«

»

জানু. 20

জীব জীবন পরিবেশ ৪: জীবের গঠন, বৈচিত্র এবং পরিবেশ

[কোর্সের মূল পাতা] [নিবন্ধন ফর্ম][পূর্বের লেকচার]

 

আজকে পড়বো:

জীবের এবং জৈব পরিবেশের গঠন, পরিবেশে জীবের বেঁচে থাকা এসব নিয়ে।

 

[আজকের লেকচারে কোন ভিডিও নেই]

 

সকল জীবই বেঁচে থাকার জন্য তার পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়, পরিবেশের সঙ্গে একধরনের সম্পর্কে আবদ্ধ হয়। এই পরিবেশের মধ্যে থাকতে পারে – মাটি, পানি, বায়ু, তাপমাত্রা ইত্যাদি। আবার পরিবেশের অন্তর্গত হতে পারে অন্য জীবেরাও যাদের সাথে আমরা মিলেমিশে থাকি। কিন্তু, এরকম অনেককিছু মিলে বেঁচে থাকলেও একটি জীবকে আসলে একটি একক জীবিত বস্তু বলা যায়। যদিও একটি জীবের জন্য অন্য জীবের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে তো অন্য জীব নাহলে কিছু জীব বাঁচতেই পারেনা। যেমন, বাঘ যদি অন্য প্রাণী না খেতে পারে তবে সে বাঁচতেই পারবেনা। আবার আরেকধরনের সম্পর্ক আছে- সিমবায়োসিস বা অনোন্যজীবিতা এবং কম্পিটিশন বা প্রতিযোগিতা। আমরা এখন এগুলি নিয়ে অল্প করে পড়ে নেব।

 

অনোন্যজীবিতা

অনোন্যজীবিতা হল ভিন্ন প্রজাতির জীবদের মধ্যে এমন একটি সম্পর্ক যা থেকে অন্ততঃ একটি জীব উপকৃত হয়। অন্য জীবটিও উপকৃত বা অপকৃত হতে পারে, অথবা তার কোনটাই নাও হতে পারে। যেমন গরু এবং গরুর ত্বক থেকে রক্ত খাওয়া পোকা, আবার পাখি গরুর পিঠে বসে সেই পোকা খেতে পারে (নিচের ছবিটি দেখো)। এখানে ৩টি জীবের মধ্যে একধরনের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। পোকা রক্ত খায় বলে গরুটির ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু পাখি যখন পোকা খাচ্ছে তখন গরুটি উপকৃত হচ্ছে, তাই সে পাখিকে নিজের দেহে উপরে বসতে দিচ্ছে। আবার পাখিটিও খাবার হিসেবে পোকা পেয়ে উপকৃত হচ্ছে। আবার পোকা গরুটির রক্ত খেয়ে উপকৃত হচ্ছে।

অনোন্যজীবিতা: গরুর পিঠে পাখি গরুর গা থেকে পোকা খাচ্ছে।

 

প্রতিযোগিতা

প্রতিযোগিতা হল দুইটি জীবের মধ্যে এমন সম্পর্ক যেখানে দুইটি জীবই কোন একটি রসদ এর উপর নির্ভর করে। রসদটি হতে পারে খাবার, পানি বা এমনকিছু যেটা দুজনেরই দরকার হয়। প্রতিযোগিতা তখনই তৈরি হয় যখন জীবগুলি একই রসদ একই জায়গা থেকে একই সময়ে পাওয়ার চেষ্টা করে। দুইটি জীব স্বাভাবিকভাবেই সংঘর্ষের মুখোমুখি হতে পারে, এবং তখন যেই জীবটি ভালভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছে সে এই প্রতিযোগিতায় জিতে যেতে পারে। যেমন, একটি বনে বাঘ এবং শিয়াল দুইজনই হরিণের মাংসের উপর নিভর্রশীল। কিন্তু বাঘ অনেক শক্তিশালী এবং দ্রুত দৌড়ায়। তাই সে হয়তো কোন হরিণকে শিয়ালের চেয়ে ভাল শিকার করতে পারবে। তাই শিয়াল হয়তো হরিণ শিকার না করে অপেক্ষাকৃত ছোট প্রাণীর দিকে মনোযোগ দেবে।

 

জীবের গঠনের পর্যায়

জৈবপৃথিবী কয়েকটি পর্যায়ে গঠিত হয়েছে। যেমন, প্রায় প্রতিটি বহুকোষী জীবকেই নিচের পর্যায়গুলোতে বিভক্ত করা যায়:

  • কোষ (cell): জীবের গাঠনিক একক
  • কলা (tissue): একইধরনের কোষের গুচ্ছ
  • অঙ্গ (organ): একটি গঠন যেটা একধরনের বা কয়েকধরনের কলা দিয়ে গঠিত
  • অঙ্গতন্ত্র (organ system): কয়েকটি অঙ্গ যখন একসঙ্গে একটি বিশেষ ধরনের কাজ করে
  • জীব (organism): একটি একক জীব কয়েকটি অঙ্গতন্ত্র দিয়ে গঠিত হতে পারে

বহুকোষী জীবের গঠনের পর্যায়: কোষ > কলা > অঙ্গ > অঙ্গতন্ত্র > জীব

 

জৈব পরিবেশের গঠনের পর্যায়

  • পপুলেশান (population): একই প্রজাতির কিছু জীব যখন একই পরিবেশে বা একই জায়গায় বসবাস করে তখন তাকে বলে পপুলেশন। যেমন, একটি পুকুরে যখন অনেকগুলি কইমাছ যদি পানিতে একজায়গায় থাকে বা একসাথে ঘোরাঘুরি করে তবে তাকে বলবো কই মাছের পপুলেশান।
  • কম্যুনিটি (community): অনেকগুলি পপুলেশান যখন একই এলাকায় বসবাস করে তখন তাকে বলবো কম্যুনিটি। যেমন, একটি পুকুরে যদি কইমাছ, রুইমাছ, কাতল মাছ, পুঁটি মাছ ইত্যাদি মাছ একসাথে বসবাস করে তবে পুকুরটিকে বলবো মাছের কম্যুনিটি।
  • ইকোসিস্টেম (ecosystem): একটি এলাকার সবধরনের জীব এবং জড় পরিবেশ মিলিয়ে একটি ইকোসিস্টেম গঠিত। জড় পরিবেশের মধ্যে থাকে পানি, সূর্যের আলো ইত্যাদি।
  • বায়োম (biome): একইধরনের অনেকগুলি ইকোসিস্টেম একইধরনের সাধারন ভৌত পরিবেশে একসাথে মিলে গঠিত হয় বায়োম। যেমন পৃথিবীর উষ্ঞ অঞ্চলগুলি (অক্ষরেখার কাছাকাছি) মিলে একটি বায়োম তৈরি হতে পারে।
  • বায়োস্ফিয়ার (biosphere): বায়োস্ফিয়ার হল পৃথিবীর অংশ যেখানে প্রতিটি জীব বসবাস করে। এর মধ্যে রয়েছে মাটি, পানি এবং বাতাস, যার মধ্যে পৃথিবীর সকল ধরনের জীব খুঁজে পাওয়া যায়। বায়োস্ফিয়ার তৈরি হয় অনেকগুলি বায়োম মিলে।

 

নিচের ছবি থেকে ইংরেজী নামগুলি দিয়ে মিলিয়ে নাও: (একক জীবকে individual বলে)

জৈব পরিবেশের পর্যায়। একক জীব > পপুলেশান > কম্যুনিটি > ইকোসিস্টেম > বায়োম > বায়োস্ফিয়ার

 

জীবের বৈচিত্র

পৃথিবীতে জীব অনেক বিচিত্র, মানে অনেকধরনের। এই বৈচিত্রতাকে বলে জীববৈচিত্র (biodiversity)। জীববৈচিত্র মাপতে হয় জীবের প্রকারের সংখ্যা দিয়ে। যেমন, পৃথিবীতে বর্তমানে ১ কোটিরও বেশি ধরনের জীব বসবাস করে। তারা সাধারনত ৬টি রাজ্যে বিভক্ত:

জীবের ৬টি রাজ্য বা মন্ডল (kingdom): ১. আর্কিয়াব্যাকটেরিয়া, ২. ব্যাকটেরিয়া, ৩. প্রোটিস্ট বা এককোষী প্রাণী, ৪. ছত্রাক, ৫. উদ্ভিদ, ৬. প্রাণী

 

জীবের বিবর্তন

ভাবতে পারো এত এত ধরনের জীব কিভাবে পৃথিবীর বুকে আসলো। এদের কিছু বৈশিষ্ট্য জীব থেকে জীবে পুরোপুরি একইরকম আবার কিছু জীবে একদমই অন্যরকম। কিভাবে হল? হয়েছে কারন জীবের বৈচিত্রের কারন হল জীবের বিবর্তন। অন্তত: ৪ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে জীবের আবির্ভাব হয়েছিল। প্রথমে পৃথিবীর জীবগুলি ছিল খুব সরল, এককোষী। এর অনেক অনেক পরে প্রথম বহুকোষী জীবের উদ্ভব হয়। আর এর ফলেই পৃথিবীর জীববৈবিত্র দারুনভাবে বিকশিত হয়। নিচের ছবিতে দেখতে পাবে প্রথম জীব থেকে আজকের আধুনিক জীবের আবির্ভাবের একটি টাইমলাইন:

বিবর্তন: প্রথম জীব থেকে আমরা। অন্তত: বিলিয়ন বছর ধরে বিকশিত হতে হতে আজকের আধুনিক জীব তৈরি হয়েছে।

 

আমরা এখানের সবগুলি বিষয় নিয়েই আমাদের কোর্সের পরবর্তী লেকচারগুলোয় পড়বো।

 

Comments

comments

About the author

খান ওসমান

আমি টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের মলিকিউলার জেনেটিক্স এর একজন পিএইচডি ছাত্র। কাজ করছি ম্যালেরিয়া জীবাণুর একধরনের প্রোটিন নিয়ে। আমার কাজ মূলতঃ এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফির মাধ্যমে প্রোটিনের গঠন নির্ণয়, এর সঙ্গে ম্যালেরিয়া রোগের সম্পর্ক নির্ধারণ এবং ঔষধ তৈরিতে সহায়তা করা ইত্যাদি বিষয়ের উপর। স্নাতক এবং মাস্টাসর্ ডিগ্রী অজর্ন করেছি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুজীববিজ্ঞান নিয়ে। আমার বতর্মান ল্যাব এর ওয়েবসাইটে ঢু মেরে দেখতে পারেন এখানে: www.thesgc.org.