচিত আমরা কিন্তু এখানে শুধুমাত্র বার্ষিক গতি নিয়ে কথা বলছি। তো সূর্যের প্রগতি তারাদের শহরে একটা নির্দিষ্ট রাস্তায় ঘটে। এই রাস্তা বরাবর সূর্য পশ্চিম থেকে পূর্বে যায়। রাস্তাটার নাম রাশিচক্র। আসলে এটা কিছু তারার সমষ্টি। বছর জুড়ে সূর্য যেসব তারার কাছ দিয়ে অতিক্রম করে সেগুলোই রাশিচক্র গঠন করেছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, সূর্য যখন থাকে তখন তো তারা দেখা যায় না। তাহলে সূর্য কোনদিন কোন তারার কাছে উদিত হচ্ছে সেটা আমরা বুঝি কি করে? ব্যাপারটা খুব কঠিন নয়। ভোর হওয়ার ঠিক আগে পৃথিবীর সাপেক্ষে একেবারে পূর্ব দিকে কোথায় কোন তারা আছে সেগুলো আমরা টুকে রাখতে পারি। তারপর ভোরে সূর্য সেই টুকে রাখা তারাগুলোর মধ্যে কোনটার কাছে আছে সেটা জানা যায়। এভাবেই আমরা আবিষ্কার করে ফেলি রাশিচক্র। এই এনিমেশনে রাশিচক্রে সূর্যের বার্ষিক গতি দেখা যাবে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে সবগুলো গ্রহ এবং চাঁদও এই রাশিচক্রের রাস্তা দিয়েই চলে। কারণটা আমরা আজকে জানি- সৌরজগতের সব গ্রহ এবং উপগ্রহ একটি তলে অবস্থিত। সুতরাং আকাশে জ্যোতিষ্কদের বার্ষিক গতি বোঝার জন্য সবগুলো তারার পুঙ্খানুপুঙ্খ অবস্থান না জানলেও চলে, রাশিচক্রের তারাগুলোর অবস্থান মুখস্থ রাখাই যথেষ্ট। তো রাশিচক্রের রাস্তায় সূর্য এবং চাঁদ সবসময় পশ্চিম থেকে পূর্বে যায়, অর্থাৎ তারা সর্বদা প্রগতিশীল। আর স্থির তারাগুলো তো কখনোই অবস্থান পরিবর্তন করে না, তাদের শুধু আহ্নিক গতি আছে। এর সাথে যোগ হয়েছিল প্রাচীন গ্রিকদের নৈসর্গ্যিকতা এবং নিয়মতান্ত্রিকতার প্রতি ভালবাসা। প্লেটো স্বর্গকে অপরিবর্তনীয় এবং নিয়মতান্ত্রিক হিসাবে আখ্যা দেন। তার শিষ্য এরিস্টটল প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেন যে, মহাবিশ্বের একমাত্র গতি হচ্ছে সুষম বৃত্তীয় গতি। অর্থাৎ, তারা পর্যবেক্ষণকে তোয়াক্কা না করে আগেই স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছে গিয়েছিলেন যে, সব জ্যোতিষ্ক পৃথিবীকে কেন্দ্র করে, বৃত্তীয় কক্ষপথে, সমবেগে চলাচল করে।
ভূকেন্দ্রিক মডেলে গ্রহদের বার্ষিক গতি
সুষম বৃত্তীয় গতির ব্যাখ্যাকে বাঁধাগ্রস্ত করে গ্রহগুলোর গতি। গ্রহদের সাধারণ গতি পশ্চিম থেকে পূর্বে। কিন্তু মাঝেমাঝে আবার গ্রহগুলো থেমে গিয়ে উল্টো অর্থাৎ পূর্ব থেকে পশ্চিমে যেতে শুরু করে। এই বিপরীত গতিকে বলা হয় retrograde মোশন বা প্রতীপগতি। কিছুদিন পর আবার তারা পূর্বের মত প্রগতিশীল হয়ে যায়। প্রতীপগতির সময় আবার গ্রহদের বেগ বেড়ে যায় এবং তাদেরকে অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল দেখা যায়। গ্রহের মধ্যে আবার বুধ এবং শুক্রের গতি আলাদা তাই এগুলো আলাদাভাবে আলোচনা করা যাক।
বুধ এবং শুক্র গ্রহের বার্ষিক গতি
বুধ এবং শুক্রকে সব সময় সূর্যোদয়ের আগে আগে বা সূর্যাস্তের পরে পরে দেখা যায়। অর্থাৎ এই গ্রহ দুটো সূর্যের খুব কাছাকাছি থাকে।
উপরের ছবির মতো, পৃথিবীর পৃষ্ঠে দাঁড়িয়ে সূর্যের দিকে এক হাত এবং গ্রহের দিকে এক হাত মেলে ধরলে হাত দুটোর মধ্যে যে কোণ তৈরি হবে সেটাকে বলা হয় ঐ সময়ে গ্রহটির প্রতান। প্রতানের মান বছরের একেক দিনে একেক রকমের হয়।
যেমন উপরের ছবিতে বছরের একটি মাসের বিভিন্ন দিনে আকাশে বুধ গ্রহের অবস্থান কেমন হয় তা দেখানো হয়েছে। দেখা যাচ্ছে এক মাসে বুধ গ্রহের গতিপথ একটা বৃত্তচাপ তৈরি করেছে। এই বৃত্তচাপের সবচেয়ে শীর্ষবিন্দুটি হচ্ছে বুধ গ্রহের বৃহত্তম প্রতানের সময় অর্থাৎ তখন বুধের সাথে সূর্যের কোণ সবচেয়ে বেশি হয়।
শুক্র গ্রহের প্রতানের মান বুধের চেয়ে বেশি যে কারণে তা পর্যবেক্ষণ করা সহজতর। উপরের ছবিতে শুক্র গ্রহের ৬ মাসের গতিপথ দেখানো হয়েছে। এমন ছবি তৈরি করা খুব কঠিন না। বিভিন্ন দিনে একই জায়গা থেকে একই সময়ে আকাশের এই অংশটার ছবি তুলে তারপর সবগুলো জোড়া লাগালেই এমন ছবি তৈরি হয়ে যাবে। শুক্র গ্রহের সর্বোচ্চ প্রতান ৪৮ ডিগ্রি আর বুধ গ্রহের মাত্র ২৮ ডিগ্রি।
বুধ বা শুক্রের প্রতান ০ ডিগ্রি হওয়ার অর্থ হচ্ছে পৃথিবী, গ্রহ এবং সূর্য একই রেখা বরাবর আছে। এই ঘটনাকে বলা হয় গ্রহসংযোগ। সূর্য যদি গ্রহের সামনে থাকে তাহলে বলা হয় বহিঃসংযোগ আর গ্রহ যদি সূর্যের সামনে থাকে তাহলে বলা হয় অন্তঃসংযোগ। নিচের ছবিতে ব্যাপারটা আরও ভাল বোঝা যাবে।
যদিও ছবিটা সৌরকেন্দ্রিক মডেলের সাপেক্ষে আঁকা তারপরও প্রতান এবং গ্রহসংযোগ বোঝার ক্ষেত্রে এটা কার্যকরী।
মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি গ্রহের বার্ষিক গতি
এই তিনটি গ্রহের প্রতান ০ থেকে ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত যে কোনটা হতে পারে। যখন ০ ডিগ্রি হয় তখন আগের মতোই ঘটনাটাকে গ্রহসংযোগ বলা হয়। কিন্তু লক্ষ্যণীয় এই গ্রহ তিনটার ক্ষেত্রে কখনোই অন্তসংযোগ সম্ভব না। আবার এদের প্রতান যখন ১৮০ ডিগ্রি হয় তখন ঘটনাটাকে বলা হয় প্রতিযোগ। বুধ এবং শুক্র গ্রহের কিন্তু আবার প্রতিযোগ ঘটা সম্ভব না। প্রতিযোগের অর্থ হচ্ছে গ্রহ এবং সূর্যের মাঝে পৃথিবী থাকা। এমন ক্ষেত্রে সূর্য অস্ত যাওয়ার পর একেবারে অন্য প্রান্তে গ্রহটি উদিত হয়। অর্থাৎ পৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্য পশ্চিমে অস্ত যাওয়ার পরপরই একেবারে পূর্ব দিগন্তে গ্রহটা উদিত হয়।
গ্রহগুলোর প্রতীপ গতি
এই এনিমেশন থেকে প্রতীপ গতির ব্যাপারটা ভাল বোঝা যাবে। এটাও সৌরকেন্দ্রিক মডেলের ভিত্তিতে বানানো। কিন্তু সৌরজগতের দিকে না তাকিয়ে আমরা যদি শুধু তারাদের গোলকের দিকে তাকাই তাহলে আকাশে গ্রহের গতি কেমন দেখায় সেটা বুঝতে পারব। আমরা সবকিছুকেই খ-গোলক অর্থাৎ আকাশগোলকে দেখতে পাই। এখানে রাশিচক্রের মধ্য দিয়ে সূর্যের সুষম গতি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু রাশিচক্রে শুক্র এবং মঙ্গল গ্রহের গতি সুষম নয়। এই দুটো গ্রহের গতিই এই এনিমেশনে দেখানো হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে গ্রহ দুটো যখন প্রতিপ গতিতে থাকে তখনই আকাশগোলকে তাদের বেগ সবচেয়ে বেশি থাকে এবং তাদেরকে সবচেয়ে উজ্জ্বল দেখায়। কারণ শুক্র ও বুধ গ্রহের ক্ষেত্রে প্রতীপ গতির সময় অন্তঃসংযোগ থাকে, আর বাকি তিন গ্রহের বেলায় প্রতীপ গতির সময় প্রতিযোগ থাকে।
সুতরাং প্রাচীন গ্রিকদেরকে যে বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করতে হয়েছিল তা হচ্ছে:
১. সূর্য সবসময় প্রগতিশীল, স্থির তারকাদের গোলকের রাস্তা অর্থাৎ রাশিচক্রের মধ্য দিয়ে সে বছর জুড়ে পশ্চিম থেকে পূর্বে যায়
২. চাঁদ মাসে একবার পৃথবীকে আবর্তন করে, সেও সর্বদা প্রগতিশীল
৩. বুধ এবং শুক্র গ্রহকে সব সময় ভোর বা সন্ধ্যায় দেখা যায় অর্থাৎ তারা সূর্যের খুব কাছাকাছি থাকে
৪. গ্রহগুলো (৫টি) সাধারণত রাশিচক্রের মধ্য দিয়ে পশ্চিম থেকে পূবে যায় কিন্তু মাঝেমধ্যে তারা থেমে গিয়ে উল্টো দিকে যেতে শুরু করে যাকে বলে প্রতীপগতি
৫. প্রতীপ গতির সময় গ্রহদের উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়
৬. প্রতীপ গতির সময় গ্রহগুলোর বেগ প্রগতিকালীন বেগের চেয়ে বেশি
৭. প্রতীপ গতির সময় বুধ ও শুক্র গ্রহের অন্তসংযোগ আর বাকি তিনটি গ্রহের প্রতিযোগ থাকে
এই সমস্যাগুলোর সমাধান গ্রিকরা কিভাবে করেছে তাই একে একে দেখা যাক। এই সমাধানগুলোকেই টলেমি তার আলমাজেস্ট বইয়ে সুসংবদ্ধ রূপ দিয়েছিলেন।
প্রথমত,
সূর্য এবং চাঁদের গতি সুষম হলেও তারা যে বৃত্তে আবর্তন করে পৃথিবীকে যদি সেই বৃত্তের কেন্দ্রে বসানো হয় তাহলে ঝামেলা বেঁধে যায়- চন্দ্র সূর্যের গতি ব্যাখ্যা করা যায় না। প্রাচীন গ্রিকদের মধ্যে এপোলোনিয়াস প্রথমবারের মতো সুষম বৃত্তীয় গতি রক্ষার জন্য পৃথিবীকে মহাবিশ্বের কেন্দ্র থেকে হটিয়ে দিলেন। তিনি বললেন চাঁদ এবং সূর্য একটি কাল্পনিক বিন্দুকে আবর্তন করে যার নাম eccentric বা উৎকেন্দ্র। বৃত্তীয় কক্ষপথের কেন্দ্রের নাম কিন্তু তারা দিলেন eccentric গ্রিক ভাষায় যার অর্থ কেন্দ্রের বাইরে। তার মানে পৃথিবীকেই তারা মনেপ্রাণে কেন্দ্র ভাবতে থাকলেন, আর বললেন সূর্য কেন্দ্রের বাইরের একটি বিন্দুকে কেন্দ্র করে আবর্তন করে- বড়ই আজব। উৎকেন্দ্রকে কেন্দ্র করে থাকা কক্ষপথটাকে বলা হল ডিফারেন্ট (deferent)। যাহোক এভাবে চন্দ্র-সূর্যের গতির মোটামোটি সঠিক ব্যাখ্যা দেয়া গেল।
সূর্যের বার্ষিক গতি ব্যাখ্যার জন্য বলা হলো, সূর্য যে গোলকে প্রোথিত সেই গোলক দিনে প্রায় ১ ডিগ্রি করে পূর্বদিকে যায়। তাহলে বছরে প্রায় ৩৬০ ডিগ্রি যাত্রা পূর্ণ হয়। আর চাঁদের মাসিক গতির ব্যাখ্যা দেয়া হলো: চাঁদের গোলক দিনে প্রায় ১২ ডিগ্রি করে পূর্বদিকে যায়। সূর্যের গতির প্রথম নির্ভরযোগ্য মডেল দাড় করান এপোলোনিয়াস এবং হিপ্পার্কাস। তবে হিপ্পার্কাসের মডেলই টলেমির রচনার মাধ্যমে আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। তার সৌর মডেল নিচের ছবিতে দেখানো হয়েছে।
দেখা যাচ্ছে বৃত্তের কেন্দ্র থেকে পৃথিবী একটু দূরে অবস্থিত। এই দূরত্বটুকু হিপ্পার্কাসের মতে বৃত্তটির ব্যাসার্ধ্যের ১/২৪, পৃথিবীর সাপেক্ষে বৃত্তের একেক চতুর্ভাগ অতিক্রম করতে সূর্যের একেক সময় লাগে। এ কারণেই একেক ঋতুর দৈর্ঘ্য একেক রকম হয়। বসন্ত বিষুব থেকে কর্কটক্রান্তি পর্যন্ত যেতে সূর্য সবচেয়ে বেশি সময় নেয়।
এরপর,
সবচেয়ে বড় সমস্যা প্রতীপ গতি। সুষম বৃত্তীয় গতির উপর সবচেয়ে বড় হুমকি এই প্রতীপ গতি। গ্রিকদের কাছে এটা এক মহা বিশৃঙ্খলা। শৃঙ্খলা দিয়ে বিশৃঙ্খলা সমাধানের একটা চেষ্টা স্বয়ং এরিস্টটলই করেছিলেন। তবে এপোলোনিয়াসের দেখানো পথে প্রথম প্রতীপ গতির একটা মডেল পূর্ণ করেন হিপ্পার্কাস। মডেলটা খুবই চাতুর্যপূর্ণ। তিনি যেটা করলেন, ডিফারেন্টের উপর আরেকটা ছোট বৃত্ত যোগ করলেন যার নাম হল এপিসাইকেল। এপিসাইকেলের কেন্দ্র ডিফারেন্টের উপর, এবং ডিফারেন্ট ধরেই এপিসাইকেলের কেন্দ্র আবর্তন করে। কিন্তু গ্রহটা আবার এপিসাইকেলের উপর আবর্তন করে। মোটকথা, গ্রহটা এপিসাইকেলের উপর আবর্তন করছে যে এপিসাইকেলের কেন্দ্র আবার ডিফারেন্টের উপর আবর্তন করছে। ছবিটা এমন:
এই মডেল যে আসলেই মোটামোটিভাবে প্রতীপ গতির সমস্যা সমাধান করতে পারে তার প্রমাণ আছে নিচের ছবিতে। এখানে সাদা রেখাটি দিয়ে আমাদের দৃষ্টিরেখা দেখানো হয়েছে। গ্রহটিকে আমরা এই রেখার শেষ প্রান্তে স্থির তারাদের গোলকেই দেখতে পাই, সে প্রকৃতপক্ষে যেখানে আছে সেখানে কিন্তু নয়। কারণ আমাদের দেখতে একটা প্রসঙ্গ কাঠামো লাগে, আর আমাদের চোখ এতো দূরের বস্তুর মধ্যে কোনটা কাছে আর কোনটা দূরে তা পার্থক্য করতে পারে না। তো দেখা যাচ্ছে গ্রহটি এপিসাইকেলে ঘুরতে ঘুরতে যখন পৃথিবীর দিকে অর্থাৎ ডিফারেন্টের ভেতর ঢুকে যায় তখনই প্রতীপ গতি দেখা যায়। এভাবে প্রতীপ গতির সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি উজ্জ্বলতার সমস্যাও সমাধা হয়ে গেল। কারণ বোঝাই যাচ্ছে প্রতীপ গতির সময় পৃথিবী থেকে গ্রহটির দূরত্ব কমে যায় যে কারণে তাকে বেশি উজ্জ্বল দেখায়। এভাবেই দুটি উৎকেন্দ্রিক সুষম বৃত্তীয় গতির মাধ্যমে স্বর্গের মান রক্ষা করেছিল গ্রিকরা।
এই মডেল তিন শতাব্দী ধরে চলতে থাকে। কিন্তু খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে আলেকজান্দ্রিয়ার টলেমি বুঝতে পারেন, এই মডেল দিয়েও গ্রহগুলোর গতি পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যায় না। প্রথমত, একেক প্রতীপ গতির স্থায়িত্বকাল একেক রকম, তার উপর প্রতীপ গতির সময় গ্রহের বেগও বেড়ে যায়। পর্যবেক্ষণ যত সূক্ষ্ণ হয় ততোই পুরনো মডেলের খুঁত বেরিয়ে আসতে থাকে। আমরা আগেই দেখেছি বুধ-শুক্রের ক্ষেত্রে অন্তঃসংযোগের সময় প্রতীপ গতি দেখা যায়, আর বাকি তিনটা গ্রহের ক্ষেত্রে প্রতিযোগের সময় প্রতীপ গতি হয়। উল্লেখ্য, অন্তসংযোগ এবং প্রতিযোগের সময়ই কিন্তু পৃথিবী থেকে গ্রহের দূরত্ব সবচেয়ে কম থাকে, যে কারণে গ্রহকে বেশি উজ্জ্বল দেখায়। টলেমি বললেন, পৃথিবী থেকে যখন গ্রহের দূরত্ব সবচেয়ে কম তখন গ্রহের বেগও সর্বোচ্চ হতে হবে। এটা করার জন্য তিনি একটা নতুন কাল্পনিক বিন্দু নিয়ে আসলেন যার নাম ইকুয়েন্ট (equant)। আগেই দেখেছি উৎকেন্দ্রের এক পাশে পৃথিবী। টলেমি উৎকেন্দ্রের বিপরীত পাশে ইকুয়েন্ট স্থাপন করলেন। উৎকেন্দ্র থেকে পৃথিবী ও ইকুয়েন্টের দূরত্ব সমান। বেগের সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি বললেন, উৎকেন্দ্রের সাপেক্ষে গ্রহের কৌণিক বেগ সুষম নয়, বরং ইকুয়েন্টের সাপেক্ষে গ্রহের বেগ সুষম। ছবিটা এরকম:
এর মাধ্যমে কিন্তু সুষম বৃত্তীয় গতির ধারণাও ধ্বংস হয়ে গেল। দেখা গেল বৃত্তের কেন্দ্রের সাপেক্ষে গ্রহের গতি সুষম নয়। কিন্তু মান রক্ষার জন্য টলেমি একটা কাল্পনিক বিন্দু আনলেন, অন্তত একটা বিন্দু তো আছে যার সাপেক্ষে গতিটা সুষম, তা বিন্দুটা যতোই কাল্পনিক হোক না কেন। ইকুয়েন্টে দাঁড়ানো একজন পর্যবেক্ষক আকাশপটে গ্রহের গতিবেগ সব সময় সমান দেখতে পাবেন। কিন্তু উৎকেন্দ্র বা পৃথিবী কোন জায়গা থেকেই বেগটা সুষম হবে না। বরং ইকুয়েন্টে সুষম হলেই কেবল গ্রহটা পৃথিবীর কাছে আসার সময় সবচেয়ে বেশি বেগে চলবে এবং পৃথিবী থেকে দূরে গেলে তার বেগও কমে যাবে। এই পাতার দ্বিতীয় এনিমেশনে ব্যাপারটা বেশ ভালভাবে বোঝা সম্ভব।
মনে রাখতে হবে আকাশে কোন বস্তুর কৌণিক গতিবেগটাই আমরা পর্যবেক্ষণ করি। এখন বস্তুটার রৈখিক বেগ যদি সুষম অর্থাৎ সব সময় সমানও হয় তারপরও তার কৌণিক বেগ ভিন্ন হবে যদি পর্যবেক্ষক থেকে তার দূরত্ব কমানো বা বাড়ানো হয়। যেমন, এরোপ্লেনের চেয়ে রাস্তায় চলমান একটা রিকশার বেগ আমাদের কাছে বেশি মনে হয়, কারণ রিকশাটা আমাদের অনেক কাছে। সুতরাং দূরত্ব কমলে কৌণিক বেগ বাড়ে। কোন গ্রহ যখন পৃথিবীর কাছে তখন তা ইকুয়েন্ট থেকে সবচেয়ে বেশি দূরে। আমরা জানি পৃথিবীর কাছে আসলে গ্রহের গতি বেড়ে যায়। সুতরাং ইকুয়েন্ট থেকে অনেক দূরে হওয়ার কারণে ইকুয়েন্টে দাড়ানো একজন পর্যবেক্ষক যে গ্রহটির গতি কম দেখতো তা গ্রহটির প্রকৃত বেগ বেড়ে যাওয়ার কারণে আর হবে না। আবার ইকুয়েন্টের কাছে আসার সময় পর্যবেক্ষকের বেশি গতি দেখার কথা, কিন্তু পৃথিবী থেকে দূরে থাকার কারণে গ্রহটির প্রকৃত বেগ কমে যাওয়ায় পর্যবেক্ষক আবারও আগের মতো বেগ পর্যবেক্ষণ করেন।
টলেমির সামগ্রিক মডেল
তো পর্যবেক্ষণের এই ব্যাখ্যাগুলোকে একসাথে করেই টলেমি গোটা মহাবিশ্বের একটা সামগ্রিক মডেল তৈরি করেন। তখন অবশ্যই মহাবিশ্ব সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক স্থূল ছিল। যে মডেলকে টলেমির মহাবিশ্বের মডেল মনে হয়েছিল সেটা আসলে আমাদের বর্তমান জ্ঞানের বিচারে কেবল সৌরজগতের মডেল, তাও আবার ভুল মডেল। তো গোটা মহাবিশ্ব তো দূরের কথা কেবল সৌরজগতের তাও আবার ভুল একটা মডেল হলেও, এর গাণিতিক চাতুর্য দেখে মুগ্ধ হতে হয়। এ কারণেই আরও সূক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ আসার আগে এগুলোকে কেউ প্রশ্নবিদ্ধ করতে সাহস পায়নি। টলেমির সামগ্রিক মডেল নিচের ছবিতে ফুটে উঠেছে। অবশ্য এই ছবিতে একসেন্ট্রিক এবং ইকুয়েন্ট দেখানো সম্ভব হয়নি। কেন্দ্র হিসেবে পৃথিবীকেই দেখানো হয়েছে।
১. ধারাবাহিকতা এমন: পৃথিবী, চাঁদ, বুধ, শুক্র, সূর্য, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, খ-গোলক
২. পৃথিবী ও সূর্যের কেন্দ্র এবং বুধ ও শুক্র গ্রহের ডিফারেন্টের কেন্দ্র একই সরলরেখার উপর অবস্থিত এবং তারা এই রেখা থেকে কখনোই বিচ্যুত হয় না
৩. পৃথিবী-সূর্য সংযোগকারী রেখা এবং মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি গ্রহের সাথে যার যার এপিসাইকেলের কেন্দ্রের সংযোগকারী রেখাগুলো পরষ্পরের সমান্তরাল
৪. একেক গ্রহের এপিসাইকেলের ব্যাস একেক রকম। প্রচুর ফ্রি প্যারামিটার
1 ping
টলেমির ভূকেন্দ্রিক মডেল | সুবর্ণরেখা
নভেম্বর 2, 2012 at 8:14 পূর্বাহ্ন (UTC -5) Link to this comment
[…] http://www.shikkhok.com/2012/10/astronomy-101-01-02/ Share this:FacebookTwitterGoogle +1Like this:LikeOne blogger likes this. […]